Logo
Logo
×

বিচ্ছু

রম্যগল্প

নকল কৌতুক মেকি গল্প

Icon

শফিক হাসান

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফরিদের আক্ষেপের শেষ নেই। নিজ জেলার মানুষ হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে মেসে তুলেছিল হাবিবকে। সেই হাবিব এখন সিরিয়াস কথা বলতে গেলেও কৌতুক ফাঁদে, কোনো কথা বলতে গেলে কৌতুক অনিবার্য। এমন কৌতুক-আবহ সবসময় সুখকর অভিজ্ঞতা দেয় না।

সেদিন বাসায় কেউ ছিল না। চাল-ডাল বা কোনো তরকারিও ছিল না। খালা রান্না করতে এসে ফিরে গেছেন। রাতের বেলা শূন্য হাঁড়িকুড়ি দেখে সবারই মেজাজ খারাপ। মাথা গরম হাবিবেরও। তারই আজ বাজার করার কথা ছিল। সে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলল, ‘খালা আমাকে কল দিল না কেন? তাহলেই তো বুঝতে পারতাম, কী করতে হবে!’

খালা মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না, সবাই জানি। নতুন করে মনে করিয়ে দেওয়া হলো হাবিবকে। তখন সে বিকল্প প্রস্তাব রাখার আগে গল্প বলে নিল। এলাকার দরদি নেতা দরিদ্র মানুষের দুঃখে ভাত খান না। একদিন একজন নেতার নাদুসনুদুস শরীরের দিকে তাকিয়ে সাহস করে বলল, ‘তাহলে কি আপনি ছাতু খান?’

নির্বিকার কণ্ঠে নেতা বললেন, ‘আমি খাই বিরিয়ানি।’

প্রচলিত গল্পটা সবারই জানা। বয়োজ্যেষ্ঠ রুমমেট মনির ভাই কটমট করে তাকিয়ে বললেন, ‘কী বোঝাতে চেয়েছ তুমি?’

হাবিব জবাব দিল, ‘রাতে সবাই মিলে বিরিয়ানি খেলে হয় না?’

কীসের সঙ্গে কী? বাদানুবাদে গেলাম না। জবাব দিলে হয়তো হাবিব নতুন কৌতুক শোনাবে। উঠতে কৌতুক, বসতে কৌতুক। কাঁঠালবাগান এখন কৌতুকারণ্য। কৌতুক-অত্যাচারে ভালো লাগছে না কারওই। কীভাবে বন্ধ করি এটা? ভেবে কূল পাই না কেউই। একদিন মনির ভাই কল দিয়ে বললেন, ‘হাবিব ঘুমিয়েছে?’

বললাম, ‘না। পড়ছে।’

‘ওকে এখনি শুয়ে পড়তে বল। আমার মাথাব্যথা করছে। ফাতরা কথা শুনতে পারব না।’

হাবিবকে সতর্কবার্তা দিলাম। এবারও শুনিয়ে দিল কৌতুক। হাঁটতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে জনৈক। ডাক্তার তাকে মলম দিয়ে বললেন, ‘যেখানে ব্যথা পেয়েছেন সেখানে লাগাবেন।’

ব্যথা আর ভালো হয় না। রোগী আবার চেম্বারে গেলে ডাক্তার চিন্তান্বিত গলায় বললেন, ‘কোথায় লাগিয়েছেন দেখান।’

‘গাছের গোড়ায় ব্যথা পেয়েছিলাম। ওখানে নিয়মিত লাগাচ্ছি। তিন মাইল দূরের পথ। আপনি দেখতে যেতে পারবেন? নাকি গাছটা কেটে আনব!’

ওর নাম ফুটে গেল ‘রেফারেন্স হাবিব’। রেফারেন্সে সবাই বিরক্ত হয়। কে না জানে এসব কৌতুক! হাবিব এতকিছু বোঝে, এটাই বুঝতে অনিচ্ছুক। তার ধারণা, আমরা বুঝি উপভোগ করি!

তিনজনের গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলো হাবিবকে বিয়ে করিয়ে দিতে হবে। তাহলেই কেবল এখান থেকে বিতাড়ন সম্ভব। ওকে ফুসলে একদিন পাত্রী দেখতে গেলাম সবাই মিলে। প্রথা ভেঙে হাবিব নিজেই পাত্রীর বাবাকে প্রশ্ন করল, ‘আপনার ছেলে-মেয়ে কতজন?’

‘ছেলে নেই। চার মেয়ে।’

‘কতজনের বিয়ে হয়েছে?’

‘একজনেরও না।’

হাবিব গল্পের গন্ধ পেল। লজ্জা-শরম ভুলে বলল, ‘হারুন কিসিঞ্জারকে চেনেন তো? কৌতুক শিল্পী। একটা নাটকে বাবা তাকে নিয়ে পাত্রী দেখতে গেলেন। এসময় হারুন কিসিঞ্জার প্রশ্ন করলেন- আচ্ছা আংকেল, আপনার মোট কয়টা মেয়ে?

তিনি বলেছেন, চারটা।

হারুন কিসিঞ্জার বললেন, আমি সবাইকে বিয়ে করব। আপত্তি নেই তো?’

বিয়ের আলাপ আগাল না আর। সবার মুখ থমথমে হয়ে গেল। হাবিব বলল, ‘আপনারা কেউই হাসলেন না যে!’

ততক্ষণে চা-নাশতা নিয়ে এসেছেন আন্টি। পরিবেশনের সুযোগ না দিয়ে পাত্রীর বাবা ট্রে হাতে নিয়ে চলে গেলেন ভেতরে। বললেন, ‘দুঃখিত, আপনাদের আপ্যায়ন করানো সম্ভব হলো না। এবার যান।’

উটকো গল্পের জন্য হেনস্তা হতে হলো সবাইকে। মনির ভাই বিড়বিড় করে বললেন, ‘লেবেনডিশ’।

অবশ্য মেসে সব দোষ হাবিব একা করে না। ফরিদও সময় পেলে মিসডকল মারে! হাবিবের আরেকটা বদভ্যাস আছে। ওয়াশরুমে ঢুকলে সহজে বের হয় না। সেদিন ‘ওয়াশরুম আওয়ারে’ কল এলো তার। স্ক্রিনে ‘মিম’ নামটা দেখে ফরিদ ধরে নিল কোনো মেয়ের সঙ্গে হাবিবের প্রেম আছে! নম্বরটা নিয়ে নিজের ফোনসেট থেকে কল করল ফরিদ। বলল, ‘হাবিবের কাছে কল এসেছে। কে আপনি?’

পুরুষকণ্ঠ জবাব দিল, ‘আমি মিম। হাবিবের ক্লাসমেট। ঢাকা কলেজে।’

ঘটনাটা হাবিব জানার পরে প্রাসঙ্গিক আরও তিনটা কৌতুক শুনিয়ে দিল।

ফরিদ বিড়বিড় করে বলল, ‘এতদিন কৌতুক শুনতাম আর এখন নিজেই কৌতুকের পাত্র!’

কিছুদিন পরে ব্যাংকার মনির ভাই বললেন, ‘অফিসের কাছে কৌতুকমুক্ত একটা বাসা পেয়েছি। আগামী মাস থেকে আমি থাকছি না আর। টুলেট সাঁটালে লিখে দেবে- কৌতুক শোনা বাধ্যতামূলক!’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম