বিচ্ছু ভাবনা
সরণি ও শ্রদ্ধাঞ্জলি
মাহবুব কামাল
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাক্য ও শব্দ তো বটেই, কখনও কখনও এমনকি বর্ণ ও বানানের মধ্যেও ফুটে থাকে চিত্রকল্প। সুতরাং ‘বোঝা গেলেই তো হল’- এই যুক্তিতে বানান ভুল করার কোনো সুযোগ নেই। রবীন্দ্রনাথ একবার ‘বৌ’ না লিখে ‘বউ’ লিখেছিলেন বলে প্রখ্যাত বৈয়াকরণিক ক্ষিতিশ চন্দ্র ব্যঙ্গ করেছিলেন- এ কেমন বৌ, যে মাথায় ঘোমটা নেই। বলা বাহুল্য, ‘বৌ’ বানানের ঔ-কারটি দিয়ে তিনি ঘোমটা বুঝিয়েছিলেন। ‘হঠাৎ’ বানান ‘ত’ দিয়ে লিখলেও শব্দটা বোঝা যায়; কিন্তু ‘ৎ’-এ হঠাৎ পিছলে যাওয়ার যে দৃশ্যকল্প, ‘ত’-তে তা নেই। তেমনি ‘জ্বলজ্বলে’ বানানে ‘জ’-এর নিচে ‘ব’ না দিলে প্রজ্বলনের ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা
থাকে না।
স্বল্পশিক্ষিতরা যখন বানানে ভুল করে, তখন তাকে রেহাই দেয়া যায়। যেমন রিকশার পেছনে যখন দেখি লেখা রয়েছে- ‘মায়ের আর্শীবাদ’, তখন মন খুব বেশি খারাপ হয় না। কিন্তু উচ্চশিক্ষিতরা ‘আশীর্বাদ’ বানান ভুল করলে রগ চটে যায়। মিসেস জিয়ার প্রথম টার্মে একটি ব্যানারে যখন দেখলাম লেখা হয়েছে- ‘প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধাঞ্জলী’, তখন এক কলামে লিখেছিলাম- বাঙালি যখন দ্বিধায় পড়ে হ্রস্ব - কার হবে, নাকি হবে দীর্ঘ -কার, তখন পরেরটাই বেছে নেয়। পাঠক খেয়াল করে দেখবেন ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’কে কীভাবে হরহামেশাই ‘শ্রদ্ধাঞ্জলী’ লেখা হয়ে থাকে।
আবার দেখুন, রামপুরা থেকে কুড়িল পর্যন্ত সড়কটির নাম প্রগতি সরণি। এই দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমাসহ হাজারো প্রতিষ্ঠান। অথচ আপনি যদি এসব প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে কখনও ‘সরণি’ বানানটি শুদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান, তাহলে আপনি সৌভাগ্যবান। একটি মাত্র শব্দ অথচ কত বিচিত্র এর ভুল বানানের প্রকারভেদ! ভুল বানানগুলো দেখুন।
সরনি, সরনী, স্বরনি, স্বরনী, স্বরণি, স্বরণী, স্মরনি, স্মরনী, স্মরণি, স্মরণী।
