Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মাটি থেকে বানানো হয়েছে মানুষ

Icon

মুন্সী মোহাম্মদ ওমর

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কোরআনের ঘোষণা মোতাবেক আদম (আ.)-কে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়নি, মাটি থেকে তৈরি করা হয়েছে- মিন ত্বিন। জমজম কূপের পানির সঙ্গে বিভিন্ন স্থানের মাটির মিশ্রণে খামির তৈরি এবং সে খামির দিয়ে আদম (আ.)-এর মূর্তি তৈরির ঘটনা যদি সঠিক হয়, তাহলে মাটি থেকে আদম তৈরির ঘোষণা সঠিক নয়। বলা আবশ্যক, মাটি দিয়ে তৈরি এবং মাটি থেকে তৈরি সমার্থক নয়। মাটির মূর্তি মাটি দিয়ে তৈরি, মাটি থেকে নয়। ঘি দুধে তৈরি, দুধ দিয়ে নয়। আবার দুধের তৈরি পায়েস দুধ দিয়ে তৈরি, দুধ থেকে নয়। নিয়ম অনুযায়ী ‘দ্বারা’ বা ‘দিয়ে’ শব্দের জন্য আরবি ‘বা’ অক্ষরটি যুক্ত করতে হয়। ‘থেকে’ শব্দের জন্য আরবি ‘মিন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। মাটি থেকে মানুষ তৈরির ঘোষণাগুলোয় যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- মিনাল আরদে-জমি বা ভূমি থেকে। মিন তিনেন-কাদা মাটি থেকে। মিন তিনেল লাজিব-আঠালো কর্দম মাটি থেকে। মিন সালসালিম মিন হামায়েম মাসনুন- নকশা কাটা নরম মাটি থেকে। মিন ত্বিন- কাদা মাটি থেকে।

বিগত দিনের খ্যাতিমান ধর্মবেত্তারা এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেন যে, একমাত্র আদম (আ.)কেই মাটি দিয়ে (?) তৈরি করা হয়েছে- আর কাউকেই নয়। তাদের প্রদত্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী মাটি দিয়ে তৈরি এবং মাটি থেকে তৈরির মাঝে কোনো ব্যবধান-বৈষম্য নেই। আদম (আ.)-এর সন্তান হাবিল, কাবিলসহ কেয়ামত পূর্ববর্তী কোনো মানুষকেই মাটি দিয়ে বা মাটি থেকে তৈরি করা হয়নি এবং তৈরি করা হবে না। তাঁদের প্রদত্ত ফয়সালাটি হচ্ছে- আদম (আ.) ব্যতীত সব মানুষই বীর্যের ফসল। তাই প্রশ্ন হচ্ছে- মাটি থেকে মানুষ তৈরির এত ঘোষণাগুলো কি তাহলে রহিত হয়ে গেছে নাকি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে? নতুবা মাটি থেকে মানুষ তৈরির চাক্ষুস ঘোষণাগুলোকে এভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে কেন? খ্যাতিমানদের এমন ধ্বংসাত্মক ফয়সালা আমরা মেনে নেব কেন? কোরআনের ঘোষণাগুলো আমরা যদি মেনে না নিই তাহলে মালিক আমাদের ছেড়ে দেবেন কেন? কোরআনের ঘোষণাগুলোর গুটিকয়েক ঘোষণা এখানে তুলে ধরছি :

৬:০২। তিনি তোমাদের মাটি থেকে তৈরি করেছেন।

১১:৬১। তিনি তোমাদের মাটি থেকে তৈরি করেছেন।

২০:৫৫। এটি (মাটি) থেকে তোমাদের আমরা তৈরি করেছি, এতেই তোমাদের ফিরিয়ে নেব এবং আবারও এটি (মাটি) থেকেই তোমাদের বের করে নেব।

২৩:১২। আমি মানুষকে তৈরি করেছি মাটির নির্যাস থেকে।

২২:০৫। হে মানুষ, পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমরা সন্দিহান হও তাহলে শুনে রাখ, আমি তোমাদের মাটি থেকে তৈরি করেছি, অতঃপর শুক্র থেকে।

সব কটা ঘোষণায়ই বলা হয়েছে ‘খালাকাকুম’-তোমাদের। ঘোষণাগুলোর উদ্দেশ্য কেবল আদম (আ.) নয়, কেবলই প্রাগৈতিহাসিক ঘোষণাও নয়। চলমান, চিরন্তন ঘোষণা, সার্বজনীন ঘোষণা। লক্ষ বছর আগের জন্য যেমন সত্য, লক্ষ বছর পরও ঘোষণাগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণায় পরিণত হওয়ার নয়। অবশ্য বীর্য থেকে মানুষ তৈরির ঘোষণা কোরআনে রয়েছে। পানি থেকে তৈরির ঘোষণাও রয়েছে। আমরা সবিনয়ে স্বীকার করে নিচ্ছি যে, মানুষ বীর্য থেকে তৈরি। কিন্তু বীর্য কী দিয়ে তৈরি? বীর্যের উৎস কোথায়? আমাদের শরীরের রক্ত, বীর্য, মেদ, মজ্জা কি আকাশ থেকে নাজেল হয় নাকি আমরা তা জমিন বা মাটি থেকে পাই, নাকি অন্য আর কোনো উপায়, অবলম্বন রয়েছে?

আমরা প্রতিদিন যেসব খাদ্যবস্তু ভক্ষণ করি সেগুলো প্রথমে দু’ভাগে ভাগ হয়- রস-নির্যাস এবং বর্জ্য। বর্জ্য বর্জন করি আর নির্যাস একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে রক্তে পরিণত হয়। রক্ত পরিণত হয় মাংসে। মাংস থেকে তৈরি হয় মেদ। মেদ থেকে মজ্জা। মজ্জা থেকে মনি এবং মনি থেকে উৎপন্ন হয় বীর্য। বুঝতে কারোই সমস্যা হওয়ার কথা নয়, খাদ্যের পর্যায়ক্রমিক ফসল বা ফলাফল হচ্ছে বীর্য। বীর্যের উৎস হচ্ছে খাদ্য। খাদ্যের উৎস কোথায়? জমিন নাকি আসমান? অনেকেই তাদের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য, বক্তৃতায় একটা বিষয় নিশ্চিত করে দিয়েছেন, কোরআনের ঘোষণাগুলো আদম (আ.) ছাড়া আর কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় এবং তাদের শরীরের রক্ত, মজ্জা, মনি, বীর্য তারা পানাহার ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে আহরণ করছেন। তাই তাদের কাছে জানতে ইচ্ছা করছে, খাদ্য ছাড়া রক্তের কি অপরাপর কোনো উৎস আছে? আবার মাটি ছাড়া খাদ্য উৎপন্ন করার নতুন কোনো কায়দা-কৌশল কি আবিষ্কৃত হয়েছে? তবু তাদের এমন অন্ধ ফয়সালা কেন? কোরআনের জলজ্যান্ত ঘোষণাগুলোকে অচল, অর্থহীন ঘোষণায় পরিণত করেছে কেন? মানুষ কোরআন না বুঝে?

লেখক : কোরআন গবেষক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম