Logo
Logo
×

বিচ্ছু

১৯ মার্চ বিশ্ব নিদ্রা দিবস

ঘুমের দোকানে একদিন!

Icon

রোহিত হাসান কিছলু

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঘুমের দোকানে একদিন!

হঠাৎ করে একদিন মোখলেস সাহেব টের পেলেন, তার ঘুমটা গুম হয়ে গেছে! অনেক চেষ্টা করেও তিনি এখন আর দু’চোখের পাতা এক করতে পারেন না। সারা রাত এপাশ-ওপাশ করেন।

একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্য তিনি কত কিছু করেন! মোবাইল টেপেন, টিভি দেখেন, বই পড়েন! কিন্তু কিছুতেই তার কোনো উপায় হয় না। ঘুম ধরা দেয় না কিছুতেই।

এভাবেই যখন মোখলেস সাহেবের দিন কাটছে, তখন তিনি শুনলেন, ঘুম নিয়ে নাকি আর টেনশন নেই! এই শহরে এখন ঘুম বিক্রি হয়! মোখলেস সাহেব আর দেরি করলেন না। ঠিকানা খুঁজে নিয়ে চলে এলেন ঘুমের দোকানে!

এসে দেখলেন, তিনি যা শুনেছেন সবই ঠিক। আসলেই এখানে ঘুম বিক্রি হয়। তাও একটা বা দুইটা না, হরেক পদের ঘুম সাজানো আছে দোকানে।

মোখলেস সাহেব সেলসম্যানকে ডেকে বললেন, ‘ভাই, আমার ঘুম লাগবে। অনেক দিন আরাম করে ঘুমাতে পারি না।’

সেলসম্যান হাই তুলতে তুলতে বললেন, ‘স্যার, কেমন ঘুম লাগবে আপনার? আমাদের এখানে হরেক রকমের ঘুম আছে!’

‘আমি তো এই প্রথম ঘুমের দোকানে এসেছি। তাই বুঝতে পারছি না, কোন ঘুমটা আমার লাগবে। আপনি যদি একটু সাহায্য করেন।’

সেলসম্যান মোখলেস সাহেবকে নিয়ে গেলেন বড় একটা শেলফের কাছে। এখানে প্রতি তাকে সুন্দর করে সাজানো নানা ধরনের ঘুম! সেলসম্যান একটা একটা করে ঘুম দেখিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘এই যে স্যার, এই ঘুমটা দেখছেন, এর নাম পাতলা ঘুম! ঘরের মধ্যে আলপিন পড়ার শব্দ হলেও এ ঘুম ভেঙে যাবে!’

মোখলেস সাহেব বললেন, ‘না ভাই, এ ঘুম আমার চাই না।’

‘তাহলে এ ঘুমটা দেখুন। এটি হচ্ছে কাজ ফাঁকি ঘুম! মানে আপনি যখন কোনো কাজ করবেন, তখন এ ঘুমটা চলে আসবে। বিভিন্ন অফিসের লোকদের কাছে এ ঘুমের খুব চাহিদা! দামও তাই একটু বেশি!’

‘নাহ! এ ঘুমেও চলবে না আমার। আমি ফাঁকিবাজ না।’

সেলসম্যান এবার মোখলেস সাহেবকে আরেকটা শেলফের কাছে নিয়ে গেলেন। মোখলেস সাহেব বললেন, ‘এটা কোন ঘুম?’

‘এটা কাজ ফাঁকি ঘুমের শুরুর ভার্সন! মানে পড়ালেখা ফাঁকির ঘুম! এই ঘুম স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয়!’

মোখলেস সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আমাকে আপনার কোন দিক থেকে স্কুল-কলেজের ছাত্র মনে হয়? ভালো একটা ঘুম দেখান তো।’

সেলসম্যান এবার মোখলেস সাহেবকে অন্য একটা শেলফের সামনে নিয়ে এলেন। তারপর একটা ঘুম দেখিয়ে বললেন, ‘এটা কুম্ভকর্ণের ঘুম! বোমা ফাটলেও এ ঘুম ভাঙবে না! আপনার ভেতরে একবার এই ঘুম ইন্সটল করলে, কবে জাগবেন তা কেউ বলতে পারে না!’

