Logo
Logo
×

বিচ্ছু

রম্যগল্প

দাম্পত্য জীবন জটিল জীবন

Icon

সাদিকুল নিয়োগী পন্নী

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক.

মিডিয়া কর্মী রতন তার প্রেমিকাকে নিয়ে গর্ব করে বলল, ‘আনিকা অনেক বড় মনের মানুষ। মিডিয়ায় প্রচলিত-অপ্রলিত কথাবার্তা সে কানে নেয় না। তার সঙ্গে ডেটিং করতে গেলে কোনো নায়ক ভিডিও কল দিলে সে হাসির ছলে উড়িয়ে দেয়। এমন প্রেমিকা পাওয়া আজকাল ভাগ্যের ব্যাপার।’

অফিসের ক্যান্টিনে বসে যখন সবাই আলাপচারিতায় মশগুল তখন রফিক বলল, ‘আমার কপালে যে কী আছে নিজেও জানি না। প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ে প্রায় ঠিকঠাক। তখনই ঘটল বিপর্যয়।’

‘ধরা পড়ছিলেন নাকি ভাই?’ ঠাট্টা করে বলল রতন।

‘ভাই মেয়েরা তিলকে তাল করে ফেলে। আমি একটা নাটকের শুটিংয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমাকে না জানিয়ে আমার প্রেমিকা সেখানে হাজির। আমি তখন নায়িকাকে নাটকের একটা দৃশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। সে দূর থেকে তা দেখে চলে গেল। রাতে শুটিং শেষে বাসায় ফিরে একাধিকবার ফোন দিলাম। রিসিভ করে না। পরে একটা ম্যাসেজ দিল-তুমি তোমার নায়িকা লইয়া থাক। আমাকে বিরক্ত করবা না। তারপর আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।’

‘বাঘের রাগ কমলেও নারীদের রাগ সহজে কমে না ভাই।’ বলল আরেক সহকর্মী হাবুল।

‘আপনার অভিজ্ঞতা আছে নাকি?’ প্রশ্ন করল রফিক।

‘আমি কাজ করি বিজ্ঞাপন নিয়ে। নায়ক নায়িকাদের সঙ্গে তেমন চলাফেরা করি না। তারপরও আমাকে সন্দেহ করে বউ।’

‘নিশ্চয়ই আপনি কিছু করেছিলেন।’ রতন বলল।

‘আরে ভাই আমার অপরাধ আমি নাকি সুন্দরী নায়িকাদের অনুষ্ঠান বিক্রির জন্য রাতদিন দৌড়াই।’

দুষ্টু হাসি দিয়ে রফিক বললো, ‘রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।’

‘ভাই, একজনের অনুষ্ঠান বিক্রি হচ্ছে মানে সে আরও কাজ পাচ্ছে। এতে সে খুশি হয়ে আমাকে একদিন কফি খাওয়াতেই পারে।’

‘আপনি নায়িকার সঙ্গে কফি শপে গিয়েছিলেন?’ বলল রতন।

‘আমি সরল মনে একদিনই কফি শপে গিয়েছিলাম। বাসায় ফেরার পর বউ দেখি তেলে বেগুনে আগুন। কারণ জানতে চাইলাম। বউ চোখের সামনে ফোন ধরে বলল, ফেসবুকে নায়িকার সঙ্গে কফি শপে তোমার ছবি। এগুলো মার্কেটিংয়ের কাজ? মেয়েটা সরল মনে ছবি পোস্ট দিয়েছিল। সেটাই কাল হয়ে গেল আমার জীবনে। শেষ পর্যন্ত রাত কাটাতে হলো এক বন্ধুর বাসায়।’

রফিক বললো, ‘ঝামেলা মিটালেন কেমনে?’

‘পরদিন বন্ধুসহ বাসায় এসে বউয়ের হাত পা ধরে কোনো রকমে তাকে শান্ত করেছি।’

‘এখনও সন্দেহ করে?’ জানতে চাইল রতন।

‘বাসা থেকে বের হওয়ার পর যখন তখন ভিডিও কল দেয়। শুধু বাথরুমে থাকলে অডিও কল মেনে নেয়। বাকি সময় ভিডিও কলে প্রমাণ দিতে হয় আমার অবস্থান সম্পর্কে।’

রতন বলল, ‘ভাই এজন্য আমি সব কথা পরিষ্কার করে নিয়েছি। আশা করি বিয়ের পর ঝামেলা হবে না।’

‘মেয়েদের মন চোখের পলকে বদলায়। বিয়ে করেন। আসল রূপ তখন দেখা যাবে।’ বলল হাবুল।

দুই.

কিছুদিন পর ধুমধাম আয়োজন করে বিয়ে করল রতন। অফিসের সহকর্মীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তার বউয়ের খুব প্রসংশা করল। ছুটি শেষে অফিসে যোগদান করল রতন। কাজের চাপে সে আনিকাকে তেমন সময় দিতে পারে না। আনিকাকে খুশি করতে একদিন রতন শুটিংয়ে নিয়ে গেল। বৃক্ষ পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠানে শিল্পী বলতে একজন উপস্থাপিকা আর একজন উদ্ভিদবিদ ছিলেন। শুটিং শুরু হলো। উপস্থাপিকা একটা গাছের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্ভিদবিদের কাছ থেকে গাছের গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে চাইছেন। হঠাৎ যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিল। শুটিং ইউনিটের একজন জানালেন উপস্থাপিকার সাউন্ড পাওয়া যাচ্ছে না। ট্যাকনেশিয়ান বারবার চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারছিলেন না। রতন নিজে উপস্থাপিকার ক্লিপ মাইক্রোফোন (লেপেল) ঠিক করে দিলেন। শুটিং শেষ হলো সুন্দরভাবে।

তিন.

শুটিংয়ের পরদিন থেকে রতনের খবর নিই। ফোন দিলেও ধরে না। তার সন্ধানে রফিক ও বাবুল উপস্থিত হলো রতনের বাসায়। রতন তখন ড্রয়িং রুমের একটা সোফায় বসা ছিল। দুই হাতেই ব্যান্ডেজ। পাশে দাঁড়ান আনিকা।

‘কী করে এমন হলো?’ বাবুল জানতে চাইলো।

রতন কথা না বলে আনিকার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

রফিক বলল, ‘এতো বড় দুর্ঘটনা ঘটল অফিসে জানালেন না? আমরা একটু হলেও সহযোগিতা করতে পারতাম। ভাবিকে একা একা প্যারা নিতে হতো না।’

‘তেমন কিছু হয়নি। আপনারা কথা বলেন। আমি চা নিয়ে আসছি।’ এই বলে চলে গেল আনিকা।

রতন বলল, ‘ভাই উপস্থাপিকাকে নিজ হাতে ক্লিপ মাইক্রোফোন পরিয়ে দেওয়ার অপরাধে হাত দুটো প্রায় অচল করে দিয়েছে আনিকা।’

রফিক বলল, ‘ভাবি না অনেক বড় মনের মানুষ? কতো গল্প কললেন বিয়ের আগে!’

রতন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘বিয়ের আগে যে প্রেমিকা বিড়ালের মতো থাকে, বিয়ের পর সে হয়ে যায় বাঘিনী।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম