ইসলাম বিষয়ক প্রশ্নোত্তর
পোস্টমর্টেম কি জায়েজ?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
প্রশ্ন : মেডিকেল শিক্ষার প্রয়োজনে মানবদেহের পোস্টমর্টেম বা অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন করতে হয়। মানুষের দেহ কাটাছেঁড়া করা কি শরিয়তে বৈধ?
প্রশ্ন করেছেন : আবু সাঈদ, জামালপুর
উত্তর : অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশনের ক্ষেত্রে যে ধরনের কাটাছেঁড়া করা হয়, তা স্বভাবতই মরদেহের সম্মানবিরোধী। তাই সাধারণ পরিস্থিতিতে মানুষের দেহ কাটাছেঁড়া করা বৈধ নয়। কুরআনে বলা হয়েছে-‘আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।’ (সূরা বনি ইসরাইল, ৭০)। এ সম্মান শুধু জীবিত অবস্থার জন্য নয়; মানুষ মৃত্যুর পরও তার মর্যাদা অটুট থাকে। এজন্য মৃতদেহের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা মূলত নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন-‘মৃত ব্যক্তির হাড় ভাঙা জীবিত অবস্থায় তার হাড় ভাঙার মতোই।’ (আবু দাউদ, ৩২০৭)।
কিন্তু শরিয়তের একটি প্রতিষ্ঠিত নীতি হলো, ‘অনিবার্য প্রয়োজন নিষিদ্ধকেও অনুমোদনযোগ্য করে তোলে।’ আধুনিক চিকিৎসা-শিক্ষা এবং জনস্বাস্থ্যের বাস্তবতায় মানবদেহের অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মানবদেহের প্রকৃত গঠন জানা, রোগের উৎস ও প্রকৃতি শনাক্ত করা, সার্জারির দক্ষতা অর্জন করা, এসব ছাড়া একজন সক্ষম চিকিৎসক তৈরি করা সম্ভব নয়। আর উপযুক্ত চিকিৎসক না থাকলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা শরিয়তের মূল উদ্দেশ্যের পরিপন্থি।
সুতরাং ডামি বা পশুর দেহ যথেষ্ট না হলে কিছু শর্তসাপেক্ষে মানবদেহের ডিসেকশন বৈধ হবে। শর্তগুলো হলো, মৃতব্যক্তির অনুমতি বা ওয়ারিশের সম্মতি : জীবদ্দশায় মৃত ব্যক্তি অনুমতি রেখে গেলে ভালো। তা না হলে ওয়ারিশদের অনুমতি আবশ্যক।
প্রয়োজনের সীমা অতিক্রম না করা : শিক্ষা বা গবেষণার স্বার্থে যে পরিমাণ কাটাছেঁড়া প্রয়োজন, শুধু ততটুকুই করা যাবে। অপ্রয়োজনীয় ছেদন-বিচ্ছেদন হারাম।
লজ্জাস্থান রক্ষা ও লিঙ্গ-সমতা বিবেচনা : নারী মৃতদেহ হলে সম্ভব হলে নারী শিক্ষক/শিক্ষার্থীই ডিসেকশন করবে। প্রয়োজনে পুরুষ করলেও বৈধ।
ডিসেকশন শেষে মরদেহের মর্যাদা রক্ষা : সব অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ যথাযথভাবে জড়ো করে সম্মানের সঙ্গে দাফন করতে হবে। কোনো অংশ অপমানজনকভাবে ফেলে রাখা যাবে না।
ওপরের শর্তগুলো পূরণ করা হলে জনস্বাস্থ্য ও শিক্ষার স্বার্থে মানবদেহের অ্যানাটমিক্যাল ডিসেকশন শরিয়তসম্মত এবং অনুমোদিত।
দ্রষ্টব্য : ফিকহুন নাওয়াজিল ৪/২০৯; মাজমাউল ফিকহিল ইসলামি, পৃ. ২১২।