‘না ভাই, এ ঘুম শরীরের জন্য ক্ষতিকর! দেখা গেল, বাসায় আগুন লেগেছে তখনও আমি ঘুমে। জীবনটাই চলে যাবে!’

‘ঠিক বলছেন স্যার। তবে এ ঘুম বেকারদের কাছে খুব পপুলার।’

‘ধুর! আমাকে কি আপনার বেকার মনে হয়? ভালো একটা ঘুম দেখান, যেটা আমার সঙ্গে যায়।’

সেলসম্যান এবার কাকে যেন ফোন করলেন, ‘আচ্ছা, আমাদের ওই ঘুমটা আছে? কী, একটাও নেই! দেখেন না একটু ম্যানেজ করে। একজন খুব করে চাইছেন। কী বললেন, একটাই আছে। ওকে, ওটা বুক করে ফেলুন। জলদি শোরুমে নিয়ে আসুন।’

সেলসম্যানের কথা শুনে মোখলেস সাহেব খুব আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলেন, ‘এটা কোন ঘুমের কথা বলছেন? যার এত চাহিদা?’

‘তার আগে স্যার আপনি আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দেন।’

‘কী প্রশ্ন?’

‘স্যার, আপনার কি সাহস কম?’

‘হ্যাঁ, কম। তবে আগে অনেক বেশি ছিল।’

‘কোনো অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা করে, কিন্তু সাহসের জন্য কি পারেন না?’

‘একদম ঠিক।’

‘স্যার, সব মেনে নিতে নিতে এখন সব কিছুর সঙ্গে কি আপস করা শিখে গেছেন?’

‘হুম, আপস করেই তো বেঁচে আছি।’

‘পাওয়ারফুল লোকদের তেল দিতে পছন্দ করেন?’

‘তেল না দিলে তো আমার খেল খতম হয়ে যাবে!’

‘কেউ বিপদে পড়লে চোখ বন্ধ করে চলে আসেন?’

‘অবশ্যই! নয়তো দেখা যাবে, আমি নিজেই বিপদে পড়ে গেছি!’

‘তাহলে স্যার, এই ঘুমটাই আপনার জন্য পারফেক্ট। এই ঘুমটার এখন অনেক চাহিদা!’

মোখলেস সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তার আর তর সইছে না। তিনি বললেন, ‘কই সেই ঘুমটা? নাম কী তার?’

সেলসম্যান হেসে বললেন, ‘স্যার, আপনার জন্য সরাসরি ফ্যাক্টরি থেকে ঘুমটা আনা হচ্ছে। আসলে এতই চাহিদা, ঘুমটাকে ডিসপ্লেতে রাখতেই পারি না। ফ্যাক্টরি থেকেই সব বিক্রি হয়ে যায়!’

‘আচ্ছা, নাম কী ঘুমটার? এই ঘুমের উপকারিতা কী?’

‘ঘুমটার নাম- জেগে জেগে ঘুম! এর উপকারিতার শেষ নেই। এ ঘুম আপনার কাছে থাকলে দুনিয়ার কোনো সমস্যাই আর সমস্যা না! কারণ আপনি তখন জেগে জেগে ঘুমিয়ে থাকবেন। আর উপকারিতার কথা বলছেন? এ ঘুমে থাকলে কেউ আপনাকে জাগাতে পারবে না!’

অতঃপর মোখলেস সাহেব এক পিস ‘জেগে জেগে ঘুম’ কিনে বাড়ির পথ ধরলেন। তার মুখে হাসি। অনেক দিন পর বেশ উপকারী একটা ঘুমের সন্ধান পেয়েছেন! এবার এই ঘুমটিকে সম্বল করে বাকি জীবনটা সুখে-শান্তিতে কাটিয়ে দেবেন তিনি।

ঘুমের দোকান

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম