Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

পড়ছে গরম হরেক রকম

কথা বলা থেকেও গরম ছড়ায়। যে গরম পড়ছে, আমাদের উচিত...! * কী বললা? আমি গরম ছড়াই? আজ দেখাব গরম কাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী? * আহা, পুরো কথাটা তো শুনবে। বললাম, যে গরম পড়েছে আমাদের উচিত প্রতি ঘরে এসি আর ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে কথা বলা।

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আগে কখনো এমন আচরণ করেনি রুহুল আমিন। বউ হিসাবে কুসুমকে সবকিছুর ঊর্ধ্বেই রেখেছিল। কিন্তু এখন ওর কী যেন হয়েছে, একটু উনিশ-বাইশ হলেই ধমক দেবে-‘খবরদার, মাথা কিন্তু গরম আছে!’

সেদিন কুসুমের মাথাও গরম হয়ে ছিল। প্রচণ্ড গরম পড়ছে দুপুর থেকে। রান্নাবান্না করা যায়নি। ভরগরমকালেও চুলা জ্বলছে কেরোসিন ফুরিয়ে যাওয়া কুপির মতো। কারও ওপর রাগ ঝাড়তে না পেরে নিজের ওপরই রেগেছিল। কেন বাবা-মায়ের কথামতো মধ্যবিত্ত কেরানিটাকে বিয়ে করতে গেল। ভালো পরিবারে বিয়ে হলে এখন নিশ্চয়ই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো রুমে রাজরানির মতোই পায়ের ওপর ঠ্যাং তুলে বেলের শরবত খেতে পারত।

গরমে তেতে ছিল রুহুলও। তাই দরজা খোলার সময়টুকু না দিয়ে ক্ষেপল-‘কী নিয়ে ব্যস্ত থাক আজকাল? সময়মতো দরজা খুলতে পার না!’

শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কুসুম জবাব দিল-‘আমি ডানাওয়ালা পরি নই যে উড়ে এসে দরজা খুলব। হেঁটে আসতে এক মিনিট সময় লাগে না?’

‘এক সেকেন্ডের বেশি সময় কেন নেবে তুমি! ডানা লাগলে কিনে নাও না কেন?’

‘কী হয়েছে তোমার?’

আঙুল বাঁকা করে গালের ঘাম মুছতে মুছতে রুহুল বলল, ‘গতকালও দরজা খুলতে দেরি করেছ।’

‘কী বোঝাতে চাইছ?’

গলা চড়ল রুহুলের-‘কিছুই বোঝাতে চাই না। দ্যাখ, মাথা কিন্তু গরম আছে!’

ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে বল ছোড়ার মতো করে কুসুম বলল, ‘মাথার কোন পাশটা গরম? ঠান্ডা করে দিচ্ছি এখনই।’

এবার মিনমিন করে রুহুল বলল, ‘কেমন যেন জ্বর-জ্বর ভাব আছে। দুপুরে প্যারাসিটামল খেয়েছি। বাসায় ট্যাবলেট আছে? থাকলে আরেকটা খাব।’

‘ট্যাবলেট পরে। আগে বরফমিশ্রিত শরবত খাও।’

রাগারাগি ভুলে হাতের বরফটা নিয়ে শরবত বানানোয় লেগে পড়ল কুসুম। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল রুহুল। কুসুম যদি সত্যি সত্যিই বরফখণ্ডটা ছুড়ে মারত-কী ভয়ংকর কাণ্ড হতো।

বরফ-পানি খেয়ে রুহুলের মাথা ঠান্ডা হলো কিছুটা। ভাবল, ‘মাথা গরম আছে’ হুমকি আর দেওয়া যাবে না। শেষে যদি মাথাটাই বেহাত হয়ে যায়! রুহুলকে নমনীয় দেখে কুসুম আহ্লাদের সুরে বলল, ‘দ্যাখো না, অফিস থেকে লোন করে হলেও একটা এসি কেনা যায় কিনা। গরমে টিকতে পারছি না।’

‘সকালে তুমি কী সব আনতে বলেছিলে- মনে আছে?’

‘হ্যাঁ। চাল-ডাল, মাছ, সবজি।’

‘একটাও আনতে পারিনি। বাজার গরম।’

‘প্রকৃতির গরম বলেছি, এতেই তোমার জন্য বাজার ঘেমে গেল!’

‘একটা জিনিসও আনতে পারিনি। বাজার করার টাকা নেই।’

‘তাহলে না খেয়ে মারা যাব?’

‘বলা যায় না। গরমেও মারা যেতে পারি! এই দ্যাখো, আমার শার্ট-সবই ভিজে জবজবে হয়ে গেছে।’

দুই.

যুদ্ধের গরমে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে অফিসে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ লেগেই গেল, এরপর কি আমেরিকা-চীন-রাশিয়া মহাযুদ্ধ আসন্ন! পাকিস্তান ভেঙে কত টুকরো হবে, অভ্যুদয় ঘটবে কয়টা স্বাধীন দেশের? ভারত ভেঙে কত টুকরো হবে? এ অফিসে ভূ-রাজনীতি পর্যবেক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তক কম নেই। তারা চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে একের পর এক। রুহুল ঘটনার ঘনঘটায় অনুপ্রবেশ করতে না পেরে মৌনব্রত পালন করল। চুপ দেখে সহকর্মীরা টিপ্পনি কাটল-‘রুহুল সাহেবের মন ভাঙল কোন দেশের আসন্ন পরাজয়ে?’

রুহুল ক্লান্ত স্বরে বলল, ‘বাজারে গিয়ে যারা পরাজিত হয়ে ফেরে, কোনো দেশের জয়-পরাজয়ে তারা বেশি ভাবে না।’

‘বাজারে সবজির দাম কম।’

‘আপনারা ফেসবুক বাজার থেকে কেনাকাটা করেন বলেই এমন মনে হয়!’

‘আর আপনি গুলশান মার্কেট থেকে সওদা কিনলে বাড়তিই পাবেন!’

‘গুলশানে নয়, আমি গুলিস্তানে বাজার করতে চাই। একদিন গিয়েছিলাম। দেখি জামাকাপড়, নাট-বল্টু ছাড়া আর কিছুই নেই। অবশ্য রাতে গেলে মাজারের খিচুড়ি খেয়ে আসতে পারতাম!’

আলাপ এগিয়ে যাচ্ছিল পরস্পরকে কথার ঘায়ে ঘায়েল করার পদ্ধতিতে। এ সময় কল দিল কুসুম। কোমল কণ্ঠে বলল-‘ওগো, তোমার মাথা গরম আছে তো?’

‘এটা কেমন কথা?’

‘গতকাল মাথা গরম বলে ট্যাবলেট খেয়েছ। আজও একটা খেয়ে নাও।’

‘এজন্যই কল করেছ?’

‘আরেকটা কথাও বলার ছিল। জ্যোতি ব্র্যান্ডের রং ফর্সাকারী একটা ক্রিম এনো।’

‘জীবন জ্বলে যখন তামা তামা হয়ে যাচ্ছে, তখনো তুমি সাদা চামড়ার চিন্তায় থাকবে? আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর টুথব্রাশ-পেস্ট কিনব না। ওসবের দামও বাড়তি। এখন থেকে কয়লা দিয়ে দাঁত মাজব। টাকা বাঁচবে, দাঁতও সুন্দর থাকবে।’

রুহুল যখন অফিস ছাড়ল-পিচঢালা রাস্তায় রাজনীতির গরম নেমেছে। দাবিদাওয়া আদায়ে কারা যেন রোড বন্ধ করে দিয়েছে। গাড়ি পাওয়া যাবে না। মাথার ঘাম রাস্তায় বিসর্জন দিয়ে হেঁটেই যেতে হবে!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম