Logo
Logo
×

বিচ্ছু

তুচ্ছ কারণে গুচ্ছ ঝগড়া

Icon

মো: রায়হান কবির

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মানুষের রুচি যুগে যুগে বদলায়। কখন কী খায় বা পরিধান করে তা ধারণা করা মুশকিল। একটা সময় কুরবানির ঈদের দিন থেকে কয়েক দিন রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে নদী, খাল, বিলে চলাচল করা কষ্ট সাধ্য ছিল। কারণ এখানে-সেখানে পড়ে থাকত গরু-ছাগলের ভুঁড়ি। যার পচে যাওয়া গন্ধে রাস্তাঘাটে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে যেত। কারও সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি থাকলে তাদের বাড়ির আশপাশে এসব ভুঁড়ি বা সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড এই ‘বট’ ফেলে রেখে জব্দ করা হতো। আর এখন? কুরবানির গরু দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় তার ভুঁড়ি ভাগাভাগি হয়ে যায়। আর কুরবানি হয়ে গেলে এই ভুঁড়ি নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ লেগে যায়, কে কার আগে এর দখল নেবে। এ সবই রুচির পরিবর্তন। ফলে ভুঁড়ি বা বট ফেলে রেখে ঝগড়া করার দিন শেষ। আধুনিক যুগে টাচ মোবাইল বা স্মার্টফোনের যুগে মানুষ ফেসবুকে যা দেখে তা-ই খেতে চায়। ফলে কেউ একজন ভুঁড়ি ভুনার ভিডিও পোস্ট করে এমন ‘রিভিউ’ দিয়েছে যে, এককালে খালে-বিলে পড়ে থাকা ভুঁড়ির দাম এখন প্রায় মাংসের সমান! কে জানে কয়েকদিন বাদে তা মাংসের দামকেও টেক্কা দেয় কিনা?

তো ঝগড়ার দৃশ্যপট থেকে ভুঁড়ি বা বটের চাহিদা খাবারের দিকে ডাইভার্ট হলে অন্য এক ‘বটের’ আবির্ভাব হয়েছে। আর সেটা ব্যবহার হয়, সোশ্যাল মিডিয়ার ঝগড়ায়। এ বট এসেছে রোবট শব্দের সংক্ষেপিত রূপ থেকে। অর্থাৎ ঝগড়ায় মানুষ একা পেরে উঠতে না পারলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বটের ব্যবহার করে। আপনার যদি টাকা থাকে কিন্তু সময় না থাকে, তাহলে যে কারও বিরুদ্ধে এসব বট ব্যবহার করতে পারেন। চীন, জাপানে যেমন ভারী কাজের দায়িত্ব মানুষ থেকে রোবটের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তেমনি ঝগড়ার দায়িত্বও এখন বটের ঘাড়ে বর্তাচ্ছে। ফলে আধুনিক যুগে ঝগড়ার নতুন নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে। তাই বলে মানুষে মানুষে ঝগড়া কি থেমে আছে? তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলছে মানুষ। হাঁস বা ছাগলের ধানখেতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মাঝে বিশাল ঝগড়ার সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি বিয়ের গেটে বরের অভ্যর্থনায় পার্টি স্প্রে মারাকে কেন্দ্র করে এমন ঝগড়াই বেঁধেছে যে, বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে গিয়েছে! শুধু কি তাই, সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে আরও এক আজব ঝগড়ার ঘটনা। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় এক সহপাঠীর সঙ্গে মারপিট হয়েছিল ক্লাসেরই আরও দুই পড়ুয়ার। সম্প্রতি স্কুলের পুরোনো ছাত্রদের নিয়ে একটি পুনর্মিলনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনজনই। এরপরই মনে পড়ে যায় ৫০ বছরের পুরোনো রাগ। দুজন মিলে বেধড়ক মারলেন ওই সহপাঠীকে। শেষে গ্রেফতার হতে হলো পুলিশের হাতে। মানুষ যেখানে ভাবে, নায়ক আর ভিলেনই শুধু ঝগড়া করে, সেখানে আমাদের দেশে প্রায় প্রতিদিনই নায়িকা-নায়িকা ঝগড়া, নায়ক টু নায়ক ঝগড়া এমনকি পরিচালকরাও নিজেদের ভেতর ঝগড়া করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে আবারও করোনা ব্যাধির উপক্রম দেখা যাচ্ছে। তবে করোনার চেয়েও ভয়ংকর ব্যাধি আমাদের সমাজে আছে, তা হলো ঝগড়া! দুই নায়িকা যখন এক নায়ক নিয়ে টানাটানি করে তখন বুঝতেই পারছেন, ঝগড়ার লেভেলটা কেমন হয়? একজন একটি ছবি পোস্ট দিয়ে নিজেকে ওই নায়কের ঘনিষ্ঠ প্রমাণ করতে চাইলে আরেকজন ভিডিও প্রকাশ করে মহাঘনিষ্ঠ প্রমাণ করতে চান।

ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থে নায়কদের মাঝে ঝগড়া লাগিয়ে আবার পকেটের স্বার্থেই তাদের মিলিয়ে দেন! যেভাবেই হোক, হ্যাপি এন্ডিং যে কোনো নাটক বা সিনেমার জন্য হিট একটা প্রকল্প। এখানেও তার ব্যতিক্রম না।

ব্যতিক্রম শুধু এক জায়গায়, আমরা জাতীয় স্বার্থে কখনো ঝগড়া ভুলতে পারিনি। এমনকি সামাজিক স্বার্থেও খুব একটা না। ফলে এর সুফল সব সময় প্রতিটি ঝগড়াতে যা হয়, তৃতীয় ব্যক্তিই নিয়ে যায়। তাই আমাদের সর্বস্তরের ঝগড়া মেটাতে একটা মন্ত্রণালয় করা যেতে পারে। যাদের কাজই হবে ঝগড়া নিয়ে গবেষণা। পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক ঝগড়া মেটাতে যে প্রতিষ্ঠান কাজ করবে, অন্তত নিজেদের ভেতর ঝগড়া না করে!

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম