ধারাবাহিক রম্য টল TALK
ফেসবুকের অজানা ফকির-ফকিরনিগণ
শায়ের খান
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
টল যা ভেবেছিল, তাই। রাতে লিফট দিতে গিয়ে ডিম্পল বুড়িয়ার বাসায় ঢোকেনি বলে ওকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছে সে। টল ভেবেছিল ব্লক করে দেবে। দেয়নি। আনফ্রেন্ড করার সঙ্গে সঙ্গে প্রোফাইল পিকচারটা বদলে আরেকটু আবেদনময়ী করেছে। ফেসবুকেও এখন ছোটকালের আড়ি-আড়ি ভাব খেলা চলে। এগুলো হয় আনফ্রেন্ড, ব্লক, আনব্লক, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের ঢঙে। বুড়িয়া চাচ্ছে টল আবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাক। যেহেতু মিউচুয়াল ফ্রেন্ডস আছে, নজরে রাখতে পারবে। হঠাৎ একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টে উৎসাহী হয়ে উঠল টল। লেডিদের রিকোয়েস্টে উৎসাহী হবে, এটাই স্বাভাবিক। আফটার অল, সিঙ্গেল। তবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টেই। রাত-বিরাতে বুড়িয়ার মতো ঘরে যাওয়ার রিকোয়েস্টে না। প্রোফাইলে ঢুকে চমকে ওঠে। দুই মুনমুন সেনের একটা। নাম মিথিলা। এক গার্মেন্টের ডিরেক্টর। মানে শিল্পপতি। এই ‘পতি’ শব্দটি নিয়ে অনেক ভেবেছে ও। শিল্পপতি দেখা যায়। শিল্পপত্নী দেখা যায় না। অভিধানেও নেই। তার মানে কি শিল্পপতি-কোটিপতির স্ত্রী লিঙ্গ নেই? অথবা শিল্পের মালিক হলেই হয়ে যাবে শিল্পের পতি? শিল্পটা কি তার পত্নী? তা কি করে হয়? ব্যবসা তো আর বিয়ে না। বিয়ে ব্যবসা হতে পারে কখনও কখনও। তাছাড়া মিথিলার ক্ষেত্রে কী হবে? ওর শিল্পটাই ওর পতি? সে হচ্ছে শিল্পটার পত্নী? নাকি এটা ওর পতির শিল্প? পত্নী হয়ে শিল্পের শাসক ও? এই যে ‘শাসক’-এরও কি কোনো ‘শাসিকা’ আছে? নেই। কেন? ক্রিকেটে ব্যাটসম্যান আছে, ব্যাটসওম্যান নেই। মেয়ে ব্যাট করলেও সে ব্যাটসম্যান। কেন? তসলিমা নাসরিনও এ নিয়ে কিছু বলেননি। কোনো বাংলার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে হবে। একটা স্ট্যাটাস দিলে কেমন হয়? শব্দেরও সমঅধিকার থাকা উচিত। ভাবতে ভাবতেই এড করে নিল মিথিলাকে। ঘুরে আসে ওর ফটো অ্যালবাম। সর্বনাশ, এ মহিলা তো ক্লাবিং ছাড়া বোঝেই না কিছু। রাত দিন চব্বিশ ঘণ্টা চৌদ্দ ক্লাবে ঘোরাঘুরি। অনলাইনেই ছিল। টল এড করায় সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ- ‘থ্যাংক্স ফর এডিং মি ঔ!’ ঔ? কী বোঝাতে চায় মিথিলা ঔ দিয়ে? Joker? Jerk? নাকি Jantoosh? একটু খাতির জমিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে। প্রথম ধাপ হিসেবে মেসেজের রিপ্লাইয়ে লিখে- ‘ইউ আর ওয়েলকাম শিল্পপত্নী!’ চ্যাটিং এ মিথিলার প্রশ্ন, ‘শিল্পপত্নী?’ টল ওর একটু আগের ভাবনা শেয়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে মিথিলা ‘হা হা’ এর সঙ্গে ‘কিস’ ইমোজি দিয়ে দেয় বেশ বড় বড় কয়েকটা। কিছুটা বিব্রত হয় টল। মিথিলা স্ট্যাটাস দেয় : I am a শিল্পপত্নী! feeling dancing!
সঙ্গে সঙ্গে ম্যাশ সাহেবের স্ট্যাটাস, ‘ফকিরনি!’...feeling upset!
ম্যাশের স্ট্যাটাসে টল নিজেই আপসেট হয়। কি বলতে চান উনি? মিথিলাকে মীন করলেন? এর রেশ কাটতে না কাটতেই ছানামুখির স্ট্যাটাস- ‘ফকিরনির মেয়ে!’ feeling angry!
এবার পুরোপুরি আপসেট হয়ে পড়ে টল। একটা বাণী পড়েছিল- ‘কখনও কখনও কোনো স্ট্যাটাস একজনের জন্যই দেয়া হয়।’ এরা সম্ভবত মিথিলার উদ্দেশ্যেই স্ট্যাটাসগুলো দিচ্ছে। অথচ এই লেডি সহজ সরল মনেই স্ট্যাটাসটা দিয়েছে। টল মার্ক করেছে ফেসবুক মানুষকে আস্তে আস্তে উদ্ভট সব আচার আচরণে ঢোকাচ্ছে। অসুস্থ চিন্তা আর প্রতিযোগিতায় নিয়ে যাচ্ছে। কে কত দেশ ঘুরল, কারা কোন বড় রেস্টুরেন্টে পার্টি করল, কার সঙ্গে কোন বিগ শটের সেলফি, কে কত বিগ শট, নিজেকে ফুটানোর সঙ্গে ফুটানি, মেয়েদের আরেকজনের চেয়ে নিজেকে বড় দেখান, আবেদনময়ী দেখান, অন্যকে ছোট করা- এসব। এক মহিলার কথা মনে পড়ল টলের। অচেনা। এ সেদিন ফেসবুকে পরিচয়। বড় কোম্পানির এক বড় কর্তার বউ। কিছুটা রক্ষণশীল টাইপ। পদ বলেই তাকে বিভিন্ন হাই প্রোফাইল পার্টিতে এটেন্ড করতে হয়। খুললাম খুল্লা স্টাইলে শাড়ি পরতে পারে না মহিলা। অন্যরা এ ব্যাপারে ডক্টরেট। মহিলা দেখলেন, গ্রুপ ছবিতে অন্যরা প্রচুর লাইক-কমেন্ট পায়, উনি পান না। একদিন উদ্ভটভাবে কিছুটা খুললাম খুল্লা হয়ে ব্ল্যাক জর্জেট শাড়িতে ছবি দেন। প্রচুর লাইক- ঋঁহহু কমেন্টস আসতে থাকে। বিষয় সেটি না। মহিলার শাড়ি পরাটাই উদ্ভট ছিল। মনে হয়েছে উনি শাড়িকে বিভিন্ন দিকে টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে ফাঁকা ফাঁকা করে দিয়েছেন। কোনো আর্ট শিল্পের বালাই নেই। টল কষ্ট পেয়েছে। আর এবার চমকে ওঠে ছানামুখির ‘ফকিরনির মেয়ে’ স্ট্যাটাসে চিকির কমেন্ট দেখে। লিখেছে- ‘তাংফাংই তো ফকির!’ হোয়াট? চিকি তো ওকে তাংফাং রাইটার বলেই ডাকে! ভীষণ মুষড়ে পড়ে। আর ম্যাশের এরপরের কমেন্টে মাথা পুরোপুরি হেট হয়ে আসে টলের। লিখেছে- ‘ফকিরের বাচ্চা!’ মাথা হেট অবস্থাতেই ফোনে কল আসে। ম্যাশের কল! টল ফোন রিসিভ করে সালাম দেয়ার আগেই গম্ভীর গলায় ম্যাশ বলেন, ‘একটু ওপরে আমার ঘরে আস তো!’ ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতো উঠে হাঁটা দেয় টল। দুরু দুরু বুক।
ওপরে ম্যাশের রুমের দরজা বন্ধ। দরজা আস্তে করে খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ছানামুখির চিৎকার- ‘ফকিরের সর্দার!’ চমকে দাঁড়িয়ে থাকে টল। ম্যাশ-ছানামুখি-চিকি একই ঘরে ছিল? গম্ভীরভাবে ম্যাশ বলেন, ‘বসো।’ আস্তে করে বসে টল।
ম্যাশ মাথা নিচু করে ঘরের এমাথা-ওমাথা হেঁটে হেঁটে পড়া মুখস্থ করার মতো করে আপন মনে বলে চলেছেন, ‘ফকিরের বাচ্চা, ফকিরনির ভাইগ্না, ফকিরের গোষ্ঠী!’ (চলবে)
