Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মিথ্যা নয় সত্য বলতে শিখি

Icon

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মিথ্যা নয় সত্য বলতে শিখি

কথায় কথায় মিথ্যা বলা আজকাল সমাজের একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ মিথ্যা বলে নিজেকে বাঁচাতে। কেউবা নিতে চায় ফায়দা। আবার এটা কারও স্বভাবে পরিণত হয়েছে। অথচ একটু চেষ্টা করলেই এ পাপ কর্মটি থেকে বেঁচে থাকা যায়।

কিন্তু সমাজের অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়টি অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে না। এই বদ অভ্যাসটি এমন এক ধরনের পাপ, যা মানুষকে অন্যান্য পাপ কাজে উৎসাহ জোগায়।

মিথ্যার পরিণতি : মানুষের নেক আমল ধ্বংসের জন্য এই একটি পাপই যথেষ্ট। তাই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর প্রিয় উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘তোমরা সত্যের অনুসরণ কর। কারণ সত্য মানুষকে ভালো কাজের দিকে নিয়ে যায়। আর ভালো কাজ মানুষকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়। যে মানুষ সত্য বলে আর সত্যের সন্ধানে থাকে, এমন ব্যক্তি একপর্যায়ে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।

আর মিথ্যা থেকে দূরে থাকে। কারণ মিথ্যা (মানুষকে) পাপাচারে লিপ্ত করে। আর পাপাচার (মানুষকে) জাহান্নামে নিয়ে যায়। এভাবে যে মিথ্যা বলে আর মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এক সময় এমন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে চরম মিথ্যুক বলে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬০৭)।

এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি : তাই প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত সত্যের অনুসরণ ও অনুকরণে নিজ চরিত্রকে কালিমামুক্ত করা। আর মিথ্যার কালো ছায়ায় নিজেকে আবৃত না করে সত্য বলার মধ্য দিয়ে নিজের সচ্চরিত্রকে বিকশিত করা। তাহলে জীবনটা সুন্দর হয়ে উঠবে। এজন্য নিজের কুপ্রবৃত্তির সঙ্গে জিহাদ করতে হবে। কারণ মিথ্যা বলা এমন এক ব্যাধি যাতে মানুষকে একবার পেয়ে বসলে এ থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন। তাই কথা, কাজ ও চিন্তা মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ না করা। সব পাপের উৎস এ মিথ্যা।

এ কারণে এর শাস্তিও অনেক ভয়াবহ। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের অন্তরে রয়েছে একটি রোগ, যে রোগ আল্লাহতায়ালা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তারা যে মিথ্যা বলে তার বিনিময়ে তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ১০)।

প্রকৃত অর্থে মিথ্যা ওরাই বলে যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। আর বিশ্বাস করলেও সেই বিশ্বাসের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। যদি অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করত তাহলে তাঁর আদেশ-নির্দেশকে শিরোধার্য মনে করে এটাকেও ইবাদত হিসাবে গণ্য করত। এ পাপ কর্ম থেকে অবশ্যই ফিরে থাকত।

বিশেষ সময়ে অনুমতি : মানুষ দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজ করতে গিয়ে অপ্রয়োজনে নানা ধরনের মিথ্যা কথা বলে থাকে। অথচ বিশেষ কিছু অবস্থা ব্যতিরেকে মিথ্যা বলা শরিয়তে অনুমতি নেই। যেমন-এমন একটি মহৎ কাজ যা মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া ছাড়া সম্ভব নয় এ ক্ষেত্রে বলা যায়। কিন্তু সত্য বলার মাধ্যমে যদি কাজটি হাসিল করা সম্ভব হয় তাহলে কোনো অবস্থাতেই মিথ্যা বলা যাবে না।

যখন পরিস্থিতি এমন হয় মিথ্যা বলা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনো রাস্তা থাকে না এক্ষেত্রেও বৈধতা রয়েছে। যেমন কোনো মুসলমান কোনো এক জালিম থেকে আত্মগোপনে রয়েছে। যদি সে তাকে পায় অবশ্যই হত্যা করবে বা তার ওপর নির্মম অত্যাচার চালাবে অথবা তার কাছে যে ধনসম্পদ লুকায়িত রয়েছে তা ছিনিয়ে নেবে। এমতাবস্থায় ওই ব্যক্তিকে আড়াল করার জন্য শত্রুপক্ষীয় কেউ তার সন্ধান জানতে চাইলে তাকে গোপন ও নিরাপদ রাখার স্বার্থে মিথ্যা বলা ওয়াজিব।

এ ছাড়া এ জাতীয় অন্যান্য বিশেষ অবস্থায়ও শরিয়তের বিধান একই। এ ছাড়া দুই ব্যক্তির মধ্যে বিদ্বেষপূর্ণ মনোভার দূর করে একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট করার প্রয়াসে কিছু হিকমতপূর্ণ বাক্য বা শব্দ প্রয়োগ করা যা অর্থ ও উদ্দেশ্যের বিচারে মিথ্যা নয়, বা কখনো কখনো সমস্যা নিরসনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হতে পারে এসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলার অনুমতি রয়েছে।

উম্মে কুলসুম (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি, ‘মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপনকারী ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়। হয় সে ভালো কথা পৌঁছায়, না হয় ভালো কথা বলে’ (বুখারি ও মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, তিনটি ক্ষেত্রে মানুষের কথাবার্তায় তাঁকে মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছি, ‘১. যুদ্ধকালে ২. মানুষের মধ্যকার ঝগড়া মিটানোর ক্ষেত্রে ৩. আর স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মাঝে মায়া-মহব্বত বৃদ্ধিকারী কথোপকথনে’ (মুসলিম)। উপরিউক্ত বৈধতার বিষয়গুলোতে একটু সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এগুলো সরাসরি মিথ্যার আওতায় পড়ে না, বরং বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি সমাজ ও নিজেকে রক্ষা করার কতগুলো কৌশল মাত্র। তারপরও যেহেতু সত্য কথাটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে তাই একে মিথ্যা বলে গণ্য করলেও শরিয়ত এ ক্ষেত্রে বৈধতা দিয়েছে।

সত্যের অনুশীলন : বিভিন্ন সময় মানুষ কথা বলার সময় সত্য-মিথ্যার বাছবিচার করে না। যেখানে মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই সেখানেও মিথ্যা কথা বলে দেয়। ছেলে ভুলানোর জন্য কোমলমতি বাচ্চাদের সঙ্গে মিথ্যার আশ্রয় নেয়। অথচ এ বাচ্চাটিকে দিয়ে সত্যের অনুশীলন করানো যেত। যে তার বাবা-মা বা নিকট আত্মীয়দের থেকে সত্যের যে শিক্ষাটি গ্রহণ করত সেটাই জীবনধর্মী শিক্ষা। যা সে কখনো ভুলত না। তাই কখনো স্বভাবে এ বিষয়টির প্রশ্রয় দেওয়া মোটেই ঠিক নয়। বন্ধুদের আড্ডা বা অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় কোথাও যেন মিথ্যা নামের এই কালো বিষ মানুষের আমলকে নষ্ট করতে না পারে সে দিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখতে হবে। সর্বদা সত্য কথা বলতে হবে। এটাই তো দ্বীন ইসলামের শিক্ষা। যারা আল্লাহর ওপর ইমান রাখে তারা কখনো মিথ্যা বলতে পারে না। এ কারণে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। যত্রতত্র যা খুশি তা বলা যাবে না। একের কথা অন্যের কাছে বলে না বেড়ানোই ভালো। কারণ তাতে মিথ্যা বলার সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

মিথ্যা সত্য শিখি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম