Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

পরনিন্দা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে

Icon

মুহাম্মদ সায়েম আহমাদ

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমরা অনেকেই কথা বলার সময় অন্যের গিবত এবং অন্যকে গালমন্দ করে থাকি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় মুখে-কলমে-ইশারা-ইঙ্গিতে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে কারও অনুপস্থিতিতে তার এমন কোনো দোষের কথা আলোচনা করা, যা শুনলে সে মনে কষ্ট পেতে পারে তাকে গিবত বলে। যদি এমন কোনো দোষের কথা আলোচনা করা হয়, যা ওই ব্যক্তির মধ্যে নেই- তবে সেটি গিবত নয় বরং অপবাদ হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য! এ দুটো কবিরা গোনাহ আমরা অহরহ করছি কিন্তু আমাদের ভেতর আল্লাহর আজাবের ভয় জাগে না। আমরা একজনের গোপন কথা অন্যজনকে বলে ফেলি, যা মোটেও কাম্য নয়। আল কোরআন ও হাদিসে এসব ব্যাপারে অনেক আলোচনা রয়েছে।

পবিত্র কোরআনে গিবত ও গালমন্দের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে- ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অন্যের ব্যাপারে বেশি বেশি ধারণা ও অনুমান করা থেকে বেঁচে থাক। কারণ অধিকাংশ অনুমানই গুনাহের কাজ হয়ে থাকে। আর অন্যের দোষ খুঁজে বেড়িও না। তোমাদের কেউ যেন অন্যের গিবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? আসলে তোমরা তা অপছন্দই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু’, (সূরা আল-হুজরাত, আয়াত-১২)। অন্য আয়াতে গালমন্দ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘মন্দ কথা বলা আল্লাহ ভালোবাসেন না। তবে কারও ওপর জুলুম করা হলে ভিন্ন কথা। জেনে রাখ, আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন’, (সূরা নিসা, আয়াত-১৪৮)।

গিবত বা পরনিন্দার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এসেছে- হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, গিবত হল ব্যভিচারের চেয়েও ভয়ঙ্কর গোনাহ। এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) গিবত কীভাবে ব্যভিচারের চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়? রাসূল (সা.) বললেন, কোনো ব্যক্তি যদি ব্যভিচার করার পর তওবা করে আল্লাহ তার তওবা কবুল করে তাকে ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু গিবতকারীকে যার গিবত করা হয়েছে, সে ব্যক্তি যদি মাফ না করে তাহলে আল্লাহও মাফ করবেন না, (বায়হাকি শরিফ)।

পরনিন্দার কাফফারা সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, গিবতের কাফফারা হল, তুমি যার গিবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। যেমন এভাবে বলা, হে আল্লাহ তুমি আমার এবং তার গুনাহ মাফ করে দাও, (বায়হাকি শরিফ)।

দুনিয়াতে গিবতের সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে- মানুষের মধ্যে একতা নষ্ট হয়, অন্তরে অন্যের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি হয়, ভালোবাসা ও সম্প্রীতি হারিয়ে যায়। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিত, ঘৃণিত এ গোনাহ থেকে নিজকে বিরত রাখা এবং একে-অন্যের কল্যাণ কামনা করা।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম