|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পছন্দের একটা ফুলদানি ছিল, সেটা আজ দুপুরে রিমির হাত লেগে ভেঙ্গে গেছে। এটা নিয়ে হুলুস্থুল কাণ্ড। রিমি অনেক গবেষণা করে আবিষ্কার করেছে, এক বছর আগে ঘর সাজানোর সময় ফুলদানিটা তার জামাই জিসান এখানে রেখেছিল।
অতএব সব অপরাধ জিসানের। সে কেন এক বছর আগে এখানে ফুলদানি রেখেছিল!
যখন গালি মৌমাছির মতো তেড়েফুঁড়ে আসছে, সহ্য করতে না পেরে বেচারা ঘর থেকে বের হয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে বসে রইল। সময় কাটানোর জন্য দশ কাপ চা খেল, মনে মনে বললো, ‘শালা রাগ দেখায় বউ আর লাভ হয় চা দোকানির!’
বিকালে বাসায় ফিরে জিসান অবাক হয়ে দেখে তার ঘরদোর ঝকঝকে তকতকে পরিষ্কার! সে রিমিকে ডেকে বলল, ‘ঘটনা কী বউ? মনে হয় নিজের ঘর না, পাঁচ তারকা হোটেলে ভুল করে ঢুকে পড়েছি। কাহিনী কী? আজকে ফেসবুক চালাও নাই?’
রিমি খুবই দুঃখী দুঃখী গলায় বলল, ‘আমার মোবাইলের চার্জার খুঁজে পাচ্ছি না। ওটা খুঁজতে গিয়েই ঘরদোর পরিষ্কার হয়ে গেছে!’
জিসান মনে মনে প্রার্থনা করল, বউয়ের চার্জার যেন প্রতিদিনই হারায়! তারপর বিছানায় টুপ করে শুয়ে চোখ বুজে রইল ।
জিসানকে শুতে দেখে রিমির গা জ্বলতে লাগল। সে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, ‘বিয়ের আগে ভেবেছিলাম তুমি একটা শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট ভদ্রলোক, যে কিনা ভাজা মাছটিও উলটে খেতে জানে না। এখন কী দেখছি? তুমি কাঁটাসহ গপগপ করে মাছ খাওয়া পাবলিক।’
জিসান শোয়া থেকে উঠে অবাক হয়ে বললো, ‘আমার ওপর এমন পারমাণবিক বোমা ফেলার কারণ কী জানতে পারি?’
‘আমি চার্জারের টেনশনে মরে যাচ্ছি, মনে হচ্ছে আমার হার্ট অ্যাটাক হবে। দুপুর থেকে ফেসবুকে ঢুকতে পারছি না, আর তুমি এসেই কুম্ভকর্ণের ঘুম শুরু করে দিলে। এই তোমার বউয়ের প্রতি ভালোবাসা? আগে বুঝি নাই, তুমি আসলে একটা মাছ বিক্রেতা!’
‘মাছ বিক্রেতা মানে?’
‘মানে হচ্ছে, তুমি আস্ত একটা সেল-ফিস।’
‘তুমি দেখি ইংরেজিতে নোবেল জয় করা পাবলিক! এত ইংরেজি কোথায় শিখলে?’
রিমি সেদিকে না গিয়ে বিরক্ত গলায় বললো, ‘তোমার এত ঘুমাতে হয় কেন, শুনি?’
জিসান আবারও হাসতে হাসতে বললো, ‘আমার বাপ, দাদা চৌদ্দ পুরুষ কম ঘুমাইছিল। এখন আমি সেটা পুষিয়ে দিচ্ছি।’
রিমি একটা হেঁচকি তুলে নাকি সুরে বলল, ‘তোমার মতো অপদার্থ আমি জীবনে দেখি নি। এক বছর হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে, এখনো একটা চাকরি জোগাড় করতে পারলে না, খালি ঘুম আর ঘুম!’
জিসান একটা হাই তুলে বললো, ‘চাকরি জোগাড় করব কীভাবে বল? শালা, আমরা বাঙালিরা প্রাণ দিলাম বাংলার জন্য, আর চাকরি হয় না ইংরেজি পারি না বলে!’
‘তুমি শুধু ইংরেজি পার না? অঙ্কেও তো শুনেছি তুমি খুবই দুর্বল!’
জিসান কথা কেড়ে নিয়ে বললো, ‘অঙ্ক একটা সাবজেক্ট হলো? খালি ধরাধরি আর করা করি! আবার এক্সের মান বের করতে হয়। স্কুল কলেজের জীবনে আমার এক্স থাকলে না হয় কথা ছিল!’
রিমি কিছুক্ষণ জামাইয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল, তারপর আফসোসের সুরে বলল, ‘এ ছিল আমার কপালে! মানুষ এতো বোকা হয়!’
জিসান লাফিয়ে উঠল, ‘আমিও কি আর জানতাম, বিয়ের পর জামাইয়ের চেয়েও মোবাইল তোমার প্রিয় হবে! মোবাইল চালানোর জন্য বাপ মায়ের হাত মাইর খাও নাই?’
রিমি চোখ গরম করে, ‘একদম ফাউল কথা বলবে না। আমার মা-বাবা আমাকে কত আদর-যত্ন করে মানুষ করেছে সেটা তুমি জান?’
জিসান আবারো হাসতে হাসতে রিমির একটা হাত ধরে বলল, ‘তোমার মা বাবা তোমাকে আদর যত্ন করে মানুষ করেছে, আর আমার মা বাবা কি আমাকে অনলাইন থেকে অর্ডার করে এনেছে? তারাও আমাকে আদর করেই মানুষ করেছে।’
রিমি ঝাড়া দিয়ে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়, ‘এই, একদম আমার হাত ধরবে না। খুন করে
ফেলব কিন্তু। আমি যাকে তাকে আমার হাত ধরতে দিই না।’
‘কেন, তোমার হাত ধরলে কী হবে? পাপ হবে?’
রিমি বিরক্তি প্রকাশ করে, ‘পাপ তো পাপই, সেটা বিয়ের আগে করলেও পাপ, বিয়ের পর করলেও পাপ। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কী জানো? বিজ্ঞান তোমাদের মতো শয়তানকে চেনাতে কোনো যন্ত্র আবিষ্কার করতে পারে নি। তোমার মতো গাধার সঙ্গে সংসার করার চেয়ে হালকা করে মরে যাওয়া ভালো!’ বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল রিমি। বউয়ের কথা শুনে বেচারা জিসান সেখানেই স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
