|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক.
দীর্ঘ লকডাউনের পর গুলশানের এই পছন্দের কফি শপটায় এসে বসেছে টল। মুখে মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার। এরকম সাজে নিজেকে চোর চোর লাগে! এর চেয়ে ঘরে বসে গল্প লেখা ভালো। আসতে হয়েছে ওর এক ফ্যানের জন্য। ফেসবুকে পরিচয়। প্রিয় লেখককে নিজ হাতে রান্না করা কাচ্চি বিরানি খাওয়াবে। ম্যাশকে মিথ্যা বলেছে টল-মিডনাইট ø্যাকিংয়ের জন্য বিস্কিট আনতে যাচ্ছে। ম্যাশ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, যেন ঠিকমতো ডিসট্যান্সিং মেনে যায়। চিকি শুধু একটা রাগের চাহনি দিয়েছে।
রেস্টুরেন্টটা ফ্যানেরই রেস্টুরেন্ট। এতে সুবিধাই হয়েছে। ‘দ্য লাঞ্চ্যন’ গল্পের মতো ফ্যানের হাতে ছিল মারা খেতে হবে না। বাইরে গাড়িতে বিরানির হাঁড়ি রেখে রেস্টুরেন্টে আসবে ফ্যান। হাঁড়ি ধরেই আনবে। আর সেই হাঁড়ি দিয়ে কাচ্চি ফ্রিক চিকিকে সারপ্রাইজ দিয়ে ‘হাঁড়ি’য়ে দেবে টল।
একটা কফি নিয়ে বসে আছে টল। সঙ্গে নিজের দুটো বই। ফ্যান গিফটটা চেয়েছে। এ যেন বইয়ের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি! ভাবছিলো টল। ভাবতে ভাবতেই ফ্যান এসে হাজির হলো। খট খটিয়ে পেন্সিল হিলের আওয়াজে শরীরের ত্রিভঙ্গ ভাঁজে ঢেউ তুলে টলের টেবিলে এসে বসে এক আবেদনময়ী। চোখ থেকে গলা পর্যন্ত মাস্ক। ক্যাসাব্লাঙ্কা লিলি পারফিউমে পুরো কফি শপ মৌ মৌ করে দিয়েছে ফ্যান। অভিজাত লেডি। এরই মধ্যে ম্যানেজার আর ওয়েটারদের তটস্থ ‘সালাম ম্যাডাম’-এ টল বুঝে নিয়েছে- ইনিই সেই ফ্যান। টল জানত যে ফ্যান একজন ছেলে। পুরোদস্তুর ভদ্রলোক। কিন্তু...
ফ্যান : হ্যালো, আপনিই তো টল সাহেব?
টল : ইয়ে হ্যাঁ। কিন্তু...
ফ্যান : কোনো কিন্তু ফিন্তু নেই। কেন, পছন্দ হয়নি আমাকে?
চুল সামনে থেকে এক ঝাঁকিতে পেছনে নিয়ে যায় ডিম্পল কাপাডিয়া জুনিয়র।
টল : না মানে, পছন্দের বিষয় না। আসলে...
ফ্যান : কোনো আসল-নকল নেই। আপনার বিরানির হাঁড়ি গাড়িতেই আছে। যাবেন নাকি?
উদ্দেশ্যপূর্ণ চোখের ঘুরানি ফ্যানের।
টল : কোথায়?
ফ্যান : লং ড্রাইভে। গাজীপুরে আমাদের একটা রিসোর্ট আছে। করোনার জন্য লোকজন বিদায়। একেবারে ফাঁকা। ভয় নেই, আমি করোনা মুক্ত হা হা হা!
ভীষণ বিব্রত হয় টল।
ফ্যান : আপনি তো বেশ শাই টাইপ। কাম অন ম্যান! নাকি করোনা ভীতি? আমি আপনার থেকে তিন ফুট দূরেই আছি হা হা হা!
বলেই হাত দিয়ে ডিসট্যান্স মাপতে শুরু করে আবেদনময়ী। আর মাপার অজুহাতে টলকে একটা আলতো ধাক্কা দেয়। ধক করে ওঠে টলের বুক। এর মধ্যে দু’বার গায়ের শাল খুলে আবার ঠিক ঠাক মতো পরেছে মেয়েটা। এটাও উদ্দেশ্যপূর্ণ মনে হয়েছে টলের। একে বই দিবে কি না ভাবছে। কারণ যে রকম গায়ে পড়া স্বভাব, বই দিলে বই না পড়ে মাথার ওপর পড়বে। ওয়েটারের ‘ম্যাডাম কিছু দিবো’-এর উত্তরে হাতে মাছি সরানোর ভঙ্গিতে না করে। আর সঙ্গে সঙ্গে টলের ফোনে টুং করে মেসেজ আসে। মেসেজ পড়ে ভয়ংকরভাবে চমকে ওঠে। ফ্যানের মেসেজ- আমি রেস্টুরেন্টে ঢুকছি স্যার। অথচ আবেদনময়ী ফ্যানের হাতে ফোন নেই!
দুই চোখে টলকে অপলক মাপছে। মেসেজ করলো কীভাবে? ভাবতে না ভাবতেই তটস্থ এক ভদ্রলোক হনহনিয়ে ভেতরে ঢোকে। হাত ও চোখ তার চলমান মোবাইলে। টলদের টেবিলে এসেই ইতস্তত ভাব। হাবেভাবে মনে হচ্ছে ভাব করার ইচ্ছা। ফাঁকা রেস্টুরেন্টে এই মুহূর্তে শুধু টলরা-ই আছে।
টল : কিছু বলবেন?
ভদ্রলোক : ইয়ে, আপনি কি লেখক মিস্টার ট...
টল : জি, টল।
ভদ্রলোক : আমি আলবাব। আপনার ফ্যান। ওই যে কাচ্চি নিয়ে আসার কথা। কাচ্চি গাড়িতে আছে স্যার। সরি ফর দ্য লেইট।
ভীষণ চমকে ওঠে টল।
টল : হোয়াট? ফ্যান আলবাব? কাচ্চি? তাহলে ইনি...
আবেদনময়ী ফ্যান আস্তে করে হাত তুলে ‘আস্তে’ বলে নিজেই আস্তে করে পুরো মাস্ক খুলে ফেলে। দ্বিতীয়বার চমকে ওঠার পালা টলের। চিকি? সামলে নেয়। সীন ক্রিয়েট করা যাবে না অরিজিনাল ফ্যানের সামনে। স্বাভাবিক হতে কয়েক সেকেন্ড সময় নেয়। বলে, ‘ইনি হচ্ছে আমার...।’ বুঝে নেয় ফ্যান। লাজুক হেসে বলে-বুঝেছি, বলা লাগবে না স্যার। টলের কাছ থেকে বই গিফট নিয়ে আর সেলফি তুলে বেরিয়ে আসে ওরা।
দুই.
গাড়ি চালাচ্ছে টল, পাশে চিকি, পেছনের সিটে আলবাবের কাচ্চির হাঁড়ি। ট্রেসি চ্যাপম্যানের ‘ফর মাই লাভার’ গানটা বাজছে।
টল : এ কাজ করলে কেন?
চিকি : গতকাল তুমি যখন ছাদে গেছিলে ফোন ফেলে, আমি মেসেজটা দেখেছিলাম। ওই ঢ্যাপশা লোকের নাম টুকটুকি হয় কীভাবে? প্রোফাইল পিক-ও তো মেয়ের!
টল : টুকটুকি ওর বউ। ওরা একটাই আইডি ইউজ করে। জিজ্ঞেস করলেই পারতে। ফলো করে আসার দরকার ছিলো না। স্যারকে এখন কী বলব?
চিকি : সেটা আমি বলব। ঢ্যাপশা বউ ছাড়া এসেছে দেখে কি মন খারাপ হয়েছে?
টল : তা একটু হয়েছে। অসুবিধা নেই। আমার পাশে তো ঢ্যাপশি আছেই।
টপ গিয়ারে গাড়ি টান মারে
টল।
