|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুমিরের সাত বাচ্চা আর শেয়ালের গল্পটা সবাই জানেন। ওই যে একটা পাঠশালার শেয়াল টপাটপ গিলে খেয়েছিল তার সাত ছাত্র কুমিরের বাচ্চাকে। এরপর অনেকগুলো প্রজন্ম পার হয়ে গেছে।
এবার শেয়াল অন্য কথা শোনাচ্ছে। সারা পৃথিবী নাকি আধুনিক হচ্ছে। বাচ্চা বড় হতে হতে শিক্ষার অভাবে কুমির থেকে গাধা হয়ে যাবে! গাধা হলে বিশাল বিপদ। মানুষের দল কথায় কথায় ‘গাধার বাচ্চা’ বলে গালাগাল করে। কুমির নিয়ে তেমন গালি নেই। বরং মানুষ একটা ভয় আর সমীহ নিয়ে তাকায়। এই অপমান থেকে বাঁচার উপায় একটাই।
এক. বর্ষার আগে আগে পেটে ডিম নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। লোভী বাঙালি প্রতি শীতেই খাল, নদী খেয়ে ফেলছে। এর আগেই প্রজন্ম বাড়াতে হবে।
দুই. পেটে ডিম ডিম ভাব হলেই আলট্রাসনোগ্রাফি করে ডিমের সংখ্যা, রং, আকার জানতে হবে।
তিন. ডিম বের হলেই তুলে দিতে হবে শেয়ালের পাঠশালায়। শেয়াল এ ডিম তা দিয়ে শুধু ফোটাবেই না, কুমির ছানাকে ডিমে থাকতেই করে ফেলবে শিক্ষিত।
আমাদের নেতা কুমির এবার সাতটা ডিম দিয়েছে। এদিকে শেয়াল মামা এসে পড়েছে সমাজসেবা করতে।
ফেসবুক লাইভে সে বলছে, ‘দর্শক, আপনারা দেখছেন কীভাবে কুমির ভাবি অনেক কষ্ট করে সাতটা ডিম দিয়ে ফেলেছে। আমার গাইতে ইচ্ছা করছে, সাত ভাই ডিম্ব ফোটরে ফোটরে...। আমরা এই সাত ডিম নিয়ে যাব আমাদের সামাজিক পাঠশালায়। আধুনিক প্রযুক্তিতে একে তা দেওয়া হবে। একই পদ্ধতিতে ডিমের ভিতরের বাবু কুমিরকে আমরা শিক্ষা দিব। কয়েকমাস পর আপনাদের সামনে টিকটক করতে করতে বের হবে সাতটি ফুটফুটে সুন্দর কুমিরের বাচ্চা। পরবর্তী আপডেট জানতে আমাদের চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করে লাইক বাটনে চাপ দিন।’
দিন যায়। কুমির সাতটি ডিমের সাতটি ফেসবুক প্রোফাইল খুলে ফেলেছে। ‘ক্রোকোডাইল ওয়ান’ থেকে ‘সেভেন’ পর্যন্ত সার্চ দিলে আপনারা প্রোফাইলগুলো দেখতে পাবেন। মাসে মাসে শেয়াল ডিমের ছবিগুলো জুম করে আপলোড দেয়, আর কুমির ভাবে তার অনাগত ছানারা ‘পাবলিক ফিগার’ হয়ে উঠছে।
একদিন সকাল। কুমির ফেসবুক খুলে দেখে আজ বিশ্ব ডিম দিবস। আজকের দিনে ডিম খেয়ে উপভোগ করতে হয়।
ফার্মের মুরগির একটা ডিম মুখে দিতেই মনে পড়ে নিজের ডিমগুলোর কথা। সার্চ দিয়ে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। কুমিরের মাথায় আগুন জ্বলে যায়। সে ছুটে যায় শেয়ালের কাছে। শেয়ালও নেই, ডিমও নেই। একটু পর শেয়ালের ইউটিউব চ্যানেলের একটা ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়।
‘দর্শক, আজ এ ডিম দিবসে আপনাদের দেখাব ডিম কীভাবে খেতে হয়। আমার কাছে দেখছেন ফুটফুটে সাতটি ডিম। এই প্রথম ডিমটা আমি পোচ করে খেয়ে ফেললাম। নীলচে মতো দ্বিতীয় ডিমটা একটু পেঁয়াজ আর মহামূল্যবান মরিচ দিয়ে ভেজে ফেললাম। একে শুদ্ধ ভাষায় বলে অমলেট আর লোকাল ভাষায় মামলেট। পরের ডিমটা আমি খাব সিদ্ধ করে। একটু গোল মরিচ আর লবণ দিয়ে। চতুর্থ ডিমটা ভেঙে ঢুকিয়ে দিলাম ময়দার ভেতর। এটা হবে মোগলাই পরোটা। পাঁচ নম্বর ডিমটা তেল আর পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করব ভাজি হিসাবে। ছয় নম্বর ডিম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে হবে পুডিং। আর সাত নম্বর, এটা কীভাবে খাই, কীভাবে খাই?’
পুলিশ এসে পড়েছে। হাতকড়ার বদলে ‘পা-কড়া’ দিয়ে বন্দি করা হয় শেয়ালকে।
‘মিস্টার শেয়াল, সাত নম্বর ডিমটা এখানে খেতে হবে না। কুমিরের মামলায় আপনার রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে। আমাদের ডিম লাগবে। আসেন দেখি এ ডিমটা দিয়ে কাজ হয় কিনা।’
