Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মলাট বৃত্তান্ত

চেয়ার তুমি কার?

আপনেরা আগে ঠিক করেন আমি কার? * খাড়া কইতাছি!

Icon

সত্যজিৎ বিশ্বাস

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এ বঙ্গে রঙ্গ নেই কীসে? আজকের রঙ্গ, চেয়ারে বসা নিয়ে। চেয়ার তুমি কার? যে দখলে ছিল তার, নাকি যে দখলে নেবে তার? এমনই এক ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজে। চেয়ার দখল নিয়ে দুই অধ্যক্ষের মধ্যে চলছে নিউজিক্যাল চেয়ার খেলা। প্রিয় পাঠক, ঠিকই পড়েছেন ‘নিউজিক্যাল চেয়ার খেলার কথাই বলছি। ভাইরাল নিউজে প্রকাশ, চলমান অধ্যক্ষ চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় ওই কলেজের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবি করেন এবং এক পর্যায়ে একটি চেয়ার নিয়ে অধ্যক্ষের পাশে বসে পড়েন। ক্ষমতার চেয়ার নিয়ে যখন এমন টানটান টানাটানি চলছে তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিচ্ছিল।

চিন্তার বিষয় এখানেই। ওনাদের টানাটানির মাঝে পড়ে পরীক্ষার্থীদের খাতার না জানি কোন দূর্দশা হয়। ছেলেবেলায় ক্লাসে দেখতাম ফার্র্স্ট বেঞ্চে বসা নিয়ে ছাত্রদের মাঝে মারামারি হতো। বুড়ো বেলায় এসে দেখলাম, ক্ষমতার চেয়ারে বসা নিয়ে শিক্ষকদের। যাদের গড়ার করার কথা ছাত্রদের ভবিষ্যত, তারা গড়াগড়ি খাচ্ছেন নিজের ভবিষ্যত নিয়ে। কে বলে ক্ষমতার চেয়ার মানে পেইন আর পেইন? চেয়ার মানে গেইন আর গেইন। নইলে কেন কেউ মানবে না হার, ছাড়বে না চেয়ারের অধিকার? দু’জনেরই দাবি, চেয়ার তুমি আর কারো নও, শুধু আমার। ত্রিভুজ প্রেমের নাটক-সিনেমায় প্রেমের দাবিতে দুই প্রেমিক যেভাবে প্রেমিকাকে দুই পাশ থেকে টেনে ধরে বলে, নেই ছাড়-বলো তুমি কার? জোড়া অধ্যক্ষের মাঝে পড়ে চেয়ারের অবস্থা অনেকটা তেমনই।

জমানা বদলে গেছে। এখন কেস ঘটে না, ঘটাতে হয়। নিজের অবস্থান এমনিতেই শক্তিশালী হয় না, চেয়ারে বসে শক্তিশালী করতে হয়। চেয়ারের প্রতি পেয়ার কিংবা কেয়ার যাই বলুন, কার নেই শুনি? বিরিয়ানি, কাচ্চি থেকে শুরু করে পৃথিবীতে অনেক স্বাদের খাবার আছে। তারপরও ক্ষমতার স্বাদের চেয়ে বড় স্বাদ আর হয় না। মুখে যাই বলুক, মনে মনে সবাই আলাদীনের চেরাগ চায়। আগে যেটা মানুষ ‘চেরাগ’ নামে চিনত, সেটাকে এখন ‘চেয়ার’ নামে চেনে।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে চেয়ারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতেই হবে। সেটাই করেছেন নওগাঁর বদলগাছী মহিলা কলেজের দুই অধ্যক্ষ। প্রসঙ্গক্রমে একটা লাইফ জোকস হয়ে যাক। তখন মোবাইল ফোন নতুন এসেছে। অনেক দাম। দুই বন্ধু ফোনে কথা বলছে।

প্রথম বন্ধু ঃ কীরে, ফোন কি তোর পার্সোনাল?

দ্বিতীয় বন্ধু ঃ না, পারিবারিক। বাসার সবাই মিলে কিনেছি, ভাগে চালাই।

কোনো জোকস থেকে যদি ভালো সমাধান প্রস্তাব আসে, তবে তো জোকসই ভালো।

প্রস্তাব নম্বর এক ঃ কেউ পাবে আর কেউ পাবে না, তা হবে না, তা হবে না। চেয়ার নিয়ে মারামারি না করে করাত দিয়ে কেটে অর্ধেক করে দুজনকে সমান দুই ভাগ দিলেই তো হয়।

প্রস্তাব নম্বর দুই ঃ একজনকে শনি, সোম, বুধ, অন্যজনকে রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতি এ ভাবে সপ্তাহ ভাগ করে তিনদিন, তিনদিন করে বসতে দিলেই তো হয়।

প্রস্তাব নম্বর তিন ঃ চেয়ার নিয়েই যখন সমস্যা, চেয়ার বাদ দিয়ে বেঞ্চ দিলেই তো হয়। দুইজনই আরাম করে বসতে পারে। দুইজনকে দেখে উৎসাহিত হয়ে পরে আরও কেউ চেয়ারের দাবিদার যুক্ত হলেও কোনো সমস্যা হবে না। একই চেয়ারে থুক্কু একই বেঞ্চে বসবে সবাই।

মানুষ যেখানে কাজ না করে শুয়ে নাক ডাকতে চায়, সেখানে ওনারা দু’জনেই চেয়ারে বসে কাজ করতে চাচ্ছেন। ক্ষতি কী! ভাগাভাগি করে দু’জনেই থাকলে? দুইয়ে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম