Logo
Logo
×

বিচ্ছু

নিখোঁজ সংবাদ!

খোঁজ নেই মানে নিখোঁজ নই!

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

খোঁজ নেই মানে নিখোঁজ নই!

আত্মগোপনে যাওয়ার পর মোসাদ্দেক হোসেনের উপলব্ধিতে এলো, নিজেকে যতটা চালাক ভাবত এদ্দিন, সে আদতে আরও বেশি চতুর! নইলে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরার পর এতক্ষণে তার কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা ছিল। করোনার শুরুতে বিদেশফেরতরা যেভাবে ‘কোয়ারেন্টাইন ভোগান্তি’র শিকার হয়েছিলেন সেসব তার জানা! এ সর্বগ্রাসী যে পরে ‘ওমিক্রন’ নামে আবির্ভূত হবে জ্যোতিষীও বোধহয় কখনো ভাবেননি!

‘কলঙ্ক’ মাখবে না বলে বিমানবন্দর থেকেই গায়েব হয়েছে মোসাদ্দেক। সে জানে, এ দেশে সবই সহজ! পত্রিকায় ‘দক্ষিণ আফ্রিকা ফেরত ২৪০ জন নিখোঁজ’ শিরোনাম পড়ে যুগপৎ আনন্দিত ও ব্যথিত হলো সে। আনন্দ-বিষাদের মিথস্ক্রিয়া শেষে বুঝতে পারল, বর্তমানের আলোচিত ব্যক্তি সে এবং তারাই। খবরটা পড়া শেষে নৈরাশ্য আচ্ছন্ন করল তাকে। সংখ্যার হিসাবে পরিচিত না হয়ে যদি নামটাও ছাপা হতো-কী দারুণই না হতো! লাখো মানুষ লহমায় জেনে যেত বুদ্ধিমান একজন মানুষের নাম!

পরক্ষণেই প্রচারাকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এলো। নাম জানলে তো ছবিও ছাপা হবে। তখন রাস্তার লোকজন ‘একে ধরিয়ে দিন’ বিজ্ঞাপনে প্রচারিত ছবির লোক হিসাবে সন্দেহ করবে। তারচেয়ে সংখ্যার হিসাবেই নাচিয়ে নেওয়া যাক। বাঘা বাঘা লোকের ঘুম হারাম না হলেও মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছেন ‘পলাতক’ ইস্যুতে। নিজেকে ভিআইপি মনে হলো মোসাদ্দেকের। বুদ্ধি থাকলে আলোচিত হওয়া যায়!

মোসাদ্দেকের বন্ধু জালাল ফুটপাতে পোশাকের ব্যবসা করে। দেশে ফিরলে একদিন বন্ধুর বাসায় থাকে। যথারীতি এবারও হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে জালালের বাসায় উঠল। পরিকল্পনা ও ঐতিহ্যের কথা ফাঁস করেনি কোথাও। বিমান থেকে নামা এ পর্যন্ত সবখানেই ভুল ঠিকানা দিয়েছে। তবে ভুল করে সঠিক ফোন নম্বরটা বলেছে। সিমটা বন্ধ রেখে জালালকে দিয়ে কিনিয়েছে নতুন সিম। আলাপ-বিলাপে বাধা রইল না।

সকালের চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে জালাল বলল, ‘তুই যে বারবার মোসাদ্দেক বলছিস ফোনে, কেউ যদি জেনে ফেলে!’

বিরক্ত মোসাদ্দেক বলল, ‘দেশে কি এই নাম একটাই! আরও আছে না?’

জালাল গাঁইগুঁই করে করে, ‘সাবধানতার মার নেই।’

‘আমাকে শেখাচ্ছিস সাধারণ জ্ঞান? আফ্রিকা মহাদেশে ঘোড়ার ঘাস কাটিনি। মানুষ চরিয়েছি। জানিস না তুই?’

জালাল কিছুটা জানে। দেশের অন্তত দশজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে মোসাদ্দেক; বিদেশে নেবে বলে। শেষপর্যন্ত পেরেছে দুই একজনকে নিতে। কিন্তু টাকা হাপিস করে দিয়েছে দূর-কৌশলে।

তর্কে পারেনি বটে, জালালের মাথায় খেলল ব্যবসায়িক বুদ্ধি। ইতস্তত করে বলল, ‘তুই রাজি থাকলে এক কাজ করতে পারি। ওমিক্রন রোগী দেখানোর আয়োজন করি? জনপ্রতি এক হাজার টাকা নেব।’

‘মানে?’

‘তোর মনে থাকার কথা; করোনাকালে বিদেশফেরতরা কোয়ারেন্টাইনে থাকত, তাদের বাড়ির সামনে লোকজনের ভিড় জমত। গেটে দাঁড়িয়ে লোকজন দেখার চেষ্টা করত ভেতরে কী আছে!’

‘এখন তো মানুষের কৌতূহল নেই। রোগীও অধরা।’

‘মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। ওমিক্রন রোগী হিসাবে তোকে দেখাতে পারি। তবে অবশ্যই গোপনীয়তা রক্ষা করে।’

‘এ সুযোগে আমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাক আর কী!’

‘বলেছি তো চুপে-চাপে কাজ সারব।’

নিজেকে সামলাতে পারল না মোসাদ্দেক। রাগান্বিত গলায় বলল, ‘প্রদর্শনীর আয়োজন করলে তুই হয়তো কয়েক লাখ টাকা কামাবি। লোকজনও আফ্রিকাফেরত চিড়িয়া দেখার সুযোগ পাবে। তারা শেষপর্যন্ত এখানে-ওখানে গল্প করে বেড়াবে- ওমিক্রন দেখেছি!’

জালাল বাদানুবাদে গেল না। ইতোমধ্যেই জেনেছে, প্রশাসন নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে আফ্রিকা-ফেরতদের খুঁজছেন। পানির বদলে খাচ্ছেন বেলের জুস। ব্যর্থ পরিকল্পক জালাল চলে যায় দোকানে। ভেবেছিল আজ দোকান খুলবে না। কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে গল্পে মজা পাচ্ছে না। রমরমা ব্যবসার এমন সুযোগ হাতছাড়া করে কোন বোকা!

জালাল বেরিয়ে যেতেই মোসাদ্দেক বউকে কল করে। বাড়িতে থাকা বউকে বলে, ‘শোনো বউজান, আমি দেশে ফিরেছি। কিন্তু এখন বাড়িতে ফিরব না। মনে করো নিখোঁজ সংবাদ! আমার বিস্তারিত খবর পাবে টেলিভিশনে, পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে।’

গলায় গোল মরিচের ঝাল ঢেলে সুরভী বলে, ‘তুমি কি নতুন বিয়া করছ, সত্য কইরা কও। বউয়ের নাম কী, বাড়ি কই? না কইলে কিন্তু আমি থানায় চললাম এখনি!’

মোসাদ্দেকের সব উত্তেজনা ও বীরত্বে কে যেন ঠান্ডা পানি ছুড়ে দেয়। মনে হলো নিজেকে চৌকস ভেবেছিল হুদাই। বউকে এভাবে সত্য কথাটা বলে দেওয়াটা কোনোভাবেই বিচক্ষণতার পরিচায়ক নয়! এরচেয়ে বরং দেখা দিয়েই নিখোঁজ থাকা

ভালো ছিল।

নিখোঁজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম