মাফ করবেন
চাপাচাপির চিড়েচ্যাপ্টা
আশরাফুল আলম পিনটু
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফুটবলের মতো গোলাকার এই পৃথিবীর দু’পাশটা কমলালেবুর মতো কিঞ্চিত চাপা। কেন চাপা এ প্রশ্ন আমাদের মাথায় চাপতেই পারে। এর উত্তর জানেন বিজ্ঞানীরা কিংবা কোনো চাপাবাজ। উত্তরটা আমার জানা নেই বলে চেপে গিয়ে প্রথমে দুই চাপাবাজের গল্প বলি-
১ম চাপাবাজ : আমার দাদার দাদার এত বড় একটা কড়াই ছিল, তাতে পানি ভরলে এক হাজার লোক গোসল করতে পারত। একটা বিশাল দিঘিই বলা চলে।
২য় চাপাবাজ : আমার দাদার দাদার একটা মুরগি ছিল। সেই মুরগিটা ইয়া বড় বড় ডিম পাড়ত। আর একটা ডিম ভেজে দশ গাঁয়ের লোককে খাওয়াতেন তিনি। তারপরও কিছু ডিমভাজা থেকেই যেত।
১ম চাপাবাজ : যাহ। চাপা ছাড়িস না। অত বড় ডিম ভাজার কড়াই পেত কোথায়?
২য় চাপাবাজ : কেন, তোর দাদার কড়াইটাতেই তো ভাজা হতো।
চাপাবাজির গল্পের শেষ নেই। এরকম অনেক গল্প যেমন রয়েছে, তেমন অনেক চাপাবাজ রয়েছে আমাদের চারপাশে। চাপা মারাই তাদের স্বভাব। চাপা ব্যথা হলেও তাদের বিরাম নেই। চাপার জোরেই তারা জিততে চায়। একজন চাপা মেরে টেক্কা মারতে চায় আরেকজনের ওপর। জনগণের কাছে চাপাবাজি করেন নেতাদের অনেকে। চামচার চাপাবাজি নেতার কাছে। সরকারি আর বিরোধী দলের চাপাচাপিতে চাপা পড়ে থাকে দেশের মানুষ। বিক্রেতার চাপার ঠেলায় তিরিশ টাকার মাল বিকিয়ে যায় তিনশ’ টাকার। কর্মকর্তার চাপায় কর্মী কাত। আবার কর্মীর চাপায় কর্মকর্তা মাত। সবাই সমানে চাপা মেরে যাচ্ছি-চাপায় চাপায় চাপা পরিমাণ। নিরুপায় চাপাভাঙা মানুষ জীবনে চাপা খেয়ে খেয়ে বুকে পাথর চেপে এসব সহ্য করে যায়। চাপা হাসি হাসা ছাড়া আর কী উপায়!
কথায় আছে-প্রতিভা চাপা দিয়ে রাখা যায় না। কিন্তু প্রতিভার চাপ মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি করলে গুরুতর বিপদ ঘটে। পড়ার চাপে চোখে সর্ষেফুল দেখে অনেক শিক্ষার্থী। ভেজালের চাপে খাঁটিরা উধাও। আবার পাপ কখনো চাপা থাকে না। মাটিচাপা দিলেও চেপে রাখা যায় না খুনের অপরাধ। গোপনে বললেও কথা চাপা থাকে না। জোর চাপ দিলে সবই বেরিয়ে আসে। অবশ্য সরকারি অফিসে ফাইল চাপা থাকা দস্তুর আমাদের দেশে। ওপরের চাপে অনেক কাজ চাপা পড়ে যায় চাপা রাখার কারসাজিতে। প্রভাবশালীর চাপে পার পেয়ে যায় শীর্ষ সন্ত্রাসী। ধামাচাপা পড়ে গুরুতর অপরাধ। নিজের দোষ অন্যের ওপর চাপানোও আমাদের স্বভাব। ঘোড়ায় না চাপলেও অন্যের কোলে চেপে নদী পেরোনোর কৃতিত্ব নিতে চাই আমরা। কিংবা একটু লাই পেলেই মাথায় চেপে বসি। আর নামতেই চাই না সিন্দাবাদের ঘাড়ে চাপা বুড়োর মতো। নিজের মাথার বিপদ চাপলে অবশ্য অন্যের হাত চেপে ধরতে দ্বিধা করি না আমরা। কাজের চাপে কারও নাভিশ্বাস। যৌতুকের চাপে বধূর সর্বনাশ। উচ্চ রক্তচাপ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
কারও কারও মাথায় নাকি ভূত চাপে। অভাব চেপে রাখলেও রাগ চাপা রাখতে পারেন না অনেকে। চাপা স্বভাবের মানুষ চাপা দুঃখ নিয়ে কিংবা দুঃখ চাপা দিয়ে জীবন কাটান চাপা মনে। যাবতীয় বোঝা চাপা যেন তাদের নিয়তি। এ নিয়ে চাপা সুরেও তাদের কোনো অভিযোগ নেই। চিন্তার চাপে বেখেয়ালে রাস্তা চললে গাড়ি চাপা পড়তে হয়। অবৈধ নির্মাণে বাড়ি চাপা পড়ে মরে এ দেশের দরিদ্র গার্মেন্টস কর্মী। চাপা দেওয়া হয় বাদ-প্রতিবাদ। চাপাগলায় সাহসী স্বর বের হয় না কারও।
এ কোন চাপা সময়? অসহায় জনগণ যেন চাপা গলির চাপা মানুষ। কিন্তু চাপা ক্ষোভের ছাইচাপা আগুন ধিকিধিকি তাদের বুকে। এ আগুন চাপা থাকবে না। জ্বলবেই।
