|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাফি সাহেবের প্রথম গল্পের বই বের হয়েছে। তিনি খুশিতে নাচতে নাচতে খবরটা প্রথমে তার বউ নায়লাকে দিলেন, ‘বউ, বউ, আমার একটা বই বের হয়েছে।’
নায়লা তখন ঘর গোছাচ্ছিল। সে হাতের কাজ ফেলে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এমন করে চিৎকার করতেছ, যেন লটারিতে বিশ লাখ টাকা পাইছ। এত খুশি হওয়ার কী আছে? বই লিখে কী এমন দেশোদ্ধার করবে শুনি? বই লিখে কয় লাখ টাকা বাসায় নিয়ে আসছ? নেই কাজ তো খই ভাজ। আসছে আমার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!’
রাফি সাহেব কিছুটা দমে গিয়ে বললেন, ‘আহা! বুঝতে পারছ না কেন? বই লিখে টাকা বেশি না পেলেও সম্মান পাওয়া যায়। লেখকদের কত মানুষ সম্মান করে তা তুমি জানো?’
নায়লা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, ‘টাকা থাকলে সম্মান এমনিতেই জেট প্লেনের মতো দৌড়ে আসে। টাকা নাই সম্মান নাই। টাকা কামাইয়ের মুরোদ নাই রবীন্দ্রনাথ হবার শখ!’
দুই-চারটা বই বিক্রির আশায় তিনি তার ছোটবেলার এক বন্ধুকে ফোন দিলেন, ‘দোস্ত, আমার বই বের হয়েছে।’
‘তোর বই বের হয়েছে? কীভাবে বের হলো? হারিয়েছিল কীভাবে? নিশ্চয়ই পরিচিত কেউ তোর বাসা থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল?’
‘আরে বাবা, আমার লেখা বই বের হয়েছে।’
‘ও আচ্ছা, ভালো।’ বলেই বন্ধু ফোন রেখে দিল।
তিনি এবার মনমরা হয়ে তার এক কলিগকে ফোন দিলেন, ‘আমার বই বের হয়েছে।’
‘আপনার বউ বের হয়েছে? বউ বের হবে না তো সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকবে নাকি? তার কি বের হওয়ার রাইট নাই? শোনেন ভাই, বউকে একটু স্বাধীনতা না দিলে চলবে? এত টেনশনের কিছু নাই, দেখেন ভাবি হয়তো মার্কেটে গেছে, না হয় কোনো আত্মীয় বাড়ি।’
কলিগও কথা শেষ করার আগেই ফোন রেখে দিয়েছে।
রাফি সাহেব ভয়াবহ মন খারাপ করে ফেললেন। মন খারাপ অবস্থায় মায়ের ঘরে ঢুকলেন। মা তখন নামাজ পড়ে তসবিহ জপছিলেন।
ছেলেকে পাশে বসতে দেখে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, ‘তোমার মন খারাপ কেন, বাবা?’
‘মা, আমার একটা বই বের হয়েছে?’
‘কী বই বাবা? চেকবই?’
‘না মা, গল্পের বই।’
‘বাহ! আমার বাপ দেখি বড় লেখক হয়ে গেছে। একেবারে হূমায়ুন আহমেদ।’
‘দোয়া করো মা, যেন বই বিক্রি হয়। পাঠক যেন বই কেনে।’
‘পাঠক বই না কিনলে টেনশন লইস না বাজান। আমি আছি না? দরকার হলে তোর সব বই আমি কিনব। টাকার টানাটানি হলে বল একটা জমি বিক্রি করে দিই।’ বলেই তিনি ছেলের মাথায় ফুঁ দিয়ে দোয়া করে দিলেন।
মায়ের ঘর থেকে বের হয়ে নিজের শোবার ঘরে ঢোকার সময় তিনি বাইরে থেকে আওয়াজ পেলেন নায়লা তার এক বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে, ‘আরে কী বলিস, তোর দুলাভাই তো ধুমাইয়া অটোগ্রাফ দিতেছে। তার কি নাওয়া-খাওয়ার টাইম আছে? বাসাভর্তি লোকজন। সবাই অটোগ্রাফসহ বই চায়। তোর বই লাগলে বলিস, অটোগ্রাফসহ পাঠিয়ে দেব। আরে তোর দুলাভাই যদি অটোগ্রাফ দেওয়ার সময় না পায় আমি আছি কী করতে? প্রয়োজনে আমি নিজের অটোগ্রাফ দিয়ে পাঠিয়ে দেব। তুই আমার বান্ধবী বলে কথা!’
বাইরে দাঁড়িয়ে রাফি সাহেব মনে মনে হাসেন, এই না হলে বউ!
