Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

প্রেমিক এক সাহাবি সালমান ফারসি

Icon

অধ্যাপিকা আখতারা মাহবুবা

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রেমিক এক সাহাবি সালমান ফারসি

সালমান ফারসি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন বিখ্যাত সাহাবি। হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাকে সালমান আল খায়র নাম দেন। তিনি বর্তমান ইরানের ইসপাহানে জন্মগ্রহণ করেন।

এ মহান সাহাবির সুদীর্ঘ জীবনীতে দেখা যায়, অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের সিঁড়ি পেরিয়ে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেন।

হজরত আলী (রা.) তাকে বুকে জড়িয়ে প্রগাঢ় আলিঙ্গন করেন। তিনি পিতামাতা থেকে পালিয়ে ১৯ বার দাস হিসেবে বিক্রি হন। শেষবারে এসে প্রিয় নবীর মারফতে চুক্তিপত্র লিখে নিজ জীবন মুক্ত করতে পেরেছেন। বিধর্মী কাফেরের শর্ত ছিল, যদি চারশ খেজুর বৃক্ষ রোপণ করে এবং প্রত্যেক বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণে ফলশালী হয় ও চল্লিশ তোলা স্বর্ণ দান করে তবে সালমানকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। মানবদরদি আল্লাহর নবী ইসলামের খেদমত ও সালমানের মুক্তির জন্য নিজে সব বৃক্ষ রোপণ করেন।

কেবল একটি বৃক্ষ উমর (রা.) রোপণ করেছিলেন। এক সময় সব বৃক্ষ অল্প দিনের মধ্যে ফলমণ্ডিত হয়ে মদিনার সব বাগানের মধ্যে সেরা হল। কেবল উমর (রা.) রোপিত বৃক্ষটি ফলবিহীন রয়ে গেল। আল্লাহর নবী সেই বৃক্ষটি উঠিয়ে অন্য একটি বৃক্ষ সেখানে রোপণ করেন। অল্প দিনের মধ্যেই সে বৃক্ষটি ফলভারে অবনত হল। অতঃপর আল্লাহর নবী যুদ্ধে লব্ধ ধনরাশি থেকে চল্লিশ তোলা স্বর্ণ দিয়ে বিধর্মী মনিবের সব ওয়াদা পূর্ণ করে সালমানকে মুক্তি দান করেন। দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি কখনও প্রিয় নবীর সংস্পর্শ ত্যাগ করেননি এবং নবীজির সঙ্গে সব যুদ্ধে শরিক ছিলেন।

তিনি যখন যুদ্ধে নামতেন উন্মুক্ত তরবারি হাতে বলতেন, হে আল্লাহ! এই সালমান বেঁচে থাকবে আর তোমার দ্বীন কাফেরদের হাতে লাঞ্ছিত হবে- তা কোনোদিন হতে দেব না। আল্লাহর নবী বহু সংখ্যক সাহাবাদের মধ্যে পবিত্র কোরআনের সূরা মুহাম্মদের এ আয়াত তেলাওয়াত করেন- অর্থাৎ তোমরা যদি আল্লাহকে ও আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আল্লাহ তোমাদের ধ্বংস করে দিয়ে তোমাদের পরিবর্তে এক নতুন কওমের সৃষ্টি করে তাদের দিয়ে তার ধর্ম মান্য করিয়ে তাওহিদ প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। তারা কিন্তু তোমাদের মতো হবে না, সে কওম জ্ঞান-গুণে, চরিত্রে-ধর্মপরায়ণতায় ও ইমানের পরিপক্বতায় তোমাদের চেয়ে অনেক উন্নত হবে।

উপস্থিত আরব সাহাবারা এক বাক্যে জিজ্ঞেস করলেন, মানহা-উলাইল্লাজিনা? হে আল্লাহর নবী! আমরা আপনার আনীত দ্বীন ইসলামকে অমান্য করলে আমাদের পরিবর্তে বর্তমান বিশ্বে এমন কোনো কওম আছে, যারা ইসলাম ধর্মকে মান্য করার ব্যাপারে আমাদের চেয়েও ভালো হবে। যাদের বর্ণনা আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেন।

আল্লার নবী তাদের কথার জবাব ও প্রমাণের জন্য বলেন, এই যে- তোমাদের মধ্যে তোমাদের হজরত সালমান ফারসি। ইনি এবং তার কওম। তারা এমনই লৌহমানব, আল্লাহর দ্বীন যদি পৃথিবী থেকে আসমানের ওপরে সুরাইয়া তারকার কাছেও চলে যায় তাহলেও সালমান ও তার লোকরা পাবে। তখন উপস্থিত সাহাবারা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! তখন আমাদের বংশধররা কী করবে?

রাসূল (সা.) উত্তরে বলেন, তোমাদের বংশধররা তখন আমোদ-ফুর্তিতে ব্যস্ত থাকবে। বাস্তবেও তাই, একদিন খেজুর পাতার চাটাইয়ে তারা যা অর্জন করেছিলেন সোনার গালিচায় তা হারিয়ে ফেললেন। রাসূল (সা.) তাঁর জীবদ্দশায় বহু ক্রীতদাসকে অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করে মুক্তি দিতেন।

তারা ইসলামের জৌলুশে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের জন্য জীবন উৎসর্গ করতেন। আজকের মুসলমানরা হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের ঐতিহ্য ঐক্য এবং সত্যকে যতটা পারে আড়াল করছে। বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ধর্মহীন পার্থিব বিষয় আঁকড়ে ধরছে। ফলে মজলুম-নিপীড়িত-দুর্বল জাতিতে পরিণত হচ্ছে মুসলমান। হে আল্লাহ! আমাদের দৃঢ় ইমান ও ইসলামকে আঁকড়ে ধরার তাওফিক দান করুন।

লেখক : অধ্যাপিকা, চৌধুরী ছবুরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, শেরপুর

প্রেমিক সাহাবি সালমান ফারসি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম