Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

দিলের মেরামত হয় তাবলিগের মেহনতে

Icon

নূর আহমাদ

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দিলের মেরামত হয় তাবলিগের মেহনতে

হজরতজি ইলিয়াস (রহ.)-এর তাবলিগের মেহনত অসংখ্য মানুষের জীবনে নুরানি ভোর এনেছে। এমনই একজন নুরানি দিলের নুরানি মানুষ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।

তাবলিগের নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন-নূর আহমাদ

দাওয়াত ও তাবলিগের গুরুত্ব সম্পর্কে বলুন।

আরবি দাওয়াত অর্থ আহ্বান করা, আল্লাহর দিকে ডাকা। আল্লাহর বাণী ‘তার কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকে’-এটা দাওয়াতের শ্রেষ্ঠত্ব। আর তাবলিগ অর্থ পৌঁছে দেওয়া। হুজুর (সা.)-এর যুগান্তকারী হাদিস ‘আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও’-এটা তাবলিগের প্রেরণা। আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে হলে দাওয়াত দিতে হবে। আর নবিজির প্রিয় উম্মত হতে হলে তাবলিগ করতে হবে।

মরু আরবের প্রান্ত থেকে বিশ্বের আনাচে-কানাচে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের কারণেই। এই যে আজ আমি মুসলমান, আপনি মুসলমান, আমাদের পূর্বসূরিরা মুসলমান; এটা দাওয়াতের মেহনতেরই ফসল। যদি দাওয়াতের মেহনত না থাকত তাহলে বিশ্বের বুকে ইসলাম নামক বৃক্ষটি কবে মরে শুকিয়ে যেত। আজো যদি দুনিয়ার বুক থেকে দাওয়াতের মেহনত বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে কিছু দিনের ব্যবধানে দ্বীনের স্রোতধারা শুকিয়ে যাবে।

দাওয়াতের মেহনত কি সবার জন্য জরুরি?

প্রতিটি মুসলমানের জন্যই সাধ্যমতো দাওয়াতের মেহনত করা আবশ্যক। দাওয়াতের মেহনতের জন্য দাওয়াতি চরিত্র অর্জন করতে হয়। দাওয়াতি মেজাজ অর্জন করতে হয়। মানুষকে কী বলতে হবে, কী বোঝাতে হবে-এগুলো শিখতে হয়। কীভাবে শিখবেন? জামাতে গিয়ে, চিল্লায় গিয়ে। একজন সাধারণ মানুষ যখন জামাতে যায়, আমিরের নেতৃত্বে চলে, মসজিদের পরিবেশে সবার দেখাদেখি সুন্নতি জিন্দেগির চর্চা করে, তখন তার ভেতর নুরানি পরিবর্তন আসে।

এক সময় নামাজ পড়ত না, রোজা রাখত না, হাফপ্যান্ট পরে ঘুরত, মুখে দাড়ি ছিল না-এমন মানুষ মেহনতের কারণে পাক্কা সুন্নতি জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আমার কথাই বলি। আমাকে কখনো কেউ দাড়ি রাখার জন্য জোর করেনি। তাবলিগ কাউকে জোর করে না। আগে আমার দিলে দাড়ি গজিয়েছে। দিলে দাড়ি গজালে মুখে এমনিতেই গজিয়ে যায়। তাবলিগ মানুষের মনোজগতে পরিবর্তন আনে। দিল ঠিক তো সব ঠিক।

অভিযোগ আছে, তাবলিগের মুরব্বিরা তরুণ মানস বুঝতে পারে না-কথাটি কতটুকু সত্য?

তাহলে একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা শুনুন। চব্বিশ ঘণ্টা মসজিদ আবাদের মেহনতে এক যুবককে রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মসজিদে নিয়ে আসা হলো। ওজু করিয়ে তাকে মসজিদে বসানো হলো। তিন দিনের সময় দেওয়ার কথা বলা হলো। অনেক বলে কয়েক জামাতে যাওয়ার জন্য রাজি করানো হলো। তিনি বললেন, ‘আমি জামাতে যাব এক শর্তে, আমার বাজে পানির নেশা আছে, আমাকে আপনারা পানি নেওয়ার অনুমতি দিতে পারবেন?’ আমির সাহেব বললেন, ‘ঠিক আছে। তবে তুমি বোতলটি মসজিদের টয়লেটে রেখ। যখন ইচ্ছা হবে পান করে এসো।’

তিন দিনের মেহনতের প্রথম দিন রাতেই দিলে হেদায়াতের নুর ঢেলে দিলেন আল্লাহ। গভীর রাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে আমির সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল। পা টিপে টিপে আমির সাহেব কান্নারত ব্যক্তিটির পাশে গিয়ে বসলেন। দেখলেন তিনি আর কেউ নন, ওই যুবক, যে মদ ছাড়া জামাতে আসবে না এমন শর্ত দিয়েছিল। এটাই ইসলাম। ইসলাম চায় আগে তুমি রহমতের ছায়ায় অর্থাৎ আসো। হেদায়াত দেবেন আল্লাহ। যে ওমর (রা.) নবিজিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন মেহনতের কারণেই তিনিই হয়ে গেলেন উম্মাহর অন্যতম রাহবার।

তাবলিগের মুরব্বিরা যদি তরুণ মানস না বুঝতেন তাহলে কি মদসহ জামাতে আসার অনুমতি দিতেন? অনেক যুবক বলে আমি তো প্যান্ট পরি, দাড়ি রাখি না; মুরব্বিরা বলেন, তোমার মতোই চলো, মেহনত শুরু করলে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমির সাহেব বলে দেন-আমরা সুন্নত অনুযায়ী এক প্লেটে খানা খাই, কারও অসুবিধা হলে আলাদা খেতে পারেন। আসলে জোর করে তো তাবলিগ হয় না। তাবলিগ স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপার।

জামাতে বা চিল্লায় থাকা অবস্থায় একজন মানুষের জীবনে যে চারিত্রিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে, সমাজ ও পারিবারিক জীবনে প্রায়ই তার ব্যতিক্রম দেখা যায় কেন?

তাবলিগ তো জীবনব্যাপী। এমন না যে আমি চিল্লায় থেকে ফিরে এসে তাবলিগের জিম্মা থেকে মুক্ত হয়ে গেলাম। আসলে সমাজে আরও বেশি দাওয়াতি মেজাজ নিয়ে চলা উচিত। কিন্তু সেটা সবার পক্ষে হয়ে ওঠে না। একবার সাহাবিরা হুজুর (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ‘আপনার সংস্পর্শ থাকলে আমাদের দিলের অবস্থা এক রকম থাকে আপনার সংস্পর্শ থেকে চলে গেলে দিলের অবস্থা অন্য রকম হয়ে যায়।

দিলের এ পরিবর্তন কি মুনাফেকি?’ হুজুর (সা.) বললেন, ‘তোমরা যদি সব সময় এ মেজাজে চলতে তাহলে তো আসমানের ফেরেশতারা এসে তোমাদের সঙ্গে বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাটে মোসাফাহ করত।’ পরিবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দ্বীনের মেহনত যত বাড়বে, সমাজের পরিবেশ তত শুদ্ধ হয়ে যাবে। তখন সমাজে কোনো দুর্নীতি থাকবে না, অন্যায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে-বাড়িতে সব জায়গায় শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা হবে।

তাবলিগের কার্যক্রম কি নির্দিষ্ট সিলেবাসে বন্দি?

মোটেও নয়। তাবলিগ সব সময় মানুষকে বহুমুখী জ্ঞানের পরামর্শ দেয়। তবে নিজের আÍশুদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে একাধারে চার মাস লাগানো এবং ওলামা হজরতের জন্য একাধারে এক বছর লাগানো জরুরি। এ মূল মেহনতের পর যে সেক্টরে আছে, সে সেক্টরে কীভাবে দ্বীন অনুযায়ী চলা যায়, সে জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দেয় তাবলিগ। একজন কৃষক, তিনি কৃষি বিষয়ে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করবেন

। আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার, তিনি তার লাইনে সর্বোচ্চ বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি দ্বীনি ইলম অর্জন করবেন। যার ফলে তার কাজ সুন্নাত অনুযায়ী করা সহজ হবে। তাবলিগ তো মানুষকে স্মার্ট বানায়। বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছেন, সেটা তাবলিগের মেহনতের মাধ্যমে আরও চমৎকারভাবে সম্ভব বলে আমি মনে করি। হ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম