মাফ করবেন
হাঁটি হাঁটি পা পা
আশরাফুল আলম পিনটু
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে, তখন নাইবা মনে রাখলে...রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের আকুতি কেউ মনে রাখুক বা না রাখুক, আমরা জন্মের পর হাঁটি হাঁটি পা-পা করে হাঁটার পায়েখড়ি থেকে শুরু করে আমৃত্যু পৃথিবীর বুকে পায়ের দাগ রেখে যাই। চালিয়ে যাই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর নিরন্তর প্রচেষ্টা। কেউবা পেয়ে যাই পায়ের তলায় শক্ত মাটি। কেউবা পায়ে পায়ে পথ চলে ক্লান্ত পায়ে বসে পড়ি পথের মাঝেই। তবু নিজের পথ নিজের পায়েই হাঁটতে হয়। পা ফেলতে হয় সাবধানে। পায়ে পায়ে বিপদ থাকে ওঁৎ পেতে। পা টিপে টিপে না চললে পা পিছলে আলুর দম। পায়ের হিসাব খুবই জটিল সেই সৈয়দ মুজতবা আলীর পণ্ডিত মশাইয়ের গল্পের মতো। পণ্ডিত মশাই তার এক ছাত্রকে স্কুল পরিদর্শনে আসা ইংরেজ সাহেবের তিন পাওয়ালা কুকুর দেখিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন- এই কুকুরের কয়টা পায়ের সমান দাম তার! জানা যায় পণ্ডিত মশাই বেতন পেতেন ২৫ টাকা আর কুকুরের জন্য মাসে বরাদ্দ ছিল ৭৫ টাকা!
কুকুরের পা থেকে এবার গোপাল ভাঁড়ের পায়ে আসি। প্রতিবেশী এক বৃদ্ধা একদিন এলেন গোপালের কাছে। শহরে থাকা ছেলেকে চিঠি লিখে দিতে বলতেই গোপাল বলল, ‘আজ তো পারব না দাদীমা! আমার পায়ে ভীষণ ব্যথা!’
বৃদ্ধার চোখ উঠল কপালে, ‘পায়ে ব্যথা তাতে কী! চিঠি লিখবে তো হাতে।’
গোপাল কাচুমাচু হয়ে যা জানাল তার মর্মার্থ এই-তার হাতের লেখার যা ছিরি তাতে তাকেই যে হেঁটে গিয়ে চিঠি পড়ে শুনিয়ে আসতে হবে। কাজেই...
পায়ের পাতা থেকে মাথার তালু পর্যন্তকে আমরা আপাদমস্তক বলেই জানি কিন্তু পরীক্ষার খাতায় একবার এক শিক্ষার্থী এককথায় প্রকাশ করতে গিয়ে আপাদমস্তকের জায়গায় লিখেছিল-বোরকা।
ময়মুরুব্বিদের পায়ের ধুলা নিয়ে সম্মান জানানো দস্তুর। কিন্তু পায়ে ধুলা লাগে বলে রবীন্দ্রনাথের জুতা আবিষ্কার কবিতায় সে কি হুলুস্থুল কাণ্ড! ‘মলিন ধুলা লাগিবে কেন পায় ধরণি মাঝে চরণ ফেলা মাত্র!’ রাজা গবুচন্দ্রের মোক্ষম প্রশ্ন! তারপরের ঘটনা আমরা সবাই জানি-নানা নাকালের পর চামড়া দিয়ে যখন পুরো দেশ ঢাকার আয়োজন চলছে তখন বৃদ্ধ চামার-কুলপতি হেসে সহজ সমাধান করে দিয়েছিল গবুচন্দ্রকে। বলেছিল-নিজের চরণ দুটি ঢাকো, তবে ধরণি আর ঢাকিতে নাহি হবে।
ভূতের পা নাকি উলটো দিকে। আমাদের নেতানেত্রীদেরও মনে হয় তাই। নইলে নির্বাচনের আগে সোজা কথা বলে ক্ষমতায় গিয়ে উলটো পায়ে হাঁটা কেন? পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় মাস্তানরা। সন্ত্রাসীর বোমায় হাত-পা হারান অনেকে। এসব সন্ত্রাসীকে গডফাদাররা ব্যবহার করেন পাদানি হিসাবে। তারা কি জানেন না, ব্যবহার শেষে তাদের পরিণতি পাপোশের মতোই? আর তখন পায়ে ধরেও রেহাই মেলে না। পায়ে পড়লেও একদিন বেড়ি পড়ে পায়ে-গন্তব্য, জেলখানা।
কথায় আছে সাপের লেজে পা দিতে নেই। নিঃশব্দে হাঁটার নাম বিড়ালপায়ে হাঁটা। অবশ্য নাচের ঝংকার তুলতে পায়ে নূপুর বাঁধতেই হয়। অত সুন্দর ময়ূরের পায়ের গড়ন বিচ্ছিরি। কুকুর পায়ে কামড় দিয়েছে বলে কুকুরের পায়ে কামড় দিতে যাবেন না। থামের মতো গোদা পা হাতির। কিন্তু কোনো ধনবান মেহমান হঠাৎ হাজির হলে আমরা বলে উঠি-গরিবের ঘরে হাতির পা। আবার অনেক ধনী এমনই যে দেমাগে মাটিতে পা পড়ে না। পা-চাটা মানুষেরও অভাব নেই। পায়ে তেল দিয়ে অনেকেই আখের গোছাতে ওস্তাদ। পায়ের ওপর পা দিয়ে দিব্যি জীবন কাটান অনেকে পা নাচিয়ে। পাজির পা-ঝাড়ারাও রয়েছে আমাদের চারপাশে। সাপের পাঁচ পা দেখেছে তারা। তবে সাবধান, দুই নৌকায় পা রাখবেন না। তা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার শামিল। পায়ে পায়ে ঘুরলে সম্মান থাকে না। দেখে চলতে হয় পা চালিয়ে নইলে পায়ে কাঁটা ফুটতে পারে। পচা শামুকেই পা কাটে। পায়ের কেরামতিতেই ফুটবল খেলা জমে ওঠে। সিঁড়ি বেয়ে উঠতেও পায়ের জোর লাগে। দুটো পা রয়েছে বলেই মানুষ সচল। তালগাছের মতো একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকে না। পা ছাড়া আমরা অচল। সামান্য পা মচকালেই টের পাই। পা ভাঙলে তো সর্বনাশ।
শেষ কথা : দু’পায়ে জুতো নেই বলে আপসোসের কিছু নেই কারণ কারও যে পা দুটোই নেই!
