Logo
Logo
×

বিচ্ছু

পাত্রের খালাতো ভাই

Icon

জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য

প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমার জীবনে প্রথম বারের মতো প্রেম এসেছে। ইংরেজিতে যাকে বলে, লাভ এট ফার্স্ট সাইট। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই প্রথম প্রেমটা আমার হয়েছে আমাকে সদ্য দেখতে আসা পাত্রপক্ষের একজনের সঙ্গে। সেই একজনটা পাত্র না। পাত্রের খালাতো ভাই!

সেজেগুজে চা নিয়ে ঘরে ঢুকেই আমি পাত্রের খালাতো ভাইকে দেখে হাই ভোল্টেজের একটা শক খেয়ে থ মেরে বসে আছি। পাত্র তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আমি তাকিয়ে আছি তার খালাত ভাইয়ের দিকে! চায়ের প্রথম কাপটা পাত্রের হাতে তুলে না দিয়ে তুলে দিলাম তার খালাতো ভাইয়ের হাতে।

প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার পর সবাই যখন ‘তোমরা দুজন কথা বলো’ বলে ইঙ্গিতপূর্ণ হাসি দিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেল তখনো আমার চোখ তার খালাতো ভাইয়ের দিকে। সেও দেখি চলে যাচ্ছে! সে থাকলে এমন কী হতো! প্রতিটা আলোচনায় একজন থার্ড আম্পায়ার থাকা ভালো। পাত্রের মাধ্যমে তার খালাত ভাইয়ের সঙ্গে একটু আলাপ করতাম!

সবাই চলে যাবার পর পাত্র দৃঢ় এবং লাজুক গলায় বলল, ‘তোমাকে তো আমার খুবই পছন্দ হয়েছে!’

আমিও গলার স্বর যথাসম্ভব দৃঢ় করে বললাম, ‘আমারো পছন্দ হয়েছে ভাইয়া! তবে আপনার খালাতো ভাইটাকে! সাদা শার্ট পরা উনাকে!’

প্রথমবার খালাতো ভাইটাকে দেখে আমি যেরকম হাই ভোল্টেজ শক খেয়েছিলাম এখন পাত্রও তার কাছাকাছি একটা শক খেল! প্রথম খানিকক্ষণ কথাই বলতে পারল না। তারপর রাগ, দুঃখ এবং হতাশার মিশ্রণে ফ্যাসফেসে গলায় বলল, ‘এইটা কী বলো?’

আমি দুঃখী গলায় বললাম, ‘প্রেম হয়ে গেছে ভাইয়া! প্রেম হয়ে গেলে তো কিছু করার নাই! মানুষের মন খুব বিচিত্র! কখন কাকে ভালো লাগে আগে থেকে বলা যায় না। আমার জীবনের প্রথম প্রেম আপনার খালাতো ভাই, আমার জীবনের শেষ অব্দি আমি আপনার খালাতো ভাইকেই ভালোবাসব। আমি আপনার খালাতো ভাইকে ছাড়া বাঁচব না!’

সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে রাগী গলায় বলল, ‘বারবার আমার খালাতো ভাই, আমার খালাতো ভাই করছ কী জন্য? ওর নাম অনি।’

আমি লাজুক গলায় বললাম, ‘বাহ, খুবই সুন্দর নাম! কিন্তু এখন আমার কী হবে ভাইয়া?’

‘ভাইয়া ডাকবা না, আমি তোমার ভাই না!’ বলে রেগেমেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল বেচারা।

রাগী হলেও আমার এক্স পাত্র ভাইয়াটার মন খুবই ভালো। সে বাড়ির সবাইকে সবকিছু খুলে বলল। তার খালাতো ভাইয়ের মুখ মুহুর্তে রাঙ্গা হয়ে উঠল। কিন্তু জোরপূর্বক মুখে হতাশার ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে করতে মাথা নাড়তে লাগল।

পাত্রের খালা অর্থাৎ অনির মাকে ভিডিও কল দেওয়া হলো। ভদ্রমহিলা সবটা শুনেই জোরে জোরে না সূচক মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, ‘অসম্ভব! যে মেয়ের পাত্রকে ছেড়ে পাত্রের ভাইয়ের সঙ্গে কয়েক মিনিটের চোখের দেখায় ট্র– লাভ হয়ে যায় ওই মেয়ের ভরসা কী দেখা যাবে বিয়ে করতে বরযাত্রী গেছে, সেখানে আরেকজনকে দেখে এই মেয়ের আবার প্রেম হয়ে যাবে! তারপর ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ের দিন আরেকজনকে দেখে আবার প্রেমে পড়বে। এভাবে চলতেই থাকবে!’

আমি বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মতো শব্দ করে কেঁদে বললাম, ‘মা! মা গো! আমার ক্যারেক্টার এত খারাপ না! আমার এমন রেকর্ড নাইগো মা! আমার জীবনে প্রথম প্রেম হয়েছে অনির সঙ্গে। দু‍ঃখজনকভাবে অনির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে বিয়ের জন্য দেখতে আসা পাত্রের মাধ্যমে। কিন্তু তা যদি নাও হতো, তবুও আমি অনিরই ছিলাম, অনিরই আছি, অনিরই থাকব।’

‘ওমা! এই মেয়ে দেখি আবার কথার পিঠে চ্যাটাং চ্যাটাং কথাও বলে! বাংলা সিনেমার ডায়ালগ ছাড়ে! এমন বউ তো আমি ঘরে আনব না! না ভাই! আমার একটাই ছেলে! দশটা-পাঁচটা হলে ভেবে দেখতাম!’

অনির মা ফোন কেটে দিলেন। আলাপ-আলোচনা, কান্নাকাটি, ঝগড়া, কথা কাটাকাটি এসবের মধ্যে দিয়ে কয়েকদিন কেটে গেল এবং এক শুভদিনে অনির সঙ্গে আমি পালিয়ে বিয়ে করে ফেললাম। ছেলের পক্ষে সাক্ষী হিসেবে সই করল আমার সেই এক্স পাত্র, অনির খালাতো ভাই। চোখেমুখে গভীর বিতৃষ্ণা কাজ করলেও শেষ পর্যন্ত সেই আমাদের ভালোবাসার মান রক্ষা করল।

আমাদের বিয়ের পাট তো এভাবেই চুকে গেলো কিন্তু অনির খালাতো ভাইয়ের শুনেছি আজ পর্যন্ত বিয়ে হয়নি! কারণ সে যখন পাত্রী দেখতে যায় একা যায়, সঙ্গে অন্য কোনো ছেলে বা পুরুষ রাখে না। এবং বিয়ের আলাপ এগোনোর আগেই উনি তার পাত্রীকে ছেলেদের সঙ্গে মিশতে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেন। এসব দেখে পাত্রী বিয়ে ভেঙে দেয়। অনেকেরই ধারনা ওনার এটা মানসিক রোগ! কিন্তু আমি জানি উনি মানুষটা খুবই ভালো। শুধু প্রথম পাত্রী দেখার অভিজ্ঞতাটা ওনার খুবই খারাপ!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম