|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ধরা যাক, কোনো একটা নির্বাচনে আপনি একজন প্রার্থী। আপনার নাম ধরলাম ‘রহমত’। ‘সহমত ভাইয়ের সঙ্গে ছন্দ মিল রেখেই আমরা আপনার এ নামটা ধরলাম। যদিও আপনি এখন আর ভাই নেই। বাবা হয়ে দাদা বা নানা হওয়ার পর্যায়ে আছেন। তবুও আপনার নামে স্লোগান হয় ‘ভাই’ সম্বোধনে-
‘আমার ভাই, তোমার ভাই
রহমত ভাই, রহমত ভাই...’
আপনাকে নিয়ে এ স্লোগান বিপদে ফেলে দেয় আপনার ছেলেকে। সে কী সম্বোধনে স্লোগান দেবে? বাপকে ভাই বলার মতো বেয়াদবি আর হয় না। আবার মিছিলে তো এ বলেও স্লোগান দেয়া যায় না-
‘আমার বাপ, তোমার বাপ
রহমত বাপ, রহমত বাপ...’
পেছনের জনতা তো আর আপনাকে বাপ ডাকতে যাবে না। আপনার ছেলের এ বিপদ আমাকেও তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল বেশ কিছু দিন। না, আমার বাবা নির্বাচন করেননি। আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল এ চিন্তা- আসলেই তখন আপনার ছেলের কী বলে স্লোগান দেয়া উচিত! সমাধান হয়ে এলো সেবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে বড় মামা নির্বাচনে দাঁড়ালেন। আমরা সবাই তোড়জোড় করে মামার পক্ষে কাজে নেমে গেলাম। বড় মামার বড় ছেলে গ্রামে মিছিল বের করল। সেখানে সে সমানে মামাকে ‘ভাই’ বলেই স্লোগান দিল। এতে ক্ষেপে গেল মামার ছোট ছেলে। ও এসে মামাকে বলল, ‘আব্বু, ভাইয়া তোমাকে ভাই বলে স্লোগান দিচ্ছে কেন? তুমি কি আমাদের ভাই হও?’ মামা হেসে বললেন, ‘নির্বাচনের বাজারে বাপ-ভাই বলে কিছু থাকে না রে! সবাই ভাই। এটাই রাজনীতির নিয়ম।’ শাওন রেগে বলল, ‘এ নিয়ম আমি মানি না। বাবাকে ভাই আমি জীবনেও ডাকতে পারব না।’ মামা বললেন, ‘কে তোকে ডাকতে বলেছে? তুই না হয় না গেলি মিছিলে।’ মামার জবাবে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে গেল বাচ্চা ছেলেটা। তারপর ওর বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং সবাইকে হাওয়াই মিঠাইর লোভ দেখিয়ে নেমে পড়ল মিছিল নিয়ে। মামার বড় ছেলে তাসনিমের মিছিলে এলাকা না কাঁপলেও কেঁপে গেল ছোট ছেলে শাওনের মিছিলে। রীতিমতো গগনবিদারী আওয়াজে সে এবং তার বাহিনী স্লোগান ধরেছে-
‘আমার আব্বু, তোমার আব্বু
দুলাল আব্বু, দুলাল আব্বু...’
এলাকার সবার চক্ষু তো চড়কগাছ। এ কেমন স্লোগান! স্পটলাইটে চলে এলো শাওন। সবার মুখে ওর এবং ওর বাহিনীর আলোচনা। মামা হাসতে হাসতে শেষ। বিকালে আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘এতগুলো ছেলে আমাকে বাপ ডেকে স্লোগান দিচ্ছে। ব্যাপারটা হাস্যকর, ফানি। এতে আমার একটা জোকার ইমেজ তৈরি হতে পারে। তুই ওকে বুঝিয়ে মিছিল থেকে ফিরিয়ে আন। তোকে তো মানে।’
শাওন তখন আরেক দফা মিছিলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, আমি ফেরাতে গেলাম। তার একটাই কথা, ‘না, ভাইয়া না। আমার আব্বুর নামে আমি স্লোগান দেব, সেখানে তাকে কেন ভাই ডাকতে হবে?’ আমি বললাম, ‘তোমার আব্বুকে তুমি আব্বু ডাকো, ঠিক আছে। বাকিরা কেন ডাকবে?’
‘কারণ, আমি ওদের সবাইকে পাঁচ টাকা করে দিছি।’ মামাতো ভাইয়ের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় মুগ্ধ না হয়ে পারা গেল না। দেখতে পেলাম, এর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ তীব্র উজ্জ্বল। তারপরও বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে, এক কাজ কর। স্লোগানে তুমি আব্বুই বলবে, বাকিরা বলবে ভাই। সুন্দর একটা স্লোগান হবে-
আমার আব্বু, তোমার ভাই
দুলাল ভাই, দুলাল ভাই...!
সুন্দর না স্লোগানটা?’
‘কিছুটা সুন্দর। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে।’
‘আবার কী?’
‘আমার আব্বু তো ওদের কাকা হয়। কাকাকে কীভাবে ভাই ডাকে বল?’
এ বাঁদরকে সামলানো মুশকিল। না পেরে শেষে বললাম, ‘কী স্লোগান দিতে চাও তাহলে?’
শাওন এবার বেশ হাসিমুখে বলল, ‘আমার আব্বু, তোমার কাকা, দুলাল কাকা, দুলাল কাকা...!
আমি আর কথা বাড়াইনি। ওরা স্লোগান দিতে দিতে পথে চলল। আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম একজন ভবিষ্যৎ নেতাকে। হ
