রম্যগল্প
মামু’র নতুন দলের আত্মপ্রকাশ
তানভীর আলাদিন
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘মামু কই? মামু আমাকে এখানে আসতে বলেছেন?’
‘কোন মামু? কার মামু?’
‘চেরাগ আলী, আমার মামু হয়।’
‘কেমন মামু?’
‘তিনি ছাত্রজীবনে আমার নানার বাড়িতে লজিং ছিলেন, ওই রিস্তায় মামু লাগে।’
‘ও আচ্ছা, স্যারে তো মিটিংয়ে আছেন, বসুন আপনি। তা আপনি কী করেন?’
“খাই দাই ডটকম’র সম্পাদক আমি।’’
‘তার মানে, আপনি সাংবাদিক। এবার বুঝলাম, স্যার আপনাকে কেন আসতে বলেছেন।’
‘কেন বলুন তো?’
‘আমাদের স্যার একটা নতুন পার্টি খুলতেছেন।’
‘পার্টি খুলতেছেন! কী পার্টি? মামু তো ম্যানপাওয়ারের কারবারি।’
‘হ্যাঁ, এবার স্যারে ম্যানগুলোর থেকে পাওয়ার নিয়ে লিডার হতে চান।’
‘পলিটিক্যাল পার্টি!’
‘হ্যাঁ, ওটাই।’
‘হঠাৎ?’
‘অনেকেই খুলতেছে, তাই স্যারেরও একটা পার্টি খোলার খায়েস।’
‘খায়েস হলেই হয়ে গেল! একটা পার্টি গড়তে কত কী লাগে।’
‘আমিও স্যারকে এই কথাটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম।’
‘তিনি কী বললেন?’
‘বললেন, সময় মতো সব জোগাড় হয়ে যাবে।’
‘জানতে চাননি কীভাবে?’
‘জানালেন ওইসব ভূতে জোগাড় করে দেবে, ওনার এখন প্রধান কাজ নাকি ভূতগুলোকে জোগাড় করা।’
‘তা পার্টির নাম-ধাম ঠিকঠাক করেছেন?’
‘পাবলিক জাগো-সময়মতো ভাগো দল।’
‘বাহ্। তা দলের প্রতীক কী?’
‘গোল আলু।’
‘ছি! এটি কোনো প্রতীক হলো?’
‘শুনে, আমিও ছি করেছিলাম, তখন স্যারে বললেন, গোল আলু একমাত্র সবজি যা সব তরকারির সঙ্গেই মানায়।’
‘আচ্ছা, তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু, দলের একটা স্লোগান লাগবে না?’
“তাও ঠিক করা হয়ে গেছে। ওটা হলো-‘বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা’।”
‘মারিং-কাটিং?’
‘ওই আর কী, সময়োপযোগী কারবার...।’
‘তা নীতি কী ঠিক করেছেন?’
‘ওটা প্রাথমিক পর্যায়েই আছে, যেমন-‘বিকাশ, নগদ, রকেট’। মনে হয় নীতি হিসাবে এগুলোই চূড়ান্ত হবে।’
‘এগুলো কেন?’
‘ওই যে, ‘বুঝলে বুঝপাতা, না বুঝলে তেজপাতা’।’
‘আচ্ছা এই দলের বছরজুড়ে কর্মসূচি থাকবে না?’
‘শুনেছি এক বছরের কর্মসূচিতে হাঁস পার্টি থেকে শুরু করে আরও অনেক পার্টির এন্তেজাম রাখা হবে।’
‘সবটাই তো খানা-দানার কারবার। আমার ডটকমের সঙ্গে মানাবে দেখছি।’
‘স্যার বললেন, তিনি একা খাবেন না, সবাইকে নিয়েই খাবেন।’
‘তা আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে। মামু মিটিং থেকে বের হবে কখন?’
‘ভূতগুলোকে মগজধোলাই করছেন তো, ওদেরকে বশ মানিয়েই ফিরে আসবেন।’
‘বুঝলাম না, কী আবোল-তাবোল...’
‘আরে বুঝলেন না, যেহেতু নতুন পার্টি করার কর্মযজ্ঞ তাই জোগাড়-যন্তের বিষয়, তাই ওগুলো তো হাওয়া থেকে বের করতে হবে, তাহলে তো মানুষের মতো কিছু ভূতের সাহায্য লাগবেই। তাও চৌকস ভূত হওয়াও জরুরি। তবেই তো দেশ-বিদেশ থেকে মালকড়ি, সুবুদ্ধি-কুবুদ্ধির আমদানি হবে, তারপর খিচুড়ি পাকিয়ে গড়া হবে স্যারের পার্টি।’
‘যেমন?’
‘আচ্ছা, আপনার মামু মানে আমার স্যার আপনাকে হঠাৎ করে কেন ডেকে পাঠালেন?’
‘আমি ঠিক জানি না।’
‘আমার মনে হয়, এতক্ষণে আমি জানি।’
‘কীভাবে জানেন?’
‘আচ্ছা, আপনার মামু পার্টি বানাবেন, তার জন্য প্রচার-প্রচরণার দরকার আছে না। তাহলে ঘরের ভেতর নিজের ভাগনেকে রেখে বাইরে যাবেন কেন। আপনি সাংবাদিক মানুষ, আপনার নিউজ দিয়ে স্যারেরে সহযোগিতা করবেন।’
‘তা তো ঠিক, এটি মামু চাইতেই পারেন। আচ্ছা এতে আমার কী কোনো লাভ হবে? মামু তো একটু কিপ্টা কিসিমের মানুষ।’
‘তা ঠিক, তবে আপনার লাভ হবে তাও ঠিক, কারণ আমার স্যার তো জানেন, কখন-কোথায়, কতটা ঢালতে হয়। সময় মতো ঢেলে দেন। তাই আপনি নিরাশ হওয়ার দরকার নাই।’
‘তা আমি এখন যাই, মামুকে বলবেন আমি এসেছিলাম, আপনি যে আমাকে মামুর নতুন পার্টি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন তাও বলবেন। আমি সময় করে আগামীকাল আবার আসব।’
‘আসুন, কারণ আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমাদের নতুন পার্টি ‘পাবলিক জাগো-সময়মতো ভাগো দল’ আত্মপ্রকাশ করবে।’
খিলগাঁও, ঢাকা।
