Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

মা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত

Icon

হাসানুল বান্না অলি

প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পৃথিবীর সবচেয়ে মধুমাখা শব্দটির নাম হলো মা। এমন মধুর শব্দ পৃথিবীর কোনো অভিধানে আর দ্বিতীয়টি নেই। মা সংজ্ঞাহীন ছোট্ট একটি বর্ণ। সন্তানের জন্য এক অদ্ভুত তৃপ্তিদায়ক শব্দ। মা সমাজের স্তম্ভ। তিনি গর্ভধারিণী একজন মহীয়সী নারী। মা পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। সন্তানকে লালন-পালন ও যোগ্য করে গড়ে তোলার একমাত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী অভিভাবকের নাম হলো মা! চাওয়া-পাওয়া, ভোগের এই নশ্বর পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর তুলনা হয় না। পৃথিবীর একজন মানুষ আরেক মানুষকে ভালোবাসার যে কোনো একটা কারণ থাকে। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবে হলেও কোনো না কোনো প্রয়োজন এখানে লুকিয়ে থাকেই। কিন্তু মায়ের ভালোবাসা একদম নিখাদ ও লৌকিকতাবিহীন। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের এই যুগে এসেও মায়ের ভালোবাসার গভীরতা পরিমাপের জন্য কোনো যন্ত্র আজ পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানী আবিষ্কার করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে বলে মনে হচ্ছে না।

চীনের পৌরাণিক একটা গল্প আছে। গল্পটা এমন ‘এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, আমি তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে তুমি? সব পরীক্ষার জন্য আমি সদাসর্বদা প্রস্তুত। তখন প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো! প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল তার মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিণ্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাশ করতে! পথে হঠাৎ করে ছেলেটা আছড়ে পড়ল। হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের তাজা হৃৎপিণ্ডটা! ছেলেটি খুঁজে মায়ের হৃৎপিণ্ড হাতে নিল। তখনো ধক ধক করছে মায়ের হৃৎপিণ্ড। হাতে নিতেই তা বলে উঠল, ব্যথা পেলি খোকা?’

আল্লাহতায়ালা মাকে অনেক বেশি মর্যাদা দিয়েছেন। নবজাতক হজরত ঈসা (আ.)-এর মুখে রাব্বুল আলামিন ভাষা দিয়েছিলেন, হজরত ঈসা (আ.) বলেন, ‘আর আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমি যেন আমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করি (অনুগত ও বাধ্য থাকি); আমাকে করা হয়নি উদ্ধত অবাধ্য ও দুর্ভাগা হতভাগা।’ (সূরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৩০-৩২)। হাদিসে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। মা কত দামি হলে আল্লাহতায়ালা মায়ের সঙ্গে জান্নাতের সম্পর্ক জুড়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জান্নাতকে মায়ের পায়ের নিচে দিয়ে দিয়েছেন। বনি ইসরাইলের নবি হজরত মুসা (আ.)-এর প্রতিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ বলেন : ‘আর আমি বনি ইসরাইল থেকে এ অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদত করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত : ৮৩)। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয় বরং অন্যান্য সব ধর্মে মাকে বিশেষ মর্যাদায় ভূষণ করা হয়েছে। সুতরাং মায়ের মূল্য অনেক বেশি। পুরো পৃথিবী বিক্রি করে দিলেও মায়ের এক ফোঁটা দুধের দাম হবে না। মা তার পুরো জীবনটা অকাতরে বিলিয়ে দেন শুধু তার সন্তানের জন্য। দশ মাস দশদিন গর্ভে ধারণ। তারপর অসহ্য প্রসব যন্ত্রণাকে স্বাগত জানিয়ে সন্তানকে দুনিয়াতে আলো দেখান! আড়াই বছর বুকের দুধ পান করান। তারপর সব দুঃখ-কষ্টকে আড়াল করে সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করেন। আমার যা মনে হয়, যদি কোনো সন্তান নিজের পিঠের চামড়া দিয়ে মাকে জুতা বানিয়ে দেয় তবুও মায়ের এক ফোঁটা দুধের মূল্য পরিশোধ করা হবে না। ইসলাম ধর্মে মাকে অনেক বেশি মর্যাদায় ভূষিত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বিরক্তিসূচক কিছু বল না এবং তাদের ভর্ৎসনা কর না; তাদের সঙ্গে কথা বল সম্মানসূচক নম্রভাবে। (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)। হাদিসে রাসূল (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক. মা-বাবার দোয়া তার সন্তানের জন্য, দুই. মুসাফিরের দোয়া ও তিন. অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে। (সুনানে আবু দাউদ : ১৫৩৮)।

হাদিস জগতের সম্রাট ইমাম বুখারি (রহ.)-এর বাল্যকালেই তার পিতা মারা যান। তিনি তার মা-এর কোলেই লালন-পালন হতে লাগলেন। বাল্যকালে একবার অসুস্থ হয়ে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এ অবস্থায় তার মা তার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। কারণ তিনি সন্তানকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতেন। সন্তানের অসুস্থতা মায়ের জন্য কতটা বেদনাদায়ক তা কেবল একজন মা-ই অনুভব করতে পারেন। ছেলের অসুস্থতার জন্য তিনি রবের কাছে দোয়া করতে থাকেন। সন্তানের জন্য মায়ের দোয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। এক রাতে তিনি আল্লাহতায়ালার কাছে অনেক দোয়া করলেন, এর কিছুদিন পর তিনি স্বপ্নে হজরত ইবরাহিম (আ.)কে দেখলেন। তিনি বললেন, তোমার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান ইমাম বুখারি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন-সুবহানাল্লাহ। মায়ের দোয়াটা কত বেশি কার্যকর!

যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়। মা থাকলে না খেয়েও মনে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর সব জীবিত মায়েদের সুস্থ রাখুন এবং যারা পরলোকে চলে গেছেন তাদের সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উঁচু জায়গায় স্থান করে দিন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম