|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘বিচ্ছু’-ছোট্ট একখানা শব্দ। মোক্ষম প্রয়োগে বিচ্ছু যে কতটা বিচ্ছু হইতে পারে, আদনান সাহেব টের পাইয়াছিলেন প্রায় দুই যুগ আগে। বেচারা যত্রতত্র ঘুরিতেন না। শুধু দুইজনের কাছে পত্র লিখিতে শুরু করিয়াছেন তখন। প্রেমিকা সোমা আর যুগান্তরের বিচ্ছু। নব্য প্রেমিকা আবার ‘কী না কী’ মনে করিতে পারে ভাবিয়া বিচ্ছুতে লেখালেখির কথা সোমাকে জানানো হয় নাই। আদনান সাহেব তখন স্বপ্নেও ভাবেন নাই, এই বিচ্ছু, তাহাকে পাইতে দেবে না অন্য কিচ্ছু।
ঘটনা ছিল অতি সামান্য। দুই হাজার সালের কোনো এক গোধূলি বেলার কথা। পার্কের ধূলি উড়াইতে উড়াইতে সোমা আসিয়া হাজির হইল আদনান সাহেবের সম্মুখে।
‘গতকাল এত মিনি সাইজের চিঠি লিখিলে কেন? কলমে কালি ছিল না?’
‘কী যে বল, কলম ঠিকই ছিল। আসলে অন্য এক জায়গায় লিখিতে হইয়াছিল তো, তাই সময় পাই নাই।’ সহজ প্রশ্নের সরল উত্তর দিলেন আদনান সাহেব।
‘কাহার কাছে?’ সোমা অবাক হইয়া জিজ্ঞাসা করিল।
‘আরে ও তেমন কেউ না, বিচ্ছু...!’
‘বিচ্ছু মানে? তুমি এমন কেন? মানুষকে ছোট করে কথা বল কেন? তুমি নিজে কী খুব ভালো মানুষ, যে নিজেকে জাহির করিবার জন্য অন্য জনকে বিচ্ছু সম্বোধন করিতেছ?’
‘আরে, আগে তুমি আমার কথা শুনবে তো। সত্যিই বিচ্ছু...!’
‘ছিঃ ছিঃ ছিঃ! তোমার লজ্জা করে না, মানুষের নামে বদনাম করিতে? কী ভাবিয়াছ? ওর নাম শুনিলে, হিংসা করিব? আমাকে তুমি এত ছোট মনের ভাব?’
‘কী বলিতেছ এসব? আমি কখন তোমাকে ছোট মনের ভাবিলাম?’
‘তা হইলে নাম বলিতে বাধা কীসের? সত্যিটা বলিলেই তো পার। এখন আমাকে গাধা আর তাহাকে রাঁধা মনে হয়?’
‘কী আবোল তাবোল বকিতেছ এসব?’
‘আমি আবোল তাবোল বলি? আর তুমি?’
‘ওই চিজের নাম সত্যিই বিচ্ছু।’
‘এত মিথ্যাও বলিতে পার? আমাকে বাদ দিয়া যাহার কাছে পত্র লিখিতে হয়, সেই বেচারা এখন চিজ হইয়া গেল? নিজের ভাব বজায় রাখিতে আরেকজনকে ছোট কর? সেই চিজ তোমার বন্ধু তো? আড়ালে নিজের বন্ধুকে যে এভাবে হেয় করিতে পারে, দুদিন পর তো সে আমাকেও হেয় করবে আরেকজনের সামনে।’
‘তুমি এসব কী বল? আমারও কিন্তু ধৈর্যের একটা সীমা আছে। কথায় কথায় ঝগড়া করা তোমার একটা স্বভাব হইয়া দাঁড়াইতেছে দেখি। আমার আর ভালো লাগিতেছে না।’ আদনান সাহেব আর থাকিতে না পারিয়া বলিয়াই ফেলিলেন।
‘ছোটলোক, ইতর, মিন মাইন্ডেড, অভদ্র, মিথ্যাবাদী, টা টা, বাই বাই, আর কোনোদিন যেন দেখা না পাই।’ বলিতে বলিতে সত্যি সত্যি খোমা বেঁকাইয়া হারাইয়া গেল সোমা।
আদনান সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বর্তমানে ফিরিয়া আসিলেন। শুধু কী সোমা? দেশে জনপ্রিয় সব পত্রিকার সঙ্গে ফান সাপ্লিমেন্টারি হিসাবে যতগুলো ম্যাগাজিন-ট্যাবলয়েড ছিল অনেকেই তো হারাইয়া গিয়াছে। গুটি কয়েকের মধ্যে অন্যতম হইয়া শুধু হারাইয়া যায় নাই সেই বন্ধু। দুই যুগ ধরিয়া আইফেল টাওয়ারের মতন মাথা উঁচু করিয়া দাঁড়াইয়া আছে বিচ্ছু। শুধু যে দাঁড়াইয়াই আছে, তা না। বিপুল পাঠকপ্রিয়তাকে সঙ্গী করিয়া ঘুসখোর, ক্ষমতালিপ্সু, অপকর্মকারী, অর্থ আত্মসাৎকারী, দুর্নীতিবাজদের খোঁচাইয়া, খামচাইয়া যাইতেছে।
যাহারা জানেন তাহারা তো জানেনই, আর যাহারা জানেন না, তাহাদের বলিতেছি, এই বিচ্ছু কিন্তু সেই বিচ্ছু না। সাধারণ বিচ্ছু কামড়াইলে আক্রান্ত স্থানটি পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট মেশানো পানি দিয়া ধুইয়া এন্টিসেপটিক লাগাইলে কাজ হয়। কিন্তু এই বিচ্ছু কামড়াইলে আর রক্ষা নাই। আজীবন জ্বলিতে থাকে ভেতরটা। সাহসিকতা দেখাইতে গিয়া বিষের হুলে চাপ দিলেও লাভ নাই। বেশি চাপাচাপি করিলে বিষ সারা শরীরে ছড়াইয়া যাইবার আশঙ্কা প্রচুর।
দৈনিক যুগান্তরের সহিত বিচ্ছু দুই যুগে শুধু পা-ই দেয় নাই-মুখ, হাত হইতে শুরু করিয়া পুরো শরীর দিয়াছে। শিশু জন্মের পর বাচ্চাবেলা, কিশোরবেলা পার হইয়া যেমন চব্বিশ বছরের তারুণ্যে ঝলমল করে বিচ্ছুও তাহার ব্যতিক্রম নয়। ম্যাগাজিন হইতে ট্যাবলয়েড হইয়াছে, ট্যাবলয়েড হইতে হইয়াছে ব্রডশিট। দুই যুগে পদার্পণ করিয়া শুধু ঝলমল করিতেছে না, পাঠকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও অবস্থান করিতেছে।
বৈশিষ্ট্যের কথা যদি বলিতেই হয়, ‘বিচ্ছু’ অনেকটা ক্রিকেট পিচ-এর ন্যায় আচরণ করে। খেলা শুরু হইবার পূর্বে যেইরূপ পিচের আচরণ সম্পর্কে অগ্রিম কিছু বলা যায় না, তদ্রূপ বিচ্ছু’র আগামী সংখ্যা কী লইয়া হইবে কিংবা কেমন করিয়া হইবে, তা আগেভাগে বোঝার কোনো উপায় রাখেন নাই বিচ্ছু সম্পাদক।
তবে এইটা বলা যায়, দারুণ সময়োপযোগী সব আইডিয়ায় পরিপুষ্ট হইয়া একের পর এক ইস্যু লইয়া বিচ্ছু আগাইয়া যাইতেছে, আগাইয়া যাইবে যুগের পর যুগ। কেননা যুগান্তরের দুই যুগের অন্তরে অবস্থান নেওয়া বিচ্ছু’র বি.স, লেখক, পাঠকদের শুভ কামনাই যে বিচ্ছু’র প্রাণশক্তি। জয় হোক ‘বিচ্ছু’র।
