Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

শীতকালীন সবজির গোলটেবিল বৈঠক

আলু আমাদের সঙ্গে কেন? ওদের তো দাম কম। * হালকা বামে চাপলেই তো একটু আরাম কইরা বসতে পারি। * এসিটা একটু ছাইড়া দ্যান। * মিডিয়া থাকলে ভালো হইত। সবজি বইলা কি আমাগো ইজ্জত নাই! * আরে নতুন আলু ২০০ করে কেজি! হিসাব কইরা কথা বল। * গোলটেবিল বৈঠক চলছে, অথচ টেবিলে কোনো খাওন নাই!

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অংশগ্রহণকারী সবজিবৃন্দ

মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, ব্রকলি, মুলা, নতুন আলু, কাঁচা মরিচ, টমেটো, বেগুন, লাউ, করলা।

মিষ্টিকুমড়া: টেবিলটা গোল, লম্বা, তেকোনো, তেরছা যেমনই হোক-সেখানে বৈঠকের সময় একজন সভাপতি প্রয়োজন হয়। আজকের এ মহতী অনুষ্ঠানের সভাপতি কে জানি না। পদাধিকারবলে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করছি...।

করলা : ওহে কুমড়োপটাশ ভাই, কী এমন পদ হয়েছে তোমার, সেটার আবার অধিকার থাকবে! গায়ে-গতরে তুমি বড়-এই তো? গায়ের জোরেই সব দখলে নেবে নাকি?

মিষ্টিকুমড়া : তুই নামে তিতা, কথায় তিতা, স্বভাবেও তিতা। জন্মের সময় বাবা-মা মুখে মধু দেয়নি। অবশ্য দেবে কী করে-কতদূরে সুন্দরবন। কত সময় খরচ আর ভাড়ার ব্যাপার!

শিম : মেনে নিচ্ছি আজকের অনুষ্ঠানের সভাপতি সর্বশ্রদ্ধেয় মিষ্টিকুমড়া। সেই সঙ্গে নিজেকে প্রধান অতিথি ঘোষণা করছি। আজ আমাদের আলোচ্য বিষয়-শীতকালীন সবজির উচ্চমূল্য। দুর্ভাগা মানুষ আমাদের ছুঁতে পারছে না। হিমশিম খাচ্ছে। যেখানে শিম খাওয়ার কথা সেখানে ‘হিম’ও খেতে হচ্ছে। এটা কোনো কাজের কথা নয়। গণতান্ত্রিক বিষয় নয়ই। খতিয়ে দেখতে হবে নেপথ্যে এক বা হাজারাধিক সিন্ডিকেট কাজ করছে কিনা।

ব্রকলি : আমি শিম ভাইয়ার এমন বক্তব্যে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি। শুধু নিজের ঢোলই পেটালেন। আমরাও যে শীতকালীন সবজি গোত্রের সদস্য, সেটা বোধকরি বেমালুম ভুলে বসে আছেন। আপনার বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করুন মহামান্য প্রধান অতিথি মি. শিম! ব্রকলির ভ্রুকুটিতে পড়বেন না। তাহলে টিকতে পারবেন না।

মুলা: এ কী, তোমরা দেখছি এখানে মাছের বাজার বসিয়ে দিয়েছ। গোলটেবিলে বলা হচ্ছে, শীতকালীন সবজির কথা। কিন্তু কোথায় শীত? আমাদের ক্রেতারা এখনো ফুল স্পিডে ফ্যান চালিয়ে ঘুমায়। শীতই যেহেতু এখানে নামেনি, শীতকালীন সবজি আসবে কোত্থেকে, দাম কমানোর প্রশ্নইবা কেন? যারা ইতোমধ্যে চলে এসেছি, নিজেদের বড়জোর অকালপক্ব বলতে পারি! ছাই ফেলতে লাগে ভাঙা কুলা/মাছ-মাংস রাঁধতে আমি মুলা!

নতুন আলু : বিজ্ঞ বন্ধু জনাব মুলা বোধহয় ভুলে যাচ্ছেন-বাংলাদেশ হলো সেই দেশ, যেখানে বর্ষাকালে এখন আর বৃষ্টি হয় না, গরমকালে গরম না পড়লেও তরুণদের মাথায় টাক পড়ছে। সেখানে শীতকালে শীত পড়বে কেন? তবুও ক্যালেন্ডারের পাতা কারও জন্য অপেক্ষা করবে না। আজ রোববার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫। কারও কোনো সন্দেহ আছে এতে, ভুল আছে! আর আমি যেহেতু এখনো বাজারে আসিনি, ধরে নিতে পারেন আমার জন্ম এখনো হয়নি। পুরোনো আলু ভর্তায় বাড়ে, নতুন আলু স্বাদে!

ফুলকপি : ফুলরাজ্যে আমিই একমাত্র ফুল, যেটাকে আয়েশ করে খাওয়া যায়। তরকারি রাঁধা যায়, চপ বানানো যায়। সভাপতি ও বিশেষ অতিথিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে মহামূল্যবান বক্তব্য শুরু করছি। উপস্থিত আছেন আমার আরও দুই জ্ঞাতি ভাই-বাঁধাকপি ও ব্রকলি। বাঁধাকপির আছে ইয়াবড় পাতা আর ব্রকলির শরীরে সবুজের হাতছানি। আমরা এক মায়ের পেটের তিন ভাই-ট্রিলজি নই কেন? কেন মানুষ আমাদের ত্রিরত্ন বলে না? ত্রয়ী নামকরণ করে অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসে না? তবে কি দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে! লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই/লড়াই করে স্বীকৃতি চাই।

কাঁচা মরিচ : সবাই যেভাবে নিজের ঢোল পেটাচ্ছেন তাতে করে আমরা মূল বিষয় থেকে নজর সরিয়ে ফেলছি। যাকে বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। আমরাও এমন ঢাকাঢাকি করছি কিনা সেটা ভেবে দেখার সময় এসেছে। আজকের আলোচ্য বিষয়, শীতকালীন সবজির উচ্চমূল্য; সবজি হিসাবে আমাদের করণীয় কী? যদিও নিজে ঠিক সবজি নই, তাই বলে শাকও নই। শীত-গরম সব কালেই জন্মাই। আমাকে বাঁধা যাবে না বিশেষ কোনো ঋতুতে। আমিও আলু ভাইয়ার মতো বারোমাস বাজারে থাকি। পেঁয়াজের সঙ্গে মিল আছে। দাম বাড়লে পত্রিকাগুলো শিরোনাম করে-আবার বাড়ল মরিচের ঝাল, বাড়ল পেঁয়াজের ঝাঁজ!

বেগুন : আমার গুণ কোনো অংশে কম নয়, তবু লোকে ডাকে বে-গুণ। গোল বেগুন, লম্বা বেগুন। গোল বেগুনের দাম বেশি। এখন আমার মূল্য কেজিপ্রতি কম-বেশি ১০০ টাকা। আশা করছি আগামীতে আরও দামি হয়ে উঠব। এসে যাচ্ছে রমজান মাস। বাড়বে চাহিদা। তখন আরও দামি সবজিতে পরিণত হবো। সবই তকদিরে খেইল। ভাগ্য যাকে উঁচু জায়গায় পৌঁছে দেয়, এমন বেহুদা গোলটেবিল বৈঠক কি পারে তাকে নিচে নামিয়ে আনতে? দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে পছন্দ করি। নিজের উন্নতিতে আনন্দিত। অধিক মূল্য মানেই অধিক সম্মান।

টমেটো : যৌবনে আমি সবুজ থাকি, বার্ধক্যে লাল হই। অফসিজেনে আমার দাম থাকে দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা কেজি। শীতের সিজনে দামটা মহামান্য সভাপতি মিষ্টিকুমড়ার পর্যায়ে নেমে আসে। সবজি রাজ্যে আমার দামই সবচেয়ে বেশি-এটা অহংকারের কারণ। এ অহংকারেই আমার পা মাটিতে পড়ে না। দোকানদাররা ডালায় সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখে। আলু ভাইয়ের মতো বস্তাবন্দি থাকি না। নাম আছে যার, দাম আছে তার!

লাউ : আমি লাউ লোকে বলে কদু। কদুর তেল মাথা ঠান্ডাকরণে অধিক কার্যকরী। লাউ ও চিংড়ি মাছের রসায়ন অসাধারণ। এদিক দিয়ে চিংড়িও আমার মতো দুর্ভাগা। মানুষ হেলাফেলায় বলে ইচা মাছ! শীত-গরম নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি বারোমাসি সবজি। তবে শীত মৌসুমে বেশি সবুজ থাকি। দাম নিয়ে কোনো অহংকার নেই। ক্রেতার হাতের নাগালেই থাকি।

মিষ্টিকুমড়া : এভাবে একটা আলোচনাসভা চলে না, চলতে পারে না। তোমরা আমাকে বলতেই দিচ্ছ না। সভাপতি হিসাবে মূল্যবান কথাগুলো তো আমাকেই বলতে হবে। দাম মনিটর করার জন্য সবজি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আড়তে আড়তে সেল গঠন করা যেতে পারে। কোনো অসাধু সিন্ডিকেটকে সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না। ক্রেতাদের স্বতঃস্ফূর্ত তৎপরতাও জরুরি। সবজির দাম বেশি হলে তারা কিনবে না, দাম না পড়ে যাবে কোথায়!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম