|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এত বড় আন্দোলনের পরও এ দেশে এখনো অনেকেই এমপি হিসাবে টিকে আছেন। কীভাবে? জানতে চাইলে কষ্ট করে পুরো লেখাটা পড়তে পারেন। অবশ্য শুধু শুধু কষ্ট না করে এমনিতেও পড়তে পারবেন!
১৬ মাস আগে লাবণ্যর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হওয়াটাকে ঠিক ডেটিং বলা যাবে কি না, তা নিয়ে লাবণ্যর তো বটেই, খোদ আমারই ঘোরতর সন্দেহ আছে। অফিসিয়ালি বলা যাবে না ঠিকই, তবে আনঅফিয়ালি? নিশ্চয়ই! এটা ঠিক যে, লাবণ্যর সঙ্গে প্রথমবার দেখা আমার ওইটাই এবং দিনক্ষণ ঠিক করেই। তবুও সেটাকে কেন ঠিক ডেটিং বলতে আধো বাঁধো ঠেকছে, তা নিশ্চয়ই ব্যাখ্যার অবকাশ রাখে। কিন্তু এতটুকু অবকাশ কি পাঠক, আপনার আছে? পড়ে যেহেতু এতদূর এসেছেন, ধরেই নিচ্ছি, আছে। প্রথম যেদিন লাবণ্যর সঙ্গে দেখা, ওটা শুধু আর্জেন্সিই ছিল না, ইমার্জেন্সিও ছিল। কারণ, ওটা ছিল আমার চাকরির ইন্টারভিউ!
চাকরিটা আমার কতটা জরুরি ছিল, বোঝাই। আমি তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাসাহিত্যে সদ্য স্নাতকোত্তর। এত সুন্দর একটা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেখে দেখেই কাটিয়ে দিয়েছি সেশনজটসহ সাত বছর। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে ডিপার্টমেন্টের পড়া তো দূরের কথা, ছোটখাটো একটা প্রেমে পর্যন্তও পড়া হয়নি। সেই আমি ঢাকায় এসে চাকরি জোগাতে খাবি খাচ্ছি। কোথাও টিউশনিও জোটাতে না পেরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা একটা অনলাইন নিউজপোর্টালে সহসম্পাদকের কাজ নিয়েছি। কত কিছুই তো জগতে কারও মন মতো ঘটে না। এই যেমন সাংবাদিকতা করব, এমন লক্ষ্য কখনোই আমার ছিল না। ফলে সাংবাদিকতার স-ও জানি না। সেই আমি হয়ে আছি রীতিমতো সহসম্পাদক!
আমার বস, সিনিয়র সাব-এডিটর মোহসিন ভাই আঞ্চলিক ভাষায় একদিন বললেন, ‘এই অখ্যাত অনলাইনে আর কদ্দিন পড়ে থাকপানে, অমিত? আমার পরিচিত দৈনিক আলুর দোষ পত্রিকায় ভালো বেতনে সহসম্পাদক নেবে, যাবা নাকি ইন্টারভিউ দিতি?’ আমি তো একবাক্যে রাজি!
সেদিন বিকাল চারটায় আলুর দোষ পত্রিকার ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কের ইনচার্জ লাবণ্য তাদের অফিসে দেখা করতে বলেছেন। বেলা তিনটা পর্যন্ত ডিউটি করলাম অনলাইনটায়। এরপর মোহসিন ভাইকে বলে বের হব ইন্টারভিউ দিতে। কিন্তু যা বৃষ্টি! সে সময় আমার আস্ত ছাতা তো ছাতার মাথা, জিনিসটার ডাঁট কেনার পয়সাও নেই! অফিসে আমার এক নারী কলিগ শাওন। সে বোধহয় আমাকে কিছুটা পছন্দও করে। ওকে খানিকটা আহত করার সুযোগ পেয়ে বললাম, ‘শাওন, অসময়ে যে ঝরা ঝরছেন, আমি তো পড়েছি বিপাকে। দিন না আপনার ছাতাটা, একটা ডেটিং করে আসি!’
সেদিনের আকাশের মতোই মেঘগোমড়া মুখ করে ছাতা দিল শাওন। খুশি মনে বাইরে এসে যেই না ছাতাটা মেলেছি, অমনই ঝোড় হাওয়ায় ছত্রভঙ্গ! বুঝলাম, বিপদ যখন আসে ঝড়ে-বাতাসেই আসে! সে যাই হোক, অবশেষে আলুর দোষ পত্রিকা অফিসে এসে হাজির হলাম। এক হাতে ভাঙা ছাতা! অন্য হাতে বর্ষায় ভেজা কদমের ডাঁটা! কদমটা মাঝপথে সংগ্রহ করেছিলাম। কখন সেটা উড়ে গেছে খেয়াল নেই। কেবল ডাঁটাটাই আছে অবশিষ্ট।
রিসিপশনে বললাম, ‘চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছি।’
‘আপনার টাইম তো ছিল চারটায়। এখন বাজে সাড়ে চার! এত লেট করলে হবে? আর হাতে সিভি কই? দেখছি তো ভাঙা ছাতা আর কদমের ডাঁটা।’ রিসিপশনের পাশেই বসা তরুণ বয়সি এক নারী কাটকাট বললেন কথাগুলো।
তখনও জানতাম না, এই তরুণীই লাবণ্য। হাত থেকে ছাতা আর কদম ডাঁটা নিয়ে বলল, ‘সোজা ওয়াশরুমে যান। ফ্রেশ হয়ে নিউজরুমে আসবেন। দুটো নিউজ করতে দেব। সেগুলোয় পাস হলে সম্পাদক কথা বলবেন।’
সেদিন নিউজরুমে দুটো ইন্টারন্যাশনালের লিংক ধরিয়ে দিয়েছিল লাবণ্য। একটার বিষয়-ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ। আরেকটা যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব শেয়ারবাজারের দরপতন। সে দফায় চাকরিটা আমার হলো না। কিন্তু প্রেমটা ঠিকই হয়ে গেল ইন্টারন্যাশনাল ইনচার্জ লাবণ্যর সঙ্গে। লাবণ্যর সঙ্গে দেখা ও ফেসবুকে অ্যাড হওয়ার মাসখানিক পর যখন ঘোর আষাঢ়ে বর্ষা তখন শাহবাগে পাঠক সমাবেশের কফির দোকানে লাবণ্যই ডাকল একদিন। কফি খেতে খেতে বলল, ‘চাকরি তোমার হবে। তবে সহসম্পাদক পদে নয়, এমপি পোস্টে। করবে?’
‘আরেহ, এমপি মানে মাই পার্সন, একান্তই আমার। রাজি?’
সেই থেকে এমপি হিসাবে নিযুক্ত আছি। অনেক ঝড়ঝাপটা এমনকি জুলাই আন্দোলনের পরও আছি। কোথাও পালিয়ে যাইনি!
