|
ফলো করুন |
|
|---|---|
খেলাধুলার উপস্থাপক হিসেবে সুনাম কুড়ালেও এই প্রথম একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হাসিবিষয়ক ‘গল্প বলা’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছি। আজকের গল্পের বিষয় ‘সাহস’। সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হলে সাহসী হতে হয়। অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই খুব সাহসী। এ ক্ষেত্রে আমিও পিছিয়ে নেই। আমার বেশিরভাগ উপস্থাপনাই সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। বাস্তবে কিন্তু এতটা সাহসী নই আমি। কথা বলার সময় দু’ঊরুর কম্পিত কম্পন কমাতে প্রচুর নড়াচড়া ও হাঁটাচলা করতে হয়।
যাই হোক, প্রথমেই গল্প বলতে আসলো রাজশাহীর প্রতিযোগী। সে শুরু করল- এক সময় পৃথিবীতে নামকরা সাহসী মানুষ ছিলেন বীর আলেকজান্ডার। সাহসিকতার জন্য তিনি বীর উপাধিতে ভূষিত হন। একবার দেশ ভ্রমণে বের হলে পথিমধ্যে ক্লান্ত হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলেন। আশপাশে ঘরবাড়ি খুঁজতে গিয়ে সন্ধান পেলেন মাটির একটি ঘরের। এ ঘরে একজন মহিলা ছাড়া আর কেউ থাকে না। মহিলার কাছে রাতটা কাটানোর আবেদন করলে তিনি রাজি হলেন। উপায়ন্তর না পেয়ে দু’জনকে ঘুমাতে হল একই বিছানায়।
সকালে বিদায় নেয়ার সময় মহিলা তার পরিচয় জানতে চাইলেন। আলেকজান্ডার বললেন, ‘বীর আলেকজান্ডারের নাম শুনেছেন?’ মহিলা হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাঁকালে আলেকজান্ডার বললেন, ‘আমিই সেই বীর আলেকজান্ডার।’ মহিলা ভ্রু কুঁচকাল। খানিকটা সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘দু’জনের মাঝখানে অবস্থিত সামান্য কোলবালিশটা সরাতে পারলেন না, কেমন
বীর আপনি?’ আলেকজান্ডার উত্তর দিলেন, ‘মেয়েরা বীরের বীর!’
বিচারকদের প্রতিক্রিয়া জানার আগে আমি মনে মনে বললাম, ঠিক। মেয়েদের কাছে কোনো বীরেরই পাত্তা থাকে না। তবে বীরের মতো এক কাজ আমি করেছি। প্রেম করার সময় অনায়াসে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড তুলে দিয়েছি প্রেমিকার কাছে। দিয়েছি বলতে দিতে বাধ্য হয়েছি।
যাই হোক, দ্বিতীয় প্রতিযোগীকে মঞ্চে আহ্বান জানালাম। সে এসেছে চিটাগাং থেকে। বলতে শুরু করল সে, ‘সবুজ বনাঞ্চল আর সমৃদ্ধ অরণ্যের নাম চিটাগাং। তাই সেখানে শৌখিন পশু শিকারির অভাব নেই। প্রতিবেশী জামাল ভাই ধুরন্ধর শিকারি। বড় বড় প্রাণী শিকার করা তার নেশা। একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে দেখি জামাল ভাই বন্দুক হাতে পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বললাম, শিকারে যাচ্ছেন বুঝি? জামাল ভাই বললেন, হুম, বাঘ শিকারে যাচ্ছি। আমি বললাম, তাহলে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? তিনি বললেন, দেখছিস না রাস্তায় কুকুর দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে এগোতে পারছি না!’
সর্বশেষ ঢাকার প্রতিযোগী এসে শুরু করল,‘একদা এক সোনার দেশ ছিল। সে দেশের সব মানুষই ছিল সাহসী। প্রত্যেকেই দেশের জন্য নিবেদিত সৈনিক। রাজা গর্ব ভরে প্রধান উজিরকে এ কথা বলছেন। উজির বললেন, সাহসী সৈনিক আছে। কিন্তু আপনার রাজ্যে সাহসী স্বামী নেই একটাও। রাজা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, একজন হলেও সাহসী স্বামী আছে। উজির মানতে নারাজ। শুরু হল পরীক্ষা। দেশের সব স্বামীকে একত্রিত করা হল মাঠে। ঘোষণা দেয়া হল, যারা স্ত্রীদের ভয় পায় তারা দূরের নদীর পাড়ের দিকে যাবে। আর যারা ভয় পায় না তারা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে।
ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে সবাই হুড়মুড় করে নদীর দিকে দৌড়াতে শুরু করে। তা দেখে উজিরের মুখে হাসির সীমা নেই। লজ্জায় রাজার মুখ লাল হয়ে গেল। হঠাৎ দেখল একজন দীর্ঘকায় রোগা-পাতলা স্বামী না দৌড়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন যেন। উজির কপাল কুঁচকালেন। এমনটা তো কস্মিনকালেও হওয়ার নয়। সৈন্য দিয়ে তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, সবাই বউকে ভয় পায় বলে দৌড়াচ্ছে, তুমি ব্যতিক্রম কেন? লোকটি বলল, আজ্ঞে হুজুর, বাড়ি থেকে আসার সময় বউ বলে দিয়েছিল, যেন ভিড়ের মধ্যে না যাই!’
গল্পটা শুনে আমি আমার আসনেই বসে থাকলাম, চুপচাপ। আমার স্বপ্ন ছিল ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু বিবাহিত জীবনে এসে হয়েছি টিভি উপস্থাপক। টিভিতে দেখানো মানুষের সুনাম নাকি খুব বেশি। আশা করি পেশা বদল করার মতো সাহসী কর্মটার পেছনের কলকাঠি কে নেড়েছে আপনারা বুঝতে পেরেছেন। হ
