শিল্প সাহিত্যের মননশীল সবক পেয়েছি যুগান্তরে
মাসউদুল কাদির
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একজন লেখক কী বিষয়ে লিখবেন, কী বিষয় জাতিকে জানাবেন, কী কী ধারণা থাকলে সত্যিকার অর্থে তিনি লেখক হয়ে উঠবেন- এমন অনেক স্বপ্নের জোগান দিয়ে চলেছে যুগান্তর ইসলাম ও জীবন পাতা। অসংখ্য লেখক তৈরি করার ক্ষেত্রে যুগান্তরের অবদান অপরিসীম। বিশেষত ইসলামবিষয়ক ফিচারের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত করেছিল যুগান্তর।
শূন্য দশকে অকল্পনীয় ভূমিকায় দেশজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছে। আমি একবার হবিগঞ্জের মাধবপুরের খড়কী গ্রামের একজন আলেম ভাষাসৈনিককে তুলে ধরলাম যুগান্তরে। এ ঘটনা কেউই জানত না। সেই থেকে যুগান্তর ওই এলাকায় ভিন্নরকম এক আবেগের পত্রিকা হিসেবে পরিচিতি পায়। আমি যেখানেই গিয়েছি সেখানেই মূলত যুগান্তরের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছি। রং-বেরঙের ফিচার ও বহু লেখকের উপস্থিতির কারণে দেশের যে কোনো পত্রিকার চেয়ে ইসলাম ও জীবন পাতার আলাদা একটা গুরুত্ব ছিল।
দেশের আলেমরা একটু সমীহ বা ভালোবাসার নজরে দেখতেন যুগান্তরের ইসলাম ও জীবন পাতাকে। তারা চাইতেন, একটু ভালো কর্মের প্রসারটা যুগান্তরে হোক। শুধু এ পাতাটির জন্যই অসংখ্য মাদ্রাসায়, লাইব্রেরিতে, স্কুল-কলেজে যুগান্তর রাখা হতো। এমনকি বান্দরবানেও।
পাহাড়ের দেশ বান্দরবান। সাতটা উপজাতির সঙ্গে সেখানে মুসলমানদেরও বাস। অপূর্ব এক শহর। সাধারণ ঝগড়া-ঝামেলা শূন্যদশকে ছিল না বলেই জানতাম। একদিন শুক্রবার আমি একটা চায়ের স্টলে বসে আছি। পাশের টেবিলে আমার পরিচিত একজন পত্রিকা পড়ছিলেন। পাতা উল্টাতে উল্টাতে তিনি ইসলাম ও জীবন পাতায় গেলেন।
একটা লেখার শিরোনামের ওপর আমার নাম দেখতে পেয়ে যেন আঁতকে উঠলেন। তিনি বললেন, ভাই, এটা কি আপনার নাম নয়? আমি বললাম, লেখাটাও দেখুন না। লেখায় যাদের ছবি ছাপা হয়েছে তাদেরও চিনবেন। আবার তিনি পত্রিকায় ডুব দিলেন। দেখলেন, নিজের ছবিও দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি উঠে এলেন। আমাকে জাপটে ধরলেন। একরাশ ভালোবাসা প্রকাশ করলেন। কয়েকজন হাফেজকে নিয়ে লেখা ফিচার ছাপা হওয়ায় পুরো বান্দরবানে যেন খুশি ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন বান্দরবানে ইন্টারনেট ছিল না, মুঠোফোন ছিল না। কিন্তু মাসজুড়েই ইসলাম ও জীবন পাতার আলোচনা ছিল সবার মুখে মুখে।
এটা কেবল বান্দরবান নয়, পটিয়া, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনসহ দেশের যেখানে যুগান্তরের পাঠক-পাঠিকা আছেন, তাদের মধ্যে যারা ইসলামের আলোয় আলোকিত, সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে ইসলাম ও জীবন পাতাটি। অর্থ দিয়েও হয় না এমন অনেক কিছুই যুগান্তরে উপস্থাপিত হয়েছে। ক্যালিওগ্রাফি শিল্পীদের এ বিভাগটিতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে তা বাংলাদেশের কোনো পত্রিকাই করতে পারেনি।
আল্লামা মুহাম্মদ ইসহাক ফরিদী (রহ.)-এর শিষ্যত্ব পেয়েছিলাম আমি। তার প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি আট বছর। সেখানে অনেক কিশোরকে দেখেছি, তারা ক্যালিওগ্রাফি প্র্যাকটিস করছে যুগান্তরের ইসলাম ও জীবন পাতায় প্রকাশের জন্য। তারা প্রাথমিকভাবে নিজেদের এই শিল্পকর্ম মাদ্রাসার দেয়ালিকায় দিত। নিজের হাতে দেয়ালিকায় এঁকে দিত। এমন অনেক গুণী শিল্পী প্রকৃত ক্যালিওগ্রাফি শিল্পীতেই পরিণত হয়েছেন।
শিল্পসাহিত্যে যেমন ইসলাম ও জীবন পাতার অবদান আছে তেমনি সমাজের কুসংস্কার বন্ধেও এ পাতা কোনো অংশেই পিছিয়ে ছিল না। শুধু কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির জন্য যুগান্তরকে সম্মানিত করা উচিত বলেই আমি মনে করি। সনদের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু এ শিক্ষার সনদ প্রয়োজন, সনদে এসব শিক্ষার্থীরা আরও বেশি উৎসাহিত হবেন- এ কথাটা প্রথমই পত্রিকার পাতায় লিখে উৎসাহিত করেছিল এই যুগান্তর। আজকাল সে কথা কেউ হয়তো বলছে না। কালক্রমে একদিন কেউ না কেউ তা স্বীকার করবেন এবং যুগান্তরকে ধন্যবাদ জানাবেন।
আর একটা স্মৃতির কথা বলেই শেষ করব। জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় আমি একটা বছর কাটিয়েছি। তখন ইংরেজ খেদাও আন্দোলনের নেতা শাইখুল ইসলাম সাইয়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানির (রহ.)-এর শিষ্য আল্লামা ইসহাক আল গাজী (রহ.) ছিলেন। আমি তার কাছে বুখারির দারস গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেছি। তার ইন্তেকাল নিয়ে আমি একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম যুগান্তরে।
তার ইন্তেকালের পর মাসব্যাপী লোকজন আসত কবর জিয়ারতে। পটিয়ায় তো আর এত যুগান্তর যায়নি যে, সব মানুষকে তা দেয়া যাবে। পরে এই যুগান্তরের পাতা কপি করে সারা পটিয়ায় ছড়িয়ে দেয়া হল। যারাই আসত তারাই ফটোকপি নিয়ে যেত। এভাবে পটিয়ার মনীষীদের নিয়ে একটি বইও আমি লিখেছিলাম।
স্মৃতি বড়ই মধুর। যুগান্তর জীবনের রঙের সঙ্গে, স্বপ্নের সঙ্গে মিশে আছে। পরে এ পত্রিকার প্রায় সব পাতায়ই লিখেছি, আর এ বিভাগটির বিভাগীয় সম্পাদক হাফেজ আহমাদ উল্লাহ ভাই মূলত রং ছড়ানোর আসল কারিগর। তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও সালাম।
লেখক : প্রেসিডেন্ট, শীলন বাংলাদেশ
mkadir1983@gmail.com
