Logo
Logo
×

বিচ্ছু

পাঠক রস

বই থেকে বিপত্তি

Icon

ফাহিমা হক রিমি

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কিছুদিন পর ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন টেস্ট কোচিং করছি। মেসের খাবার খেতে পারি না বলে ফার্মগেটে আপুর বাসায় উঠেছি। তো কথা হলো সারাদিন পড়তে পড়তে যখন অতিষ্ঠ হয়ে যাই, ঠিক তখনই আপু ও দুলাভাইয়ের মধ্যে শুরু হয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যেমন সেদিন ভোকাবুলারি পড়ছি, এমন সময় পাশের রুম থেকে দুলাভাই বলল, ‘কী! তুমি ১৬০ টাকা দামের লিপস্টিক অর্ডার করে ফেলেছো! তাও পাঁচটা!’

‘হ্যাঁ করেছি, তো? সামান্য একটা লিপস্টিকও কিনে দেবে না তুমি?’

‘আরে তুমি তো আর একটা কিনো নাই। কিনেছ তো এত্তগুলা। এই টাকায় এক মাসের বাজার হয়ে যেত।’

‘বিয়ের আগে তো খুব বলেছিলে-বেবি, তোমার কোনো শখ অপূর্ণ রাখব না আমি। প্রয়োজনে নিজের কিডনি বিক্রি করে তোমার শখ-আহ্লাদ মেটাবো। এখন কোথায় গেলো সেসব?’

‘তুমিও কথায় কথায় বলতে-বাবু, আমার কিচ্ছু লাগবে না, দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে তোমার সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারব।’

আমি ততক্ষণে ভোকাবুলারি পড়া বাদ দিয়ে জিকে পড়তে বসেছি। এই তোলপাড়ের মধ্যে তো আর ভোকাবুলারি পড়া যায় না। একটা পড়তে ভালো না লাগলে অন্যটা পড়তে হবে। কোচিংয়ে ভর্তির সময় আব্বু বলে দিয়েছেন, ভার্সিটিতে চান্স না পেলে বাসায় একটা রিকশাওয়ালা ডেকে এনে বিয়ে দিয়ে দেবে। কিন্তু আমি তো আর আপুর মতো দুমুঠো ডাল-ভাতের কথা ভাবতে পারি না। দুদিন পরপরই ডেইরি মিল্ক চকলেট, তারপর কিটক্যাট, সপ্তাহে কয়েকবার ফুচকা, মাসে দুবার কাচ্চি, তিনবার পিজ্জা, চার বার বার্গার খেতে হয়। মাসে পাঁচ বার ফাইভ স্টার হোটেলে যাওয়ার অভ্যাস আমার। তবে আমি কীভাবে রিকশাওয়ালার সঙ্গে সংসার করব! না না আমাকে চান্স পেতেই হবে।

তো জিকে পড়া শুরু করলাম। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয় এবং ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়। তোতাপাখির মতো পড়ছি আর আপু-দুলাভাইয়ের ঝগড়া শুনছি। অনেকক্ষণ এভাবে বকবক করার পর নিজেকে যাচাই করার সময় আবার গুলিয়ে ফেলি। রদের সাল পড়ি ১৯০৫ আর বঙ্গভঙ্গের সাল ১৯১১!

মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এমন চিৎকার-চেঁচামেচিতে পড়া যায়! এখনো পাশের রুম থেকে আপুর বিলাপ শোনা যাচ্ছে, ‘আমার বান্ধবীরা তাদের বরের কাছে একটা লিপস্টিক চাইলে তারা এক ডজন কিনে দেয়। আর আমি তো জাস্ট পাঁচটাই কিনতে চাচ্ছি। আমি বলে তোমার সঙ্গে সংসার করে খাচ্ছি। অন্য কেউ হলে লাথি মেরে চলে যেত। খাবো না আর তোমার ভাত (ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল আপু)।’

‘এই তো শুরু হয়ে গেলো কান্না! ছিচকাঁদুনে কোথাকার। আচ্ছা শোনো না, বলি কী আমার ভাত না খাও, আটার রুটি বানিয়ে খেও? নাকি পাউরুটি খাবে? দয়া করে কান্না থামাও এবার। আমাকে ঘুমাতে দাও।’

আপু কেঁদেই চলছে। আমি জানি এই কান্না সারারাত চলবে।

আজ আমার পড়াই হলো না। প্রতিটা দিন এভাবে নষ্ট হচ্ছে। কিন্তু চান্স তো পেতে হবে! না হলে রিকশাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে!

কদিন পর আপু ও দুলাভাইয়ের ম্যারিড অ্যানিভার্সারি। তাদের জন্য অনলাইন থেকে দুইটা বই অর্ডার করলাম। একটি হচ্ছে কেয়ারিং হাসব্যান্ড, অন্যটি কেয়ারিং ওয়াইফ। ভাবলাম এ বইগুলো পড়লে তারা দুজন আদর্শ স্বামী-স্ত্রী হয়ে যাবে, তাদের মধ্যে কোনো ঝগড়া হবে না।

আপু বইয়ের নাম না দেখেই মুখ কালো করে বলল, ‘এসব বই-টই পড়ে কী হবে! এই টাকায় আমাকে দুইটা লিপস্টিক গিফট করতে পারতি।’

তো দুজনই মন দিয়ে বই পড়ে। তবে কথা হচ্ছে কেয়ারিং হাসব্যান্ড বইটা দুলাভাইকে এবং কেয়ারিং ওয়াইফ বইটা আপুকে দিয়েছিলাম। অথচ ওরা দুজন বই এক্সচেঞ্জ করে পড়ছে আর সারাক্ষণ ঝগড়া করছে।

আপু কেয়ারিং হাসব্যান্ডের গুণগুলো দুলাভাইকে পড়ে শোনায় আর বলে, ‘আরেকবার জন্ম হয়ে আসলেও তুমি এমন হাসব্যান্ড হতে পারবা না।’ আর দুলাভাই কেয়ারিং ওয়াইফকে দেখিয়ে বলে, ‘আহা! এমন একটা বউ যদি পেতাম জীবনটা ধন্য হয়ে যেত!’

এমনি আপু রেগে আগুন হয়ে বলে, ‘কীহ, তুই আরেকটা বিয়ে করতে চাস! কয়টা লাগে তোর? বদমাশ, তোর যে নজর ভালো না সেটা আমি আগেই বুঝেছিলাম, আজ তোকে আমি জুতাপেটা করব। আমার পেন্সিল হিল দিয়ে তোর গাল ফুটো করে দিবো দাঁড়া!’

দুলাভাই বলল, ‘আরে কথাটা শোনো একবার, সেভাবে বলিনি। আমি...’

আপু কোনো কথা না শুনে তার চার ইঞ্চি লম্বা হিল জোড়া খোঁজাখুঁজি করতে লাগল। দুলাভাই ততক্ষণে প্রাণ নিয়ে বাইরে ছুটে পালালো।

আমি হতাশ হয়ে ভাবতে লাগলাম, বই গিফট না করে লিপস্টিক গিফট করলেই পারতাম!

আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম