রম্য রচনা
দাম্পত্য জীবন জটিল জীবন-৪
সাদিকুল নিয়োগী পন্নী
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক.
বিয়ের প্রতি চরম অনীহা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই আবিরের। নিজেকে উদাসীন প্রমাণের জন্য তিনি ক্যাম্পাসে থাকতেন অগোছালো ভাবে। চুল, দাড়ি কাটতেন না সময়মতো। ইচ্ছা করেই পোশাক পরিচ্ছেদের মধ্যে দৈন্য ভাব ধরে রাখতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যায় তিনি হাজির হতেন চে গুয়েভারা, লেনিনের মতো বিদ্রোহী ভাব নিয়ে। ভাইকে একাধিক মেয়ের সঙ্গে ঘুরতে দেখলেও প্রেমের কথা স্বীকার করতেন না। বিয়ের কথা বললে মুচকি হাসি দিয়ে বলতেন, আজীবন কয়েদি হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। সংসারী মানুষ কখনো বিদ্রোহী হতে পারে না। বাসর ঘরেই তাদের আত্মার মৃত্যু ঘটে!
ভাইয়ের কথা শুনে ক্যাম্পাসের অনেকে বিয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে স্বাধীন জীবন বেছে নিয়েছিল। কেউ কেউ প্রেমিকা ছেড়ে বিদ্রোহী হওয়ার চেষ্টা করেছিল।
দুই.
কদিন আগে দেখি আবির ভাইয়ের ফেসবুক প্রোফাইলে ক্যাম্পাসের তাসমীম আপুর সঙ্গে ছবি। ভাইয়ের পরনে স্যুট-টাই। আপুর নতুন শাড়ি। হঠাৎ দৈন্য দশা থেকে বাদশাহী ভাব আবির ভাইয়ের চেহারায়। আমি আতঙ্কিত হয়ে ফোন দিলাম তাকে।
‘ভাই, আপনার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে মনে হয়। কেউ এডিট করে তাসমীম আপুর সঙ্গে আপনার ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে দিয়েছে।’
আমার কথা শুনে আবির ভাই হাসি দিয়ে বললেন, ‘তুমি কিছু জানো না?’
আমি চমকে বললাম, ‘কী বিষয়ে ভাই?’
‘আরে আমি বিয়ে করেছি। তোমাদের তাসমীম আপু এখন আমার স্ত্রী।’
‘তাহলে আপনার বিদ্রোহী জীবনের কী হলো?’
‘প্রেম করতাম। শেষে তোমার আপু ছাড়েনি। আমি শর্ত দিয়েছি দাম্পত্য জটিলতায় আমাকে যেন জড়ানো না হয়।’
‘পারবেন তো?’
‘বিয়ের দিক থেকে তুমি আমার সিনিয়র। সমস্যায় পড়লে তোমার পরামর্শ নেবো।’
আমি এমন বিদ্রোহী ভাইয়ের পতনের কথা তার মুখে শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে ফোন রেখে দিলাম।
তিন.
আবির ভাইয়ের টাইম লাইনে এখন একক কোনো ছবি নাই। প্রতিদিন তিন-চারটা করে ছবি আপলোড হয়। বউয়ের হাত ধরা, আঁচল ধরা, হাঁটু গেড়ে বসে প্রেম নিবেদন-এমন নানা ঢঙয়ের ছবিতে সয়লাব তার ফেসবুক। প্রথম দিকের ছবিতে ভাইয়ের হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখা যেত। ইদানীং সব ছবিতে তার চেহারায় হতাশার ছাপ। আমি নিজ থেকে কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস পাইনি। সেদিন মাঝরাতে ফোন দিলেন আবির ভাই।
বললাম, ‘কী অবস্থা ভাই? এতো রাতে হঠাৎ ফোন?’
‘ভাইরে বড় বিপদে আছি। তোমাকে ফোন দিবো সে সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছি না।’
‘কেন, কী হলো ভাই?’
‘দাম্পত্য জীবনের মহা জটিলতায় পড়েছি। আমাকে পরামর্শ দাও।’
‘সমস্যার কথা বলেন। দেখি কিছু করতে পারি কিনা।’
‘আমাকে ব্যাচেলরের মতো জীবনযাপন করতে দেবে এ শর্তে বিয়ে করেছিলাম। তোমার আপু তাতে রাজি হয়েছিল। শুরুতে কদিন ভালো যাচ্ছিলো। তারপর থেকে শুরু হলো নজারদারি-খবরদারি। আমি ছবি তুলতে চাই না। সে জোর করে আমাকে দিয়ে নানা ঢঙে ছবি তোলাচ্ছে। তার চাপে আমি সে ছবি নির্লজ্জের মতো ফেসবুকে আপলোড করতেছি।’
‘এটা বড় কোনো সমস্যা না ভাই।’
‘হুম, এটা মেনেও নিয়েছিলাম। ইদানীং নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাসায় আমার জন্য একটা পৃথক রুম নিয়েছিলাম। নিজের মতো সময় কাটাতাম সেখানে। মাঝে মধ্যে বারান্দায় গিয়ে বসে থাকতে ভালো লাগতো। আশপাশের বাসার মেয়েরা ভাবতো আমি ব্যাচেলর। তারা ইশারায় নানা কিছু বলত আমাকে। তোমার আপা হয়তো সেটা টের পেয়েছে। এখন প্রতিদিন সে আমার রুমের বারান্দায় তার জামা-কাপড় শুকাতে দেয়।’
‘তাতে সমস্যা কী?’
‘তোমার আপার মূল উদ্দেশ্য আমি বিবাহিত সেটা প্রমাণ করতে চায়। যেদিন থেকে সে কাপড় শুকাতে দেওয়া শুরু করল, সেদিন থেকেই আশপাশের বাসার সব দরজা-জানালায় পর্দা পড়ে গেল। এখন বারান্দায় বসে ইটপাথর ছাড়া কিছু দেখতে পাই না।’
‘তাহলে বাইরে ব্যাচেলর কারও সঙ্গে একটা সিট নেন ভাই। মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে থাকবেন।’
‘মরার বুদ্ধি দিচ্ছো! বিয়ে করে এমনিতেই আধমরা। এসব করে ধরা পড়লে জীবনটা হারাতে হবে। এ বলে আবির ভাই ফোন রেখে দিলেন।’
