অলিকুল শিরোমণি বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.)
মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশে যেসব অলি-আওলিয়াদের নাম যুগ পরম্পরায় মানুষ স্মরণ করে আসছে তাদেরই একজন হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.)। যিনি বাল্যকালেই মাতৃভক্তির বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য সুপরিচিত। তিনি তৎকালীন পারস্য তথা বর্তমান ইরানের বাস্তাম শহরে ৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু ইয়াজিদ তাইফুর ইবনে ইসা ইবনে সুরাশান আল বিস্তামি। তার দাদা সুরাশান পারস্য ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সেই সুরাশানের ছেলে তাইফুর অত্যন্ত ধর্মপ্রিয় একজন মানুষ। তার ঘরেই জন্ম হয় বায়েজিদ বোস্তামীর। যাকে বলা হয় সুলতানুল আরেফিন। তিনি স্রষ্টায় বিলীন হওয়ার তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। তার বাল্যকাল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা না গেলেও তিনি বেশিরভাগ সময় কাটাতেন ঘরে কিংবা মসজিদে। একাকী ও নিভৃতে।
পরিবারে তিনি পেয়েছেন ধর্মচিন্তার অনুকূল পরিবেশ। মা-বাবা দু’জনেই ধার্মিক। জাগতিক ভোগবিলাস থেকে দূরে থেকে তিনি সুফি সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছেন। মানুষকে আমন্ত্রণ দিয়ে বাসায় নিয়ে আসতেন। দ্বীনের কথা বলতেন। আলোচনা করতেন। স্রষ্টায় বিলীন হওয়ার আশায় পার্থিব ভোগবিলাস ত্যাগ সুফি জীবন বেছে দেন। এবং মারেফাতের তত্ত্বকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। ইসলামে ধর্মীয় সুখের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আর এ সুখকে আখ্যায়িত করেন ওয়াজদ নামে। যা মূলত স্রষ্টায় বিলীন হওয়া। তিনি সুফিবাদে ধার্মিকতা ও আল্লাহর বন্দেগি এ ধারণা আরও সম্প্রসারিত করে যোগ করলেন স্রষ্টার প্রেম তত্ত্ব। জীবনের ত্রিশটি বছর ব্যয় করলেন এ সুফিবাদ প্রচারে।
একশ্রেণির মানুষ মারেফাতের নামে শরিয়তকে অগ্রাহ্য করে। শরিয়তের অনুসরণ ছাড়া মারেফাতের পথ খুঁজতে চায়। আসলেই এরা ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। শরিয়ত ছাড়া কখনোই মারেফাত হাসিল করা যায় না। হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) বলেন, ‘তোমরা যদি এমন কোনো ব্যক্তি দেখ যে অনেক কারামতের অধিকারী। এমনকি সে বাতাসে উড়ছে। তবুও তোমরা অবাক হবে না। তাকে অলি হিসাবে মানবে না। বরং দেখ, সে শরিয়তের অনুশাসন মেনে চলে কিনা। তার সীমারেখা হেফাজত করে কিনা। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি শরিয়ত এবং সুন্নতের অনুসরণ ছাড়া নিজেকে তরিকতপন্থি বলে দাবি করে সে আসলেই মিথ্যাবাদী। কারণ শরিয়তের অনুসরণ ছাড়া তরিকত হাসিল করা যায় না। দীর্ঘ চল্লিশ বছর কঠোর সাধনায় আমি আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য শরিয়তের ইলম ও তদানুযায়ী আমলের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই পাইনি।
৮৭৪ সালে হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) মারা যান। তার কবর রয়েছে ইরানের বোস্তাম শহরেই। সুফিপ্রেমীদের ভক্তির কারণে পৃথিবীর অনেক জায়গায় তার মাজার রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের নাসিরাবাদেও তার মাজার রয়েছে। তিনি কখনো বাংলাদেশে এসেছেন কি না এ নিয়েও নানা বিতর্ক আছে। এ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণও পাওয়া যায় না। হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) এখানে কোনোদিন আসুক বা না আসুক সেটি মূল বিষয় নয়। বরং ইলমুল মারেফাত অর্জনে তিনি যে সঠিক রাস্তাটি দেখিয়েছেন সেটিই মানুষের জন্য অনুকরণীয়। যা মানুষের ভ্রান্ত চিন্তাধারার ওপর শরিয়তের প্রাধান্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
