|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুলাভাই আমাদের বাড়িতে ঘর জামাই থাকেন এক যুগ ধরে। নিজেকে বড় চালাক ভাবেন তিনি। এজন্য বুবুর সঙ্গে প্রায়ই তার বিবাদ হলে সেটা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। স্বামীর প্রতি বুবুর অভিযোগ-দুলাভাইয়ের আধা চালাকির তুলনায় চাপাবাজি অনেক বেশি। আর চাপাবাজি ধরনটাও অভাবনীয়। অবিশ্বাস্য চাপাবাজিতে তার তুলনা কেবল তিনি নিজেই।
একবার নাকি তিনি কক্সবাজারে গিয়ে অভিজাত এক হোটেল ভাড়া করেছেন। তিনদিনের হোটেল ভাড়া এসেছে ত্রিশ হাজার টাকা। বিল পরিশোধের আগেরদিন টের পেলেন তার পকেটে মানিব্যাগটি গায়েব। কোথায় হারিয়েছে বুঝতে পারছেন না। কীভাবে হোটেলের বিল পরিশোধ করবেন, সে চিন্তায় অস্থির হয়ে বসে আছেন সাগরপাড়ে। এমন সময় তার পায়ের কাছে বিশাল এক ঝিনুক ভেসে এলো। সেই ঝিনুকের ভেতর পেলেন বড় একটি মুক্তা। সেই মুক্তা বিক্রি করলেন পঞ্চাশ হাজার টাকা। তারপর হোটেলের বিল দিয়ে বাড়ি ফিরলেন। দুলাভাইয়ের নিজ মুখেই এই গল্প শুনে আমরা মুখ টিপে হাসি। আমাদের হাসি তিনি টের পান না।
ছাত্রজীবনে নাকি দুলাভাই এক সন্ধ্যায় গঞ্জের হাট থেকে একজোড়া ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বটতলার মোড়ে আসতেই তিনটি গেছো ভূতের পাল্লায় পড়লেন। ভূতগুলো দুলাভাইয়ের হাতের ইলিশ চায়। নয়তো দুলাভাইয়ের রক্ষা নেই। কিন্তু দুলাভাই নাছোড়বান্দা, কোনোভাবেই ইলিশ দেবেন না। ভূতও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। শেষে দুলাভাই নাকি ভূতকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মেরে ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এ গল্প শুনে বুবু বললেন, ‘আমি হলে তো ভূতের ভয়ে জ্ঞান হারাতাম!’ দুলাভাই তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন, ‘তুমি তো জ্ঞান হারাবেই। তুমি কি আমার মতো নির্ভীক!’
সেই নির্ভীক মানুষটাকে একদিন আমি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যাচাই করার ইচ্ছে হলো তার সাহসের দাপট। একদিন দুলাভাই সন্ধ্যার পর কী যেন কিনতে বাজারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেটা দেখে আমি আগে ভাগে দাদির সাদা কাপড়টি নিয়ে হাজির হলাম বাড়ি থেকে অদূরের রাস্তার পাশে বাঁশ ঝাড়ের ভেতরে। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর দুলাভাইয়ের আগমন দেখে সাদা কাপড়টি গায়ে পেঁচিয়ে কাপড়ের ঘোমটায় মুখ ডেকে ভূত সাজলাম। দুলাভাই কাছে আসতেই বাঁশ ঝাড়ের ভেতর থেকে লাফিয়ে নেমে এলাম মাঝরাস্তায়। ভূতের মতো বিকৃত গলায় বললাম, ‘কী আছে বের কর। আমি এই গ্রামের ভূতের সর্দার!’
দুলাভাই চিৎকার দিতে চেয়েও দিলেন না। ভীতু গলায় বললেন, ‘সব দিয়ে দেব। আমাকে মেরে ফেলবেন না তো!’
বিকৃত গলায় বললাম, ‘এত কথা বলিস না। কী কী আছে সব বাইর কর।’ দুলাভাই মানিব্যাগ এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি মুখ টিপে হাসি আর সঙ্গে যা যা আছে, সব দিয়ে দেওয়ার হুকুম জারি করি। বেচারা হাতঘড়ি, চোখের পাওয়ারফুল চশমা, গায়ের শার্ট খুলে এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি আবার বলি, ‘আর কী কী আছে?’ কাতর কণ্ঠে তার জবাব, ‘আর তো কিছু নেই, তবে আসার সময় একটা গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেয়ে এসেছি, সেটা কি বমি করে বের করে দেব?’ না সূচক ইশারা দিয়ে বললাম, ‘না থাক, লাগবে না। এবার বাড়ি যা। আর সবসময় বউয়ের কথামতো চলবি।’
আমার মুখ থেকে কথাটা বের হতে না হতে বেচারা চিতা বাঘের মতো দৌড়ে বাড়িমুখী হচ্ছে দেখে আমার দুনিয়া কাঁপানো হাসি এলো। এই তাহলে আমার নির্ভীক দুলাভাই!
