Logo
Logo
×

বিচ্ছু

ক্রেতা বনাম বিক্রেতা

(একটি লাইভ টক শো)

Icon

মাসুদ রানা আশিক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০১৮, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ক্রেতা-বিক্রেতা সম্পর্কটি চিরকালই সাপে-নেউলে। রমজান মাসে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এ সম্পর্কটি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় বিচ্ছু আয়োজন করেছে একটি বিশেষ টক শো। অতিথি হিসেবে উপস্থিত

হয়েছেন একজন ক্রেতা এবং বিক্রেতা প্রতিনিধি। তারপর কী ঘটেছে দেখুন-

সঞ্চালক : হ্যালো, ব্রাদার অ্যান্ড সিসটাররা, যারা এ মুহূর্তে আমাদের এ লাইভ অনুষ্ঠান দেখছেন তাদের সবাইকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা। আমরা আজ আমন্ত্রণ অথবা নিমন্ত্রণ জানিয়েছি দেশসেরা দুই ব্যক্তিত্বকে। যাদের আপনারা নাও চিনতে পারেন। তবে আমরা বাজারে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে এ দুই ব্যক্তিকে পাকড়াও করতে সমর্থ হয়েছি। তারা হলেন বিশিষ্ট ক্রেতা এবং বিশিষ্ট বিক্রেতা।

আমরা প্রথমেই যাবো বিক্রেতার কাছে। বিক্রেতা ভাই, এই যে আপনাকে এখানে আনা হল তাতে আপনার অভিমত বা মতামত কী? এই যে রোজা আসতেই পণ্যের দাম বেশি হচ্ছে কেন সেটা কি বলতে পারবেন?

ক্রেতা : বিক্রেতার কাছে পরে আসেন। আগে আমি বলি। আপনে টক শোয়ের কথা বললেন। একটু মিষ্টি শো করেন না। কথাও মিষ্টি হইব। সঙ্গে একটু মিষ্টি হলে ভালোই হতো।

সঞ্চালক : আচ্ছা, আপনাদের জন্য মিষ্টির ব্যবস্থা করা হবে। এবার বিক্রেতা ভাই, আপনার মতামতটা কাইন্ডলি যদি জানাতেন।

বিক্রেতা : রাখেন মিয়া মতামত! আমরা তো বহুত বেকায়দায় আছি। জানেন, দিলডা কষ্টে অনবরত ফুসফাস করে।

সঞ্চালক : আমরা তো সেটাই জানতে চাইছি। কেন আপনাদের এত কষ্ট?

বিক্রেতা : শোনেন সঞ্চালক ভাই, ক্রেতার জন্য নাকি অধিকার দিবস আছে। ওই যে ক্রেতা অধিকার দিবস। কিন্তু দেখেন বিক্রেতা অধিকার দিবস নেই। আপনেই বলেন দিলডা কাঁদব না তো হাসব? অথচ রোজার সময় দাম বেড়ে যাওয়াতে দোষ হয় বিক্রেতার। আমরা কি ইচ্ছা করে দাম বাড়াই বলেন? পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে, তাই আমরাও বাড়াই। অধিকার দিবসও নেই। দোষও আমাদের। যত দোষ এই বিক্রেতা ঘোষ।

ক্রেতা : সঞ্চালক ভাই, আপনার অপজিট সাইটে অবস্থানরত বিক্রেতা শুধু নিজেদের অধিকার নেই বলেই সাফাই গাইলেন। কিন্তু আপনারা কী জানেন, তারা আমাদের সবসময় ঝাড়ির ওপর রাখেন। গতকালের একটা ঘটনা শুনাই আপনাকে। বেশ চপলতার সহিত বাজারে মাছ কিনতে গেছিলাম। দেখি একটা মাছ আমার দিকে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। দাম জিজ্ঞাসা করলাম। বিক্রেতা বলে হাজার টাকা কেজি। বলেন এটা কি মগের মুল্লুক? হাজার টাকা চাইল আর আমি দিয়া দিলাম! আমিও দাম হাঁকালাম আধাআধির সামান্য কম। ব্যাস, বিক্রেতা ক্ষেপে ফায়ার। বলে ওই টাকা দিয়া নাকি চিনাবাদাম চিবান লাগবে। বলেন কী অপমান! মাছের স্বাদ বাদামে! এটা সম্ভব, বলেন? আমি ক্রেতা। আমার অধিকারের বলে যে কোনো দাম বলতেই পারি।

বিক্রেতা : আপনে কিন্তু লাইন ক্রস করে ফাউল টক করে চলেছেন। আমার মতে বিক্রেতারা দিলখোস মানুষ। তারা আপনাদের জন্যই বিক্রি করে। আমি বিক্রেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে বলতে চাই, আপনাদের মতো ক্রেতাদের জন্য বিক্রেতারা আজ নিষ্পেষিত, অবহেলিত। তারা আজ আপনাদের দ্বারা লাঞ্ছিত, অপমানিত।

ক্রেতা : খামোস বিক্রেতা, মুখে লাগাম টেনে ধরুন। পলিটিশিয়ানদের মতো বেফাঁস কথা বলেই চলেছেন আপনি। আমি বুঝতে পারছি, কুচক্রি মহল আপনাকে বিক্রেতাদের প্রতিনিধি হিসেবে পাঠিয়েছে। আপনাদের মতো বিক্রেতাদের জন্যই আমরা পথে-ঘাটে, মাঠে প্রতিনিয়ত অপমানিত হচ্ছি। আপনারা ফরমালিন দেন। সেটা খেয়ে আমরা পটল তোলার দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছি। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর পেয়েছি, আপনারা নাকি মাঝে মাঝে ওজনেও কম দেন।

বিক্রেতা : মিসটেক করবেন না। আমরা পথে-ঘাটে কিংবা মাঠে সবজি বা মাছের পসরা নিয়ে বসি না। আমরা বসি বাজারে। আর আপনে পটল তুলবেন না মুলা তুলবেন সেটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। সে বিষয়ে আমাদের বলে লাভ নেই। বরং এটাই বলতে হয় আপনাদের মতো নালায়েক ক্রেতার জন্যই আমরা শান্তিমতো ব্যবসা করতে পারি না।

সঞ্চালক : প্লিজ, আপনারা মাথা কুল রাখুন। প্রয়োজনে ঠাণ্ডা পানীয়র ব্যবস্থা করা হবে আপনাদের জন্য।

ক্রেতা : খ্যাতা পুড়ি আপনার ঠাণ্ডার। বিক্রেতা আমার সঙ্গে হট আচরণ করেছেন। ভাগ্য ভালো উনার। উনি আপনার অপজিট সাইটে অবস্থান করছেন।

বিক্রেতা : আপনে কিন্তু কথা বেশি বলে ফেলছেন। আমরা কী পারি সেটা নিশ্চয় আপনি জানেন না।

সঞ্চালক : দেখুন ভাইয়েরা, এটা লাইভ টক শো। আপনারা উত্তেজিত হবেন না। দেশের মানুষ এটা দেখছে।

ক্রেতা : দেখতে দেন। তাইলেই মানুষ বুঝব বিক্রেতারা কত বেত্তমিজ!

বিক্রেতা : আমারে বেত্তমিজ কইলি, তোরে আজ আমি খাইছি!

ক্রেতা : আমারে তুই কী খাইবি! আমিই তোরে খামু!। সঞ্চালক ভাই, আপনে কুইক সাইড লন, আইজ ওরে তামা তামা কইরা ফালামু।

সঞ্চালক : কী মুশকিল! শেষ ম্যাষ আমারেই দুজনা খাইয়া ফালায় কিনা বুঝতে পারছি না। দর্শক বিদায়। আর আপনাদের লাইভ দেখাতে পারছি না। পরিস্থিতি ঘোলাটে, উত্তপ্ত। তপ্ত আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি। কী ঘটে বোঝা যাচ্ছে না। যদি সুস্থ থাকি দেখা হবে আগামী অনুষ্ঠানে। হ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম