Logo
Logo
×

বিচ্ছু

ধারাবাহিক রম্য পর্ব-৫

দাম্পত্য জীবন জটিল জীবন

Icon

সাদিকুল নিয়োগী পন্নী

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২২, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমাদের অন্যতম অবিবাহিত বন্ধু হাসান বিয়ে করতে যাচ্ছে। আমরা সবাই খুশি। দীর্ঘদিন পর তার একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হতে যাচ্ছে। রোগে পড়ে কষ্ট ভোগ করার থেকে একেবারে চলে যাওয়া ভালো। হাসানের অবস্থা প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মতো। সকালে কান্না, বিকালে হাসি। শুরুতে তার কষ্টে আমরা কাতর হয়েছি, পাথর হয়েছি। আমাদের অতি আগেবী বান্ধবী মনি ফেসবুকে হাসানের ছ্যাঁকাসংক্রান্ত স্ট্যাটাস দেখে শোকে একদিন খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিল। পরদিন হাসানের রোমান্টিক স্ট্যাটাস দেখে তার মন আরও খারাপ হয়ে গেল। অকারণে বন্ধুর জন্য শোক পালনের অনুশোচনায় মনি আরও একদিন বিরত থাকল জল খাবার থেকে।

দুই.

রাজা-বাদশাহদের বিয়ের আয়োজন দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। হাসানেরটা দেখে দুধের সাধ ঘোলে মিটল। বিয়ের অংশ হিসাবে সে রূপচর্চা শুরু করল বিয়ের সাত দিন আগে থেকে। গুলশানে দুইটা জেন্টস পার্লারও বুকিং দিল এক সপ্তাহের জন্য। আমি জিজ্ঞাস করলাম, ‘এত কিছুর প্রয়োজন ছিল কী?’

হাসান বলল, ‘হবু বউয়ের আদেশ, অমান্য করার সাধ্য নাই।’

‘বিয়ের আগেই সব টাকা তো শেষ করে ফেলবি আদেশ পালন করে। পরের আয়োজনের টাকা পাবি কই?’

‘মানুষ ঋণ করে ঘি খায়। আমি মুখে ঘি মাখছি।’

‘এমনিতেই তুই সুন্দর। এসব মেখে চেহারার বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিস।’

‘এসব চিন্তার চাপ। তোরা আগে বিয়ে করেছিস সহ্য হয়ে গেছে। আমি নিতে পারছি না সহজে।’ হাসান বলল।

‘এ চাপ তো দিন দিন তোর চেহারায় আরও ছাপ ফেলবে।’

হাসান বলল, ‘ফালতু কথা রাখ। আপাতত হলুদ মেহেদি নিয়ে টেনশনে আছি। ঢাকা শহরে আসল কাঁচা হলুদ পাওয়া কঠিন। তুই পারলে ব্যবস্থা কর।’

আমি বললাম, ‘মেহেদী অনুষ্ঠানের দিন কয়েক কেজি পেয়ে যাবি।’

‘আমার তিন দিন আগেই লাগবে।’

‘এতো আগে হলুদ দিয়ে কী করবি? শুকিয়ে যাবে।’

‘আগে থেকে মাখতে চাই। চেহারায় হলুদ ভাব না থাকলে হয় নাকি?’

‘ঠিক আছে। পার্লারের কাজ শেষ হলে আমাকে কল দিস।’ এই বলে যখন আমি বের হবো তখন হাসান বলল, ‘তোর চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। ফ্যাসিয়াল করিয়ে নিস।’

আমি হেসে বললাম, ‘এতোদিন সংসার করে সারা মুখ কালো হয়নি এটাই বেশি।’

তিন.

গ্রামের বাড়ি থেকে পাঁচ কেজি কাঁচা হলুদ আনালাম কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। মূল অনুষ্ঠানের তিন দিন আগে তা নিয়ে হাজির হলাম হাসানের বাড়িতে। সে আমার হাত থেকে পার্সেল নিয়ে বলল, ‘কয় কেজি?’

হাসি মুখে বললাম, ‘কয়েকটা বিয়ে করতে পারবি। হলুদ শেষ হবে না।’

‘পার্সেলের ওজন বেশি মনে হচ্ছে না।’

‘পাঁচ কেজি।’

‘তিন দিন চলবে না। দশ কেজি হলে ভালো হতো।’

‘তুই কি প্রতিদিন হলুদ মাখবি নাকি?’

‘হবু বউ তাই বলেছে। শরীরের একটা লোমকূপও সে হলুদবিহীন দেখতে চায় না।’ হাসান বলল।

‘প্রয়োজনে আরও আনাবো। আপাতত এটা দিয়েই শুরু কর।’

‘ঠিক আছে, তুই বস। আমি হলুদ বাটার জন্য দিয়ে আসি। দুপুরের খাবারের পর থেকে মাখা শুরু করতে হবে। ভিডিও কলে তোদের ভাবি তৃণা সেটা দেখবে।’

হলুদের ঘাটতি মেটাতে আমি বাবাকে ফোন করে আরও পাঁচ কেজি কাঁচা হলুদ পাঠাতে বললাম। একদিন পরই পার্সেল চলে এলো।

চার.

টানা তিন দিন হাসানের মুখসহ সারা দেহে চলল হলুদ প্রলেপ পর্ব। সবশেষে মাহেন্দ্রক্ষণ। হাসানের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। সন্ধ্যায় আলো ঝলমলে পরিবেশে মঞ্চে বসানো হলো হাসানকে। গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা। কনেদের মতো হাতে বাঁধা কাঠ গোলাপ। শুরু হলো হলুদ মাখা পর্ব। একটু করে হলুদ দিতে দিতে হাসানের মুখে কয়েক স্তরের প্রলেপ পড়ে গেল। সমস্যা হলো এতো হলুদ মাখার পরও তার চেহারার পরিবর্তন হচ্ছে না। অতিমাত্রায় হলুদ প্রয়োগে ফর্সা মুখসহ শরীদের দৃশ্যমান সব অঙ্গপতঙ্গ কালছে বর্ণ ধারণ করল। আমি শংকিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কী রে, কোনো সমস্যা হয়েছে?’

‘না। প্রেম করে বুকে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। বিয়ের টেনশনে তা মুখে চলে এসেছে।’

আমি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, ‘দাম্পত্য জীবন জটিল জীবন। তোরটা একটু আগেই শুরু হয়েছে।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম