বিচ্ছুর ১০০০তম সংখ্যা
নিয়মিত বিভাগগুলোর গোলটেবিল বৈঠক
সত্যজিৎ বিশ্বাস
প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘বিচ্ছু’র আজ হাজারতম সংখ্যা! ভাবা যায়? কী বিচ্ছু! কী বিচ্ছু!
দেশের আর কোনো দৈনিক পত্রিকার রম্য ও বিদ্রুপ ম্যাগাজিন বা ট্যাবলয়েড বা সাময়িকির পক্ষে এ মাইলফলক স্পর্শ করা সম্ভব হয়নি। এ খবর জানার পর থেকে বিচ্ছু বাহিনীর প্রত্যেকের বুক গর্বে দুই ইঞ্চি ফুলে আছে। তাদের দাবি, ‘লুক অ্যাট মাই চেস্ট, আই এম দ্য বেস্ট, গিভ মি দ্য ক্রেস্ট।’
বিচ্ছুর ভেতর এমন কী আছে, যে কারণে আজ সে পৌঁছে গেছে এ যুগান্তকারী উচ্চতায়? কে বেস্ট আর কে নেবে ক্রেস্ট, তাই নিয়ে চলছে গোলটেবিল বৈঠক। প্রিয় পাঠক, চলুন চুপিচুপি ঘুরে আসা যাক সেই গোলটেবিল বৈঠক থেকে।
মলাট বৃত্তান্ত
‘বৃক্ষ তোমার আইডি কী? নামে পরিচয়।’ আমার নাম উচ্চারণ করার পর পরিচয় দেওয়ার আর কিছু বাকি থাকে নাকি? মলাট মানে যে মহা-লাট এটাও কি বলে দিতে হবে? তারপরও বিচ্ছুতে আমার গুরুত্ব নিয়ে যাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ আছে, তাদের জিজ্ঞেস করি, বিচ্ছু পাতা খুললে সবার আগে কাকে দেখা যায়? সবচেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে থাকে কে? বিচ্ছু পাতায় যে থাকে সবার আগে, তার কী কিছু বলা লাগে? জনজীবনে সপ্তাহজুড়ে যে বিষয় থাকে আলোচনার তুঙ্গে, সে বিষয়ের বিষ বেদনা তুলতে আমার বিকল্প কেউ আছে? এবার আপনারাই বলেন, বিচ্ছুর আসল হিরো কে?
অবান্তর প্রশ্ন যুগান্তর উত্তর
হে হে হে...যে সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করে, তাকে হিরো বলে না, তাকে দখলদার বলে। দখলদার কখনো হিরো হয় না, হয় ‘দ’ যুক্ত খল। যাকে বলে ভিলেন। সবদিক থেকে বিবেচনা করলে বরং হিরো হলাম আমি। কথা কম, কাজ বেশি। স্বল্প পরিসরে সবচেয়ে বেশি হিউমার নিয়ে চর্চা করি। বেমক্কা সব প্রশ্নবাণে সম্পাদকের চান্দি গরম করে দিই। শুধু তাই না, আমি হচ্ছি একমাত্র বিভাগ, যেখানে পাঠকের সঙ্গে বিচ্ছুর বিভাগীয় সম্পাদকের ডাইরেক্ট সংলাপ বিনিময় হয়। আর কারও সঙ্গে হয়? এবার আপনারাই বলেন, ক্রেস্ট পাওয়ার সত্যিকারের যোগ্য কে?
রম্যগল্প
পুরো সত্যি না হলেও কথা আংশিক সত্যি। তবে কথা হলো গিয়ে, কথা তা না। পাঠক ‘বিচ্ছু’ হাতে নেয় এসব অল্প কিছুর জন্য না, হাসির গল্প পড়ার জন্য। হাসির গল্প এত সহজ জিনিস না। খুঁজলে হাজার হাজার কবি, সাহিত্যিক পাবেন, হাসির গল্প লেখক পাবেন কজন? লিখতে বসলে কাশি, ফাঁসি, বাঁশির গল্প লেখা যতটা সহজ, হাসির গল্প লেখা ততটাই কঠিন। বিশ্বাস না হলে যারা হাসির গল্প লিখেন তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন। বিচ্ছু তো আর এমনি এমনি এ পর্যন্ত আসেনি। আমি ছিলাম বলেই না, তাই বলছিলাম, ইস্ট টু ওয়েস্ট, আমরাই বেস্ট। কোথায় ক্রেস্ট?
কৌতুক
যাদের জীবন শাবানা কিংবা জসিমের চেয়ে খারাপ চলছে, তার ওপর না আছে সেলাই মেশিন না আছে ঠেলাগাড়ি, তাদের মুখে হাসি ফোটায় কে? এই আমি। কৌতুক দুর্বলকে সবল করে, কোঁ কোঁ করতে থাকা অসুস্থকে হো হো করতে বাধ্য করে। ইংরেজিতে একটা কথা আছে রেলিশ করা। খাওয়া এক জিনিস আর তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করা আর এক জিনিস। অনেকটা চেটে চেটে চাটনি খাওয়ার মতো। আমি হচ্ছি সেই মহার্ঘ চাটনি। হাটে, মাঠে, ঘাটে সমস্যা জর্জরিত জীবনের ঘানি টানা শাবানা, জসিমদের খাটনি ছাড়া চাটনি খাওয়াই। (নিজের) বুকে হাত রেখে বলেন তো, নিরস কোনো আড্ডা যদি জমাতে চান, তখন কী বলে আড্ডা জমান? আমার চেয়ে জনপ্রিয় আর কে আছে? কী হলো রম্যছড়া? কিছু তো বলো?
রম্যছড়া
হাজারতম সংখ্যা! ধন্য বিচ্ছু ধন্য,
আজ তুমি ছুঁলে যা, পারেনি কেউ অন্য;
লেখক, আঁকিয়ে, সম্পাদক বিচ্ছুর যারা সৈন্য
ধন্যবাদ পাঠকের মনে হাসি আনার জন্য।
সমাজে যত অসংগতি, বাজারে বাড়তি দামে পণ্য;
বিচ্ছু ছোটে তাদের পিছে, যারা মানুষ হয়েও বন্য।
যে বিচ্ছু হুল ফোঁটায়, সে বিচ্ছু অন্য
এ বিচ্ছু হাসি ফোটায়, গোমড়ামুখোর জন্য।
কার্টুন আইডিয়া
তালিয়া ব্রো, তালিয়া। কী উরাধুরা চাপাবাজি! শুনে জীবন ধন্য হলো। কিন্তু ভাইডি, চিল্লাইয়া তো আর মার্কেট পাওন যায় না। মার্কেট পেতে হলে ভেতরে মার মার কাট কাট কিছু থাকতে হয়। যারা প্রতিনিয়ত বিচ্ছু পড়েন, তারা ঠিকই জানেন হা হা হি হি আর খোঁচাখুঁচিতে কারা মাস্টারমাইন্ড। আমি হচ্ছি সেই জিনিস, যে জিনিস বুঝলে বুজপাতা, না বুঝলে তেজপাতা। বোঝা গেল ব্যাপারটা? কী হলো চিরতার রস, আপনি দাঁড়িয়ে পড়লেন যে? নামে রস হলেও মুখটা এমন কষ কষ লাগছে যে?
চিরায়ত রস
মুখ সামলে কথা বল, বেয়াদব কোথাকার! চিরতার রস কাকে বলিস? আমি চিরায়ত রস। আমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রস। যুগে যুগে, কালে কালে সবাই কালের গর্তে হারায়। আমি হারাইনি, আমি হারাই না, আমি হারাব না। চিরকাল আবাল বৃদ্ধ সবাইকে সমানভাবে রসের সাপ্লাই দিয়ে যাই বলেই আমি চিরায়ত রস। আমি আছি বলেই ‘বিচ্ছু’ আজও বাজারে। আমি আছি বলেই ‘বিচ্ছু’ আজ হাজারে। ক্রেস্ট তো দিবাই তার সঙ্গে আজ থেকে তোমরা সবাই আমারে স্যার ডাকবা। স্যার! ঠিকাছে?
অন্য চোখে
খালি চোখে সবকিছু দেখা যায়? যায় না। একটু অন্যভাবে দেখতে অন্য চোখ লাগে। আমি সেই অন্য চোখ। যাদের দেখার চোখ আছে, তাদের চোখে আমি বিরাট কিছু। আর যাদের সেই চোখ নেই, তাদের চোখে কিছুই না। বিচ্ছু বাহিনীর সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার, গরুর মধ্যে বলদা আর চিংড়ির মধ্যে গলদা যেমন, তেমনি আপনারাও নিজ নিজ জায়গায় বিগ শট। বেস্ট আর ক্রেস্টের মানদণ্ডে যদি বিচার করতেই হয়, তবে বলতে হয় বিচ্ছুর এ হাজারতম চূড়ায় ওঠার সাফল্য, এ জনপ্রিয়তা কারও একক অর্জন নয়, সবার অবদানের মিলিত যোগফল। তাই আসুন সবাই মিলে জোর গলায় বলি, গর্জন যার যার, অর্জন সবার।
