Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

আশুরার শিক্ষা ও তাৎপর্য

Icon

কুলসুম রশীদ

প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আশুরার শিক্ষা ও তাৎপর্য

আশুরা শব্দটি এসেছে আশরা আরবি শব্দ থেকে। যার অর্থ দশ। মহররম মাসের এ ১০ তারিখ পৃথিবীর ইতিহাসে একটি বিশেষ দিন। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার আগে দিনটিকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করা হতো।

রাসূল (সা.) মদিনায় হিজরত করেছিলেন শান্তির সঙ্গে ইসলাম প্রচারের জন্য। এবং সেখানেই তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা এনেছিলেন। তার ওফাতের পর সবার পরামর্শ অনুযায়ী যোগ্য প্রার্থী হিসাবে হজরত আবু বকর (রা.) এরপর একে একে বাকি খোলাফায়ে রাশেদীনদের খেলাফত।

হজরত আলী (রা.)-এর শাহাদতের পর তার বড় ছেলে হজরত হাসান (রা.) ইরাক প্রদেশে খলিফা নির্বাচিত হন। কিন্তু খিলাফত নিয়ে মুয়াবিয়া এবং হজরত হাসানের মধ্যে দ্বন্দ্বের আশঙ্কার মুখে এক সন্ধির মাধ্যমে হজরত হাসান নিজের খিলাফত পরিত্যাগ করেন।

সন্ধির অপর শর্ত ছিল মুয়াবিয়ার মৃত্যুর পর হজরত হাসানের ছোট ভাই ইমাম হোসাইন খলিফা নির্বাচিত হবেন। ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে মুয়াবিয়ার মৃত্যু হলে, তার পুত্র ইয়াজিদ নিজেই বলপূর্বক ক্ষমতা গ্রহণ করে। যদিও তৎকালীন মুসলিম উম্মাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের মতে ইসলামি সম্রাজ্যের শাসনকর্তা বা খলিফা হওয়ার কোনো ধরনের চারিত্রিক, নৈতিক, শিক্ষাগত যোগ্যতাই ইয়াজিদের ছিল না।

এ সংকটপূর্ণ পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে কুফাবাসীর উপর্যুপরি নিমন্ত্রণ ও আনুগত্যের আশ্বাসে ইমাম হোসাইন (রা.) মুসলমানদের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে সম্মত হন। ইমাম হোসাইন (রা.) ইয়াজিদের আনুগত্য ও বায়াতকে প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহের পথ বেছে নেন। ৭২ জন আহলে বায়াতদের নিয়ে মদিনা ছেড়ে মক্কায় আসেন। উদ্দেশ্য ছিল জনগণকে বোঝানো যে তিনি অন্যায়ের সঙ্গে হাত মেলাননি। ৩ সাবান থেকে একাধারে ৮ জিলহজ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নেন।

এর মধ্যে কুফাবাসীর কাছ থেকে প্রচুর চিঠি আসছিল তারা ইয়াজিদের জুলুমে অতিষ্ঠ এবং তিনি এলে তার হাতে বায়াত হয়ে ইসলামের পথে চলবে। ইমাম সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সাহায্য প্রার্থীদের সাহায্য করা জরুরি মনে করলেন। তবে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করলেন ভাই মুসলিমকে সেখানের খবর জানার জন্য পাঠালেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা মুসলিমকে দিয়ে মিথ্যা কথা লিখিয়ে তাকে শহিদ করে ফেলে। সন্তোষমূলক চিঠি পেয়ে ইমাম ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে কুফার উদ্দেশে রওনা হন ৮ জিলহজ। কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর প্রধান হুর পথ রোধ করে। যুদ্ধ করতে তিনি আসেননি, মক্কায় ফিরতে চান। কিন্তু কুফার গভর্নর ইবনে জেয়াদ তাতে রাজি না হয়ে ইয়াজিদের প্রতি বশ্যতা স্বীকার করার জন্য বাধ্য করে তুলল। ইমাম হোসাইন (রা.) জানালেন প্রাণের বিনিময়েও তা হবে না।

মহররমের ৮ তারিখে ফোরাত নদীর তীর ঘেরাও করে পানি বন্ধ করে রাখা হলো। হুর এ সংবাদটি তাকে আগেই লুকিয়ে স্থান ত্যাগের কথা বলেছিলেন কিন্তু শহিদ সম্রাট ইমাম হোসাইন কাপুরুষতার আশ্রয় নিতে রাজি হননি। ফলস্বরূপ হুর ১০ তারিখে নিজ বাহিনীসহ ইমাম বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেন।

আশুরার রাতে অর্থাৎ ৯ মহররমের সূর্যাস্তের পর নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, পরদিন কি হতে যাচ্ছে। সবাইকে একত্র করে জানালেন যে শত্রুপক্ষ তাকে হত্যা করতে চায়, তাই সবাইকে চলে যেতে বললেন, কিন্তু কেউ ইমাম হোসাইনকে ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি।

অতঃপর তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে অবর্ণনীয় ক্ষুৎপিপাসায় কাতর অবস্থায় সারা রাত নামাজ, তওবা, দোয়া ও কান্নায় কাটালেন এমনকি শাহাদতের আগ মুহূর্তে রক্তে রঞ্জিত অবস্থায় কারবালার প্রান্তরে শত্রু সৈন্যবেষ্টিত সংকটময় মুহূর্তেও তিনি জোহরের নামাজ আদায় করতে চেয়েছিলেন। বন্ধু, আত্মীয়, পরিবার-পরিজনদের একের পর এক শহিদ হতে দেখেও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ইমাম হোসাইন (রা.) ক্ষণিকের জন্যও বিচলিত হননি।

অটল দৃঢ়তার সঙ্গে একাকী শতসহস্র ইয়াজিদি বাহিনীর বিরুদ্ধে সিংহের মতো যুদ্ধ করে আনন্দচিত্তে জামে শাহাদতের পেয়ালা পান করেছিলেন ৬১ হিজরিতে।

ঐতিহাসিক নানা কারণে ৯ তারিখের দিবাগত রাতটি খুবই গুরত্বপূর্ণ। এবাদত বন্দেগির মধ্যে কাটিয়ে দেওয়া উত্তম। মহান রাব্বুল আলামিন জীবনের গুনাহ মাফ করে তওবা কবুল করেন। প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। ৯/১০ অথবা ১০/১১ তারিখে রোজার সওয়াব প্রচুর। অনেকে ১ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত রোজা রাখেন।

হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের ধারক ও বাহক। তিনি ছিলেন চরিত্র মাধুর্যে কুরআনের জীবন্ত নমুনা। যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় আদর্শ। চারটি বিষয়ের তালিম আমাদের জন্য রেখে গেছেন এবং নিজের জীবনে পালন করেছেন। ১, সত্য প্রতিষ্ঠা করা ২. নামাজকে জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রাখা ৩. ধৈর্য ধারণ এবং ৪. শত্রুকে ক্ষমা করা।

আশুরা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম