রম্যগল্প
শুভেচ্ছা অভিনন্দন শুভকামনা
শফিক হাসান
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কবি হিসাবে আমি মোটেও ঈর্ষাপরায়ণ নই। তাই নতুন লিখিয়ে ইফ্ফাত মেহেজাবিনকে স্বাগত জানিয়েছি। সমতায় না হোক, আমি বিশ্বাস করি সংখ্যাভিত্তিক প্রতিযোগিতায়। এই মুহূর্তে যদি বাংলাদেশে পাঁচ লক্ষ কবি থাকে, ইফ্ফাত আরও একটি সংখ্যা বাড়িয়েছে। এটা ভালো দিক। পাঁচ লক্ষাধিক প্রতিযোগীর সঙ্গে কবিতা মাঠে খেলে যদি শীর্ষ দশে পৌঁছাতে পারি, সেটা কবি হিসাবেই আমার সার্থকতা। গত সপ্তাহে একজনের সঙ্গে ঝগড়া করে টিউশনির বকেয়া টাকা তুলতে যখন পেরেছি, এটাও নিশ্চয়ই পারব।
ইফ্ফাত মেহেজাবিনের আগমন শুক্কুরে শুক্কুরে তিনদিন হয়নি, এর মধ্যেই বারোটা কবিতা প্রকাশিত হয়ে গেছে। গুপ্ত রহস্যটা কী! সে দেখতে আমারই মতো। যদি সারিকা তারান্নুম, বুলবুল ইয়াসমিন-জাতীয় কেউ হতো, মনকে বুঝ দিতে পারতাম সুন্দরী কোটায় সুযোগ পেয়েছে। তা-ও তো নয়! অত ভেবে কাজ কী, মেসেনজারে কল করতে টাকা লাগে না। ফেসবুকজীবীরা দিনে-রাতে কখনোই ঘুমায় না। যে কোনো সময় সাহস করে কলটা দিতে পারলেই হলো। কবি হিসাবে আমি জ্যেষ্ঠ, ইফ্ফাত নিশ্চয়ই রাগ করবে না।
ধারণাই সঠিক হলো, বর্ষার নতুন পানির মতো কলকলিয়ে উঠল সে-‘মিজান ভাই, কেমন আছেন? নতুন কী লিখছেন!’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, ‘লিখছি অনেক কিছুই কবি ইফ্ফাত মেহেজাবিন, প্রকাশ পাচ্ছে না তেমন। আচ্ছা তুমি কী কর, কীভাবে এত লেখা ছাপাও?’
এবার যেন বন্যার পানির তোড়ের মতো হেসে উঠল ইফ্ফাত- ‘আমি নতুন কিছুই করি না। আপনার নির্দেশিত পথে চলি!’
‘কী সেটা?’
‘ঘুরে-ফিরে সাহিত্য সম্পাদকদের পোস্টে লাইক কমেন্ট শেয়ার দেওয়া। তাদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে লেখার প্রশংসা করা। খোঁজখবর নেওয়া।’
‘শুধু এই?’
‘আপনি হারিয়েছেন খেই?’
‘আমি ছিলাম, এখন নেই!’
কবিতার ছন্দে বলা হলেও কথাটা সত্য। নবীন কবি থাকার প্রাক্কালে আমিও যেখানে-সেখানে অকাতরে লাইক কমেন্ট শেয়ার করতাম। কিছুটা সিনিয়র হয়েছি ভেবে ওসব কাজ বাদ দিয়েছি। এখন দেখতে পাচ্ছি, প্রকৃত কবি কখনো জ্যেষ্ঠ হয় না। তার কাছে জৈষ্ঠ্য মাস যা, চোত মাসও একই।
পুরোনো তরিকায় ফিরে গিয়ে যার তার পোস্টে অকাতরে মন্তব্য করতে লাগলাম। যেহেতু আমার লক্ষ্য ‘টাচে থাকা’ তাই পোস্ট পড়ার প্রয়োজন মনে করলাম না। কয়টা পোস্টইবা পড়তে পারব? বন্ধু-শুভানুধ্যায়ী তো কম নয়। সময়ক্ষেপণ না করে কমেন্ট বক্সে লিখে দিতে শুরু করলাম ‘শুভেচ্ছা’, ‘অভিনন্দন’, ‘শুভকামনা’। লিখে দেওয়াও নয়, কপি-পেস্ট করা। একটা ফাইলে তিনটা শব্দ মজুত রেখেছি। জায়গামতো শুধু সরবরাহ করি। সুফল মিলল অল্প সময়েই। মেসেনজারে কল দিলেন জলডুবি ওয়েব পোর্টালের উপ-ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মান্নান মেহেদী। কল রিসিভ করেই আনন্দিত গলায় বললাম, ‘আমার কবিতাটা ভালো লেগেছে মান্নান ভাই? প্রকাশ করতে চান? প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করতে পারেন। আপত্তি নেই। আপনাদের কাছে আমাদের পাণ্ডিত্য দেখানো খাটে না।’
গম্ভীর কণ্ঠে উপ-ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বললেন, ‘এটা আমি তোমার কাছ থেকে আশা করিনি, কবি মিজানুল হক।’
‘কোনটা ভাই? কবিতা বেশি দুর্বল হয়েছে?’
‘রাখো তোমার কবিতা। আমার বাবা মারা গেছেন গতকাল। পোস্ট দিয়ে সেই খবর জানালাম, আর তুমি মন্তব্য করলে ‘অভিনন্দন’। এটা আমার অর্জন নাকি বিসর্জন!’
কী সর্বনাশ! মাছ দিয়ে শাক ঢাকার চেষ্টা করে বললাম, ‘স্যরি, ভাই। আপনার কৃতিত্বপূর্ণ কোনো পোস্টে মন্তব্যটা করতে গিয়েছিলাম। বোধহয় সেখানে না গিয়ে এটাতে পড়ে গেছে। এমন ভুল আর হবে না।’
‘তুমি আমাকে কখনো কবিতা পাঠাবে না। তোমার কবিতা
হয় না।’
আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলেন তিনি। টাকি পিছলে গেলে শোল আসে। কিছুক্ষণ পর কল করলেন দৈনিক বিরোধীপক্ষ’র সাহিত্য সম্পাদক জামাল মুক্তাদির। সরাসরি কাজের কথায় গেলেন তিনি- ‘বাস থেকে পড়ে পা
ভেঙেছি, এই স্ট্যাটাসে তুমি লিখলে ‘শুভকামনা’। কেন?’
‘ঠিকই আছে, ভাই। আমি আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। অশুভকামনা করতে পারি না।’
‘কিছু মনে কোরো না। তুমি একটা গবেট।’
‘জি ভাই। নতুন কবিতা লিখেছি। পাঠিয়ে দেব।’
কিছুক্ষণ পর ট্যাগ করে তার ছবিসহ পোস্ট দিলাম- ‘বরেণ্য কবি জামাল মুক্তাদির স্যার অসুস্থ। কারও পরিচিত ভালো চিকিৎসক থাকলে জলদি যোগাযোগ করুন!’
