এতিমের পাশে দাঁড়ানো মুমিনের দায়িত্ব
শামসীর হারুনুর রশীদ
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এতিম সম্পর্কে ইসলাম শুধু নৈতিক নির্দেশনাই দেয়নি, বরং এতিমের প্রশাসনিক ও আইনি অধিকারের ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে।
সূরা বাকারার একটি আয়াতে বলা হয়েছে, লোকেরা আপনাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে; বলে দিন, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা করা উত্তম...(সূরা বাকারা : ২২০)। অর্থাৎ তাদের জন্য কল্যাণমূলক কিছু করতে চাইলে, তাদের ইসলাহ তথা সার্বিক দেখভালের সুব্যবস্থা করতে হবে। যারা এতিমের প্রতি অবিচার করে, আল্লাহতায়ালা তাদের ভর্ৎসনা করে বলেন, না, কখনো নয় বরং তোমরা এতিমকে সম্মান করো না (সূরা ফাজর : ১৭)।
মক্কার কুরাইশরা এতিমদের ওপর জুলুম-নির্যাতন করত। বাবা মারা গেলে চাচা এসে ভাতিজার সব সম্পদ আত্মসাৎ করত। আল্লাহতায়ালা তাদের এ মন্দ কাজ নিষিদ্ধ করে বলেন, এতিমদের তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং ভালোর সঙ্গে মন্দ বদল করবে না। তোমাদের সম্পদের সঙ্গে তাদের সম্পদ মিশিয়ে গ্রাস করবে না। নিশ্চয়ই এটা মহাপাপ (সূরা নিসা : ২)।
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, যারা এতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা তো তাদের পেটে আগুনই ঢোকায়। তারা অচিরেই জাহান্নামের লেলিহান আগুনে প্রবেশ করবে (সূরা নিসা : ১০)। এতিম শিশুর সুরক্ষা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এতিমকে ধমক দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে, তিনি কি আপনাকে এতিম অবস্থায় পাননি এবং আশ্রয় দেননি? ...তাই আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না (সূরা আয্-যুহা : ৬, ৯)।
সাহল ইবনু সাআদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এতিমের প্রতিপালনকারী ও আমি জান্নাতে এভাবে থাকব, এই বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙুল দিয়ে পাশাপাশি উঁচিয়ে দেখান এবং এ দুয়ে সামান্য ফাঁক রাখেন (সহিহ বোখারি : ৫৩০৪)।
এতিমের মর্যাদা প্রসঙ্গে মহানবি (সা.) বলেন, বিধবা, এতিম ও গরিবকে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদকারীর সমান অথবা তার মর্যাদা (নামাজের জন্য) সেই রাত্রি-জাগরণকারীর মতো, যে কখনো ক্লান্ত হয় না। অথবা তার মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো, যে কখনো ইফতার করে না (সহিহ মুসলিম : ৫২৯৫)। আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত মহানবি (সা.) বলেছেন, মুসলিমদের সেই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে, অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর তিনি তার আঙুল দিয়ে ইঙ্গিত করে বলেন, ইয়াতিমের প্রতিপালনকারী ও আমি জান্নাতে এমনই ঘনিষ্ঠভাবে থাকব (সুনানু ইবনু মাজাহ : ৩৬৭৯)।
এতিমদের প্রতিপালন, তাদের পুনর্বাসন ও সুরক্ষা ইত্যাদি হতে হবে নিঃস্বার্থ। আল্লাহতায়ালা বলেন, আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে এবং বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আমরা তোমাদের আহার্য দান করি। আমরা তোমাদের কাছ থেকে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয় (সূরা দাহর : ৮-৯)। এতিমদের প্রতিপালন প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আরও বলেন, আর যখন সম্পদ ভাগাভাগির সময় আসে তখন স্বজন, এতিম ও মিসকিনদের আল্লাহর ভালোবাসায় আহার দান করো। তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করো (সূরা নিসা : ৮)। রাসূল (সা.) বলেন, এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও এবং অভাবগ্রস্তকে আহার দাও (মুসনাদু আহমাদ : ৮৮৫১)। এতিমের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ ও সব ধরনের ক্ষতি থেকে তাদের রক্ষা করা এবং পরিণত হলে সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়া রাষ্ট্র ও সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব।
লেখক : শিক্ষক ও গবেষক
