Logo
Logo
×

বিচ্ছু

পাশে বসা সেই মেয়েটি

Icon

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

২০১৫ সালের কথা। ঢাকায় একটা বায়িং অফিসে সিনিয়র মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি করি। তখন বিভিন্ন গার্মেন্ট ফ্যাক্টরির কাজ পরিদর্শনে নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুর নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল। নারায়ণগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশে একদিন গুলিস্তান থেকে বন্ধন পরিবহনের একটি বাসে উঠি। আমার পাশের সিটে বোরকা পরিহিতা এক তরুণী বসা। এমনভাবে নেকাব পরা ছিল, ড্যাবড্যাবে দুটি কালো হরিণ চোখ ছাড়া মুখমণ্ডলের আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। মোবাইল ফোনে কথা বলছে সে। তার কথাগুলো ছিল এমন, ‘প্রাইভেট কার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বাসে করে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। উফ! কী অসহ্য গরম! বাসে এসি নেই। কীভাবে যে মানুষ এসব বাসে চড়ে যাতায়াত করে বুঝি না!’ তার কথাবার্তা শুনে আমি বেশ লজ্জাবোধ করতে থাকি। আমাকে নিয়মিত এ অসহ্য গরম সহ্য করে বাসে চড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে হয়। অথচ আমার পাশে বসে আছে এক ধনাঢ্য তরুণী।

কিছু দূর যাওয়ার পর মেয়েটি আমার দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ভাইয়া কি নারায়ণগঞ্জের নাকি কোনো কাজে ওখানে যাচ্ছেন?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘আমি ঢাকায় থাকি, অফিসের কাজে নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছি।’ শুনে তরুণী জানাল, তার বাসা নারায়ণগঞ্জ এবং সে ঢাকায় একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আবারও প্রশ্ন করল, ‘ভাইয়া, আপনি কিসে জব করেন আর নারায়ণগঞ্জে কোথায় যাবেন?’ উত্তরে জানালাম, ‘আমি পেশায় একজন মার্চেন্ডাইজার, নারায়ণগঞ্জে দুটো গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে যাচ্ছি।’

মেয়েটি তখন বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলল, ‘ও আচ্ছা, আপনি মার্চেন্ডাইজার। নারায়ণগঞ্জে আমাদের একটা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি আছে। অমুক অ্যাপারেলস হচ্ছে আমার বাবার। আপনাকে প্রথমে দেখেই আমার ধারণা হয়েছিল, আপনি একজন মার্চেন্ডাইজার হবেন।’

তরুণীর সঙ্গে কথাবার্তা বেশ জমে উঠল। বিভিন্ন বিষয়ে অনেক গল্প হল। এক সময় আমার প্রতি তার বেশ দরদ উতলে উঠল। বলল, ‘ইশ ভাইয়া, আপনার কত কষ্ট করতে হয়। আপনি অফিস থেকে একটা গাড়ি পেলে যাতায়াত করতে কত সুবিধা হতো।’ আমি তখন কাঁচুমাচু মুখে বললাম, ‘এটা অবশ্য ঠিক বলেছেন। দুই একটা প্রমোশন পেলেই গাড়ি পেয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।’

মেয়েটি এবার বলল, ‘আপনার জন্য দোয়া রইল। আপনি যেন খুব দ্রুত প্রমোশন পেয়ে যান।’ মেয়েটির কথায় আমি তো খুশিতে গদগদ করছি। সত্যি কথা বলতে, মেয়েটির কথাবার্তায় আমি বেশ সম্মোহিত হয়ে গিয়েছিলাম।

অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা নারায়ণগঞ্জ শহরে পৌঁছে গেলাম। তখন মনে হচ্ছিল, নারায়ণগঞ্জের রাস্তা আরও দীর্ঘ হলে মন্দ ছিল না। আমরা দু’জনেই কালীবাজারের সামনে নামলাম। মেয়েটিকে বিদায় জানিয়ে চলে যাব, এমন সময় মেয়েটি খুব বিনয়ের সঙ্গে বলল, ‘ভাইয়া, আপনার মোবাইল ফোনটা কি একটু দেয়া যাবে, বাসায় একটা জরুরি কল দেয়া দরকার কিন্তু আমার মোবাইলের চার্জ শেষ।’

আমি তখন পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে দাঁত কেলিয়ে হেসে বললাম, ‘কোনো সমস্যা নেই, আপনি কথা বলুন।’ মেয়েটি ধন্যবাদ দিয়ে আমার মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করতে করতেই কালীবাজার ফেন্সি মার্কেটের একটা গলির সামনে দাঁড়াল। তখনও আমার নজরের ভেতরেই ছিল। সে কথা বলতে বলতে গলির আরও একটু ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর একেবারেই উধাও! আমি সারা মার্কেটসহ আশপাশে তন্নতন্ন করে মেয়েটিকে কোথাও খুঁজে পেলাম না আর। মিষ্টি মিষ্টি কথার ছলে আমাকে বোকা বানিয়ে ছাব্বিশ হাজার টাকা দামের আমার মোবাইলটা নিয়ে ওই মেয়েটি চম্পট দিল!

চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ, ঢাকা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম