Logo
Logo
×

বিচ্ছু

মেসের মহাকাব্য : চা থেকে চরকা

Icon

আহমেদ জুনাইদ তন্ময়

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকার এক কোণে ছোট্ট একটা মেস। নাম তার ‘ছাত্রছায়া ভবন’। ভবন বললে অবশ্য কিছুটা ভুল হবে। ঘর চারটা, জানালা তিনটা, আর বাতাস ঢোকে লাঠি মেরে। এখানে থাকে পাঁচজন বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজা প্রাণ। ইমন, শুভ, বাহার, রাহাত আর মোস্তফা। প্রত্যেকের জীবনের লক্ষ্য একটাই-যেন ক্লাসে পাশ করে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করা। তবে এ মহান লক্ষ্য পূরণের পথে যেসব কাণ্ড ঘটে, তা নিয়ে লেখা যায় এক মহাকাব্য!

মেসের সকালের গল্প

সকাল মানেই হলো চায়ের মহাযজ্ঞ। মেসে ইমনের দায়িত্ব চা বানান। তবে ইমনের চায়ের বিশেষ গুণ হলো, সেটা কখনো পাতলা, কখনো কড়া, আর কখনো চায়ের মধ্যে লবণ মিশে যায়। একদিন বাহার রেগে গিয়ে বলল, ‘তুই কি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিস, নাকি বিষ মিশিয়ে আমাদের মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছিস?’

ইমন গম্ভীর গলায় উত্তর দিল, ‘চায়ের স্বাদ জীবনের মতো-প্রতিদিন একরকম হবে না।’

তর্কটা তখনই থেমে গেল, কারণ কারও হাতে চা বানানোর ধৈর্য নেই।

ভাত রান্নায় বিপ্লব

মেসের নিয়ম ছিল, যেদিন যার হাত ফাঁকা, সেদিন সে ভাত রাঁধবে। মোস্তফা একদিন ভাতের পাত্রে এত পানি দিল যে সেটা রান্না হতে হতে খিচুড়ি হয়ে গেল। শুভ বাটি হাতে এসে বলল, ‘আজ কি আম্মাজান খিচুড়ি পাঠাইছে নাকি?’

মোস্তফা উত্তর দিল, “না, এটা হলো আমার নতুন রেসিপি-‘ভাত খিচুড়ি’।”

সবাই মুখ বাঁকিয়ে খেয়ে নিল, কারণ বাইরে খাওয়ার টাকা নেই।

পড়াশোনা বনাম আড্ডা

পড়াশোনা এখানে একটা রহস্যময় ব্যাপার। বই-খাতা খোলা হয় শুধু পরীক্ষার দুইদিন আগে। তার আগ পর্যন্ত সবাই ব্যস্ত ‘জীবনের বাস্তবতা’ নিয়ে আলোচনা করতে। রাতের খাবার শেষে আড্ডা জমে ওঠে। শুভ বলে, ‘দেশের রাজনীতি ঠিক করতে হলে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে।’

বাহার বলে, ‘আগে তো নিজের অ্যাসাইনমেন্ট ঠিক কর। গত তিন সপ্তাহ ধরে স্যার চিৎকার করছে!’

তারপর সবাই একসঙ্গে হেসে ওঠে।

মাস শেষের দুঃখ

মাসের শেষে সবার মানিব্যাগ হালকা হয়ে যায়। তখন শুরু হয় সৃষ্টিশীলতা। একদিন মেসে চাল আর ডাল শেষ। রাহাত গম্ভীর মুখে বলল, ‘আমরা কী আজ ক্ষুধার্ত শিল্পী হয়ে বাঁচব?’

ইমন বলল, ‘ক্ষুধার্ত কেন? নিচে দোকানে বাকিতে লবণ আর মুড়ি তো পাওয়া যায়!’

বাকিতে কেনা মুড়ি আর লবণ দিয়ে সেই রাতে পাঁচজন খেয়ে ঘুমাল। তখনও কেউ কেউ প্লেট হাতে বলে, ‘আজকের ডিনার মনে রাখার মতো!’

শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম