|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক সময় প্রতিটি বাড়িতে গৃহপালিত পশু ছিল। গরু-ছাগল না হোক অন্তত হাঁস-মুরগি পালন করাটা একেবারে নিশ্চিত ব্যাপার ছিল। দিন বদলেছে, বদলেছে মানুষের রুচি। এখন আধুনিক যুগ, শহর তো দূরের কথা, গ্রামের প্রতিটা বাড়িতেও গৃহপালিত কিছু পাওয়া দুষ্কর। এখন সবাই সব কিছু বাজার থেকে কিনতে চায়, নিজে পরিশ্রম করে উৎপাদন করতে চায় না। তবে এখন ঘরে ঘরে আর কিছু পান বা না পান, রাজনৈতিক দল পাওয়ার নিশ্চয়তা কিন্তু আছে! সম্প্রতি যেসব রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, এদের বেশিরভাগের কার্যালয় বাসার ঠিকানায়। আবার কারও ঠিকানায় পাওয়া গেছে ভাতের হোটেল, কারও ঠিকানা পাওয়াই যায়নি। অবস্থা যেন এমন, নিজেরই ঠিকানা নেই, আবার দলের ঠিকানা! নিজের বা দলের ঠিকানা থাক বা না থাক, দল একটা গঠন করতে হবে। ব্যাপারটা অনেকটা এমন, থানার সামনে দিয়ে যখন যাচ্ছি, মামলা একটা দিয়েই যাই।
এমনই এক দলের মালিককে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ভাইজান, আপনার দলের কোনো ঠিকানা নাই, কর্মী নাই অথচ দাবি করছেন এটা একটা দল! ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং না?’ দলের মালিক উত্তর দিল, ‘আমার দলের পোস্টারে আমার নাম্বার দেওয়া আছে। সেটায় কল দিয়ে কখনো বন্ধ পেয়েছেন? আমি সব সময় একটিভ।’ সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, ‘সেটা তো বুঝলাম আপনি একটিভ আছেন। কিন্তু কার্যালয় নাই কেন?’ এবার দলের মালিক বললেন, ‘আরে ভাই, জনগণ আমাকে বলে, স্যার, আপনি নিজেই একটা ইনস্টিটিউট! সুতরাং আমি যেহেতু একটা ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠান, সুতরাং আমার দলের ঠিকানা আমি নিজেই। এখানে কোনো ভুল আছে? লাউড এন্ড ক্লিয়ার?’ সাংবাদিক কাচুমাচু খেয়ে বলল, ‘ক্লিয়ার!’
তেমনি আরেক দলের মুখপাত্রের সঙ্গে কথা হতেই সে বলল, ‘দেখেন, আমার দলের নাম ‘সত্য পার্টি’। আমাদের দলে মিথ্যার ম-ও পাবেন না।’ সাংবাদিক বললেন, ‘তাহলে আপনার কার্যালয় পাওয়া গেল না কেন?’ সত্য পার্টির মুখপাত্র বললেন, ‘আমরা কার্যালয়ের ঠিকানায় লিখেছি, সকাল নয়টা থেকে ১২টা ৮ নাম্বার বাস। বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৮ নাম্বার বাস।’ সাংবাদিক বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘এটা আবার কেমন ঠিকানা?’ এবার সত্য পার্টির মুখপাত্র বললেন, ‘দেখুন আমাদের দলের সদস্যরা সবাই একটি নির্দিষ্ট বাসের যাত্রী। আমাদের সভাপতি থেকে সাধারণ সম্পাদক সবাই একই বাসে গুলিস্তান থেকে সাভার পর্যন্ত একসঙ্গে যাত্রা করি। আর আমাদের রাজনৈতিক দলের চিন্তাও আসে বাসে যাত্রা করতে করতে। তাই আমরা চিন্তা করেছি এই বাসেই যেহেতু আমাদের দলের সৃষ্টি হয়েছে, এটাই আমাদের কার্যালয় হোক। তাছাড়া যাত্রীরাই আমাদের নেতাকর্মী। সুতরাং যখনই আপনি ৮ নাম্বার বাসে উঠবেন, আমাদের দলের কোনো না কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মী আপনি পাবেন। সুতরাং এ ঠিকানায় কোনো ভুল নাই।’ সাংবাদিক কিছুক্ষণ তন্দ্রা যাওয়ার মতো তাকিয়ে থেকে, শুধু বললেন, ‘ওকে’।
এরপর আর ওই সাংবাদিক ভাই কোনো নতুন দলের প্রধান বা অন্য কাউকে তাদের দলের কার্যালয় নিয়ে প্রশ্ন করতে সাহস করেননি। কারণ, যেসব যুক্তি ও উপমা আসছিল, তিনি তা নিতে পারেননি। কার্যালয়ের প্রশ্ন আসতেই আরেক দলের সভাপতি ক্ষেপে গেলেন। বললেন, ‘আরে ভাই, আপনি রাজনীতির কি বুঝেন? এখন ভার্চুয়াল যুগ, এনালগ যুগের কার্যালয় দিয়ে কি করবেন? পাবলিকের কার্যালয়ে আসার সময় কোথায়? হোয়াটসঅ্যাপে নক দিলেই সহজে রিপ্লাই পাই না, আবার বেহুদা কার্যালয়! শুনেন, এখন সব ডিজিটাল। আমার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারই আমার কার্যালয়। আমার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে সব প্রেস রিলিজ যাচ্ছে, আপনাদের ফিডব্যাক আসছে। নেতাকর্মীদের আপডেট পাচ্ছি। মিছিলের ছবি পাচ্ছি। ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে একটিভিটি আছে। সুতরাং আমি বুঝি না টেবিল চেয়ার আপনারা খুঁজেন কেন?’
