|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উম্মতে মুহাম্মাদীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা নসিহতের দায়িত্ব। এই দ্বীনি দাওয়াত যে পালন করবে সে সফলতা অর্জন করবে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর তারাই সফলকাম’। (সূরা ইমরান-১০৪)।
দাওয়াত দেয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক। পরিবারের কর্তার জন্য তার স্ত্রী, সন্তানদের দ্বীনের দাওয়াত শরিয়া মোতাবেক পরিচালনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুলের প্রধানরা তার সহকারী ও শিক্ষার্থীদের, মিল ফ্যাক্টরি বা বিভিন্ন গার্মেন্টস এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, এলাকার মেম্বর-কমিশনার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী কিংবা শাসকরা যার যার অধীনস্থ সবাইকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে ধর্মের ছায়াতলে আশ্রয়ের জন্য দাওয়াত দেবে। কেননা রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে’। (বুখারি শরিফ)
দাওয়াতি কাজ মুসলিম-অমুসলিম সবার কাছে নিয়ে যেতে হবে। বর্তমানে দেখা যায়, যে যার দল নিয়ে ব্যস্ত ও নিজকে নিজেই বড় ইসলাম প্রচারকারী মনে করেন। পীর সাহেব মনে করে আমরাই মুরিদসহ ইসলাম প্রচার করি, যারা সংগঠন করে তারা মনে করে শুধু সংগঠকরাই দাওয়াতি কাজ করে, যারা মসজিদের মুয়াজ্জিন আজানের মাধ্যমেই তারা মনে করে আমরাই দাওয়াতি কাজ করে যাচ্ছি। ইমাম, খতিব মসজিদের খেদমতের মধ্যে নিজকে মনে করে আমরাই কেবল দাওয়াতি কাজ করে থাকি। যারা মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্র তারা ভাবে মাদ্রাসাই দাওয়াতি কাজ সীমাবদ্ধ। আর যারা হজরত ইলিয়াস (রহ.) প্রতিষ্ঠিত তাবলিগ জামাত করেন তারা মনে করেন আমরাই কেবল তাবলিগের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে ও দেশের বিভিন্ন এলাকাতে মসজিদে গিয়ে দ্বীন প্রচার করছি। যারা লেখালেখি করে তারা মনে করে আমরাই লেখনীর মাধ্যমে দ্বীন প্রচার করছি। ওয়ায়েজিন মনে করে আমার ওয়াজে হাজার হাজার জনতা আলোচনা শুনে আর আমি বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজের মাধ্যমেই দাওয়াত দিচ্ছি ওয়াজের মাধ্যমেই শুধু ইসলাম প্রচার করা হয়। আমাদের মধ্যে এরকম মনমানসিকতা বেশি কাজ করায় নিজকে নিজে ইসলামী দাওয়াতের বড় সেবক মনে করি। নিজে অন্যের দাওয়াতি কাজের সমালোচনা করি। একে অপরকে বলছি তাদের দরকার কী? মূলত যারা পীর সাহেব, যারা সংগঠন করে, মাদ্রাসায় পড়ে বা পড়ান, মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, খতিব, ইসলামী চিন্তাবিদ, ওয়াজিন, যারা তাবিলিগ করে বা যারা লেখালেখির কাজ করে তারা সবাই ইসলামের পথে মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার করে তাদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ইসলামের দিকে আহ্বান করছে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে নম্র ব্যবহার কর, রূঢ় আচরণ করো না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত ছড়াইও না’। (বুখারি ও মুসলিম)
দাওয়াতি কাজ শুধু খানকা, মসজিদে, সংগঠনে, ওয়াজ মাহফিলে, লেখালেখির কাজে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। বর্তমানে ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, তথ্যপ্রযুক্তির যুগে অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে তাদের ধর্মীয় কাজ সারা বিশ্বে মুহূর্তে প্রচার করছে তাদের তুলনায় আমরা একদম পিছিয়ে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচার কাজ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ, ব্যাপক হারে প্রচার করার জন্য ইহুদিদের রয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখেরও বেশি ওয়েবসাইট, খ্রিস্টানদের প্রতারণায় রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি। এ ছাড়া অন্য অমুসলিমদের রয়েছে প্রায় চার লাখের বেশি ওয়েবসাইট। তারা তাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছে তাদের দাওয়াতি কাজ করছে। তাই আমাদের দাওয়াত মুসলমানদের কাছে সীমাবদ্ধ না রেখে অমুসলিমদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। অমুসলিমদের কাছে দাওয়াতের কারণে সেসব দেশে ক্রমেই মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতারং বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, স্কুল বন্ধ থাকাবস্থায় কিছু বন্ধু মিলে একজন আলেমকে সঙ্গে নিয়ে নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি, মন্ত্রী সবার কাছে দাওয়াত প্রচার করলে আশা করা যায় মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে। মুসলিম-অমুসলিম সবাইকে দাওয়াত দিলে মানুক বা নাই মানুক ওর ফায়দা হোক বা না হোক নিজের ফায়দা হবে। অন্যের ঈমান আমল দুরস্ত করার কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহ নিজের আমল দুরস্ত করে দেন। রাসূল (সা.) বলেন, ‘একজন বান্দা আরেকজন বান্দার সাহায্যে থাকলে আল্লাহ পাকও তার সাহায্যে থাকবেন। অন্যের ঈমান-আমলের কাজে সাহায্য করলে আল্লাহ পাক নিজের ঈমান আমলের ফয়সালা করে দেবেন’। (মুসলিম শরিফ)
লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা
