Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

ওয়াসা : পানি নিয়ে ধোঁয়াশা

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পানি নিয়ে ভাবনা, আর না আর না-যুগপৎ মনোহর-আশাজাগানিয়া বিজ্ঞাপনটি অতীতে প্রচারিত হতো বাংলাদেশ টেলিভিশনে। পানির অপর নাম সবসময় জীবন নয়, কখনো কখনো ক্রনিক হাঁপানির মতো ভয়ংকরও বটে।

শাকিল হোসেন ছাপোষা কেরানি হলে কী হবে, তার স্ত্রীর দু’চোখ সোনা-দানায় মোড়ানো। সারা অঙ্গে ঝলমল করবে সোনার গহনা, হাঁটার সময় ঢংঢং-ঝনঝন বেজে স্বর্ণগুলো অস্তিত্ব জানান দেবে-জনমভর এমন স্বপনই দেখে এসেছে তিথি। চারপাশের আত্মীয়স্বজন, বউ-ঝি-ভাবিরা যখন সোনার গহনা পরে ঢলাঢলি করে, সে তখন নিজের মধ্যে থাকে না। কথায় কথায় তিথির খোঁটার নিচে থাকতে হয় শাকিলকে, ‘বিয়ের পর আমাকে কী দিয়েছ? জীবনটা বরবাদ করে দিয়েছ!’

মেনে নেওয়ার মতো শাকিল বলে, ‘বরবাদ করিনি, মাটি করেছি।’

‘তুমি দাগি-জংলির মতো পিনিক দিয়ে কথা বলবে না। তোমার চক্কর আমি বুঝি!’

‘ঈদের সিনেমার ভালো বিজ্ঞাপন হয়ে গেল!’

‘নাটক কম কর পিও। গয়নাগাটি কিনতে শেখো!’

গলায় সুর থাকলে শাকিল গেয়ে শোনাতে পারত ‘এই মণিহার আমার নাহি সাজে...’ গানটি। অসুরের ব্যাপার যেহেতু, কবিগুরুকে মুক্তি দেওয়া গেল। শাকিল সবাইকে অকাতরে মুক্তি দিলে কী হবে, তিথি ছাড়ে না একটুও! কথায় কথায় সে বাপের বাড়ির জমিদারির গল্প শোনায়। নতুন করে আবার ওয়াসার পানির পেছনে লেগেছে। এই পানিতে নাকি দুর্গন্ধ, পানি রঙিনও হয়ে যায় কখনো-সখনো, ময়লা আসে, কেঁচো ভাসে, কিলবিলে পোকা হাসে-আরও কত অভিযোগ!

রঙ্গে ভরা রাজধানীর জীবনে শাকিল অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও নববধূ তিথি মানবে কেন? তার দাদার ছিল বিরাট পুকুর, সেই পুকুরের গভীরে-তলদেশে কী কী মাছ চলাফেরা করত-পরিষ্কার দেখা যেত। মাছ ধরার সময় নৌকায় চড়ে যে মাছটা ধরতে চাইত, সেটার উপরে জাল ফেললেই চলত। এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ কথা কি ওয়াসার লোকজন আমলে নেবে? তারা হয়তো বলে বসবে, ওই পুকুরপাড়ে গিয়েই বসবাস করুন না, ঢাকায় পানির চাপ বাড়াচ্ছেন কেন!

এমনিতেই অফিসে যাওয়ার তাড়া, পানি না থাকায় গোসল হয়নি। একটু আগে পানি এলো। সেই পানি পাতিলে ধরে এনে সামনে রাখল তিথি, ‘এই দেখ তোমার পানি! পানিরে পানি পাগলা পানি/খাইয়া লাগে কেমন জানি!’

শাকিল দেখল, কিছু প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করল তাতে। সান্ত্বনা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, ‘এগুলো ফেলে দিয়ে নতুন পানি নাও। সেখানে নিশ্চয়ই জন্তু-জানোয়ার থাকবে না।’

কথামতো তাই করল তিথি। এবার পানির রং বদলে গেল। এ যেন নীলিমায় নীল! কেন এমন হচ্ছে ভেবে পেল না শাকিল। সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘ওরা আজকাল বোধহয় নীলসাগর থেকে পানি সরবরাহ করছে।’

‘নীলসাগর? সেটা আবার কোথায়!’

‘বইয়ে পড়োনি? সিন্ধুনদের তীরে!’

প্রসঙ্গ পালটে তিথি বলল, ‘তুমি কেন ওয়াসার চাকরি জোগাড় করতে পারলে না?’

‘ওই চাকরি পেলে আমিও লাখো মানুষের কটুবাক্য শুনতাম। এখন শুধু তোমারটা শুনে সন্তুষ্ট থাকতে পারি!’

গোসল করা হলো না, নাস্তাও না। শাকিল বাইরে এসে দুইটা বিস্কুট আর এককাপ চা খেয়ে নিল। বিল দিতে গিয়ে হিসাব মিলল না। বুঝিয়ে দিয়ে দোকানদার বলল, ‘দেড় গ্লাস পানি খাইছেন না? ওইখানে পাঁচ টাকা।’

‘পাঁচ টাকা কীভাবে হয়? বড়জোর তিন টাকা হবে!’

‘খুচরা জিনিসের দেড়গুণ দাম। সামনে লেখা আছে দেখেন-একটু পানি পাঁচ টাকা!’

হোটেলে তরকারির মতো ‘থোড়া’ নেওয়ার আদলে আধা গ্লাস পানি খেয়েছিল শাকিল, সেটার এমন মাশুল?

অফিসে পৌঁছে টেলিভিশন স্ক্রলে দেখল এক্সওয়াই পার্টির মন্তব্য-‘আমরা ক্ষমতায় গেলে ওয়াসার পানি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেব! পোকার বদলে নগরবাসী সোনা পাবে।’

এটাই তো হওয়া জরুরি! যদি সত্যিই হয় তিথির কাছে লজ্জা পেতে হবে না। সহকর্মীর সামনে শরীর চুলকিয়ে, জায়গা-বেজায়গায় খোসপাঁচড়া বাঁধিয়ে ফেলার কারণেও লজ্জা পেতে হবে না।

কিছুক্ষণ পরে সহকর্মীর পরিচিত একজন আদম সাপ্লায়ার এলেন। জাপানে লোক পাঠাচ্ছেন গোপনে। কী একটা কায়দা নাকি করে ফেলেছেন। শাকিলের বিমর্ষ চেহারার দিকে তাকিয়ে দয়াপরবশ হয়ে বলল, ‘যাবেন নাকি জাপানে?’

জাপান যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগেই কল এলো তিথির। বলল, ‘ফেরার সময় দোকান থেকে আট লিটারের মিনারেল ওয়াটার বোতল কিনে এনো। এখনকার পানিতে ময়লা আসছে। ফোটানোও যাচ্ছে না।’

এই জেনারেল জীবনে মিনারেল ওয়াটার কেনার টাকা কোত্থেকে আসবে-তিথিকে এমন প্রশ্ন করার সাহস পেল না শাকিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম