ফিরে এসো দ্বীনের পথে
মুহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত
প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দ্বীনে ফেরার পথে যুবকদের প্রধান যে সমস্যা বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটি হলো নারীর ফিতনা। আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীতে অসংখ্য লোভনীয় বস্তু সৃষ্টি করেছেন; তার মধ্যে ‘নারী’ অন্যতম। বর্তমান যুবসমাজের অধিকাংশই দ্বীনের পথে ফিরছে না অবৈধ হারাম সম্পর্কে জড়ানোর অজুহাতে। সমাজের নানা ক্ষেত্রে যুবক-যুবতীদের অবাধ চলাফেরা, উঠাবসার মাধ্যমে এ ফিতনার শুরু। সৃষ্টিগতভাবে মানুষ এক সুন্দর চারিত্রিক অবয়ব দ্বারা গঠিত। কিন্তু এ ফিতনার কবলে আক্রান্ত হয়ে যুবকদের চারিত্রিক অধঃপতন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এতে তাদের পবিত্র আত্মার মরণ হয়। একটা লাশকে দেখতে যেভাবে কুৎসিত আর অপছন্দনীয় মনে হয়। কেউ প্রাণভরে দেখতে চায় না, কাছে যেতে চায় না; ঠিক যুবকদের অবৈধ নারী আসক্ত তাদেরও আত্মার মৃত্যু ঘটায়। আর আত্মার মরণ হলে চেহারার ওপর তার স্পষ্ট ছাপ থেকে যায়। যার দরুন সমাজে তাকে কেউই পছন্দ করে না। এ আলামত চিহ্নিত করার সহজ এক উপায় হলো মাতা-পিতা, ভাইবোন, গুরুজনদের সঙ্গে তার বদমেজাজ রূঢ় ভাষার ব্যবহার।
আমাদের সমাজব্যবস্থায় যুবক-যুবতীরা চিন্তা করে যৌবনকালে যদি প্রেম, ভালোবাসা, গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড একত্রে আড্ডা না দেওয়া হয়, তাহলে জীবনটাই যেন ব্যর্থ। অথচ বাস্তবতা হলো ভিন্ন। অবৈধ এমন প্রণয় সাময়িক কিছু সুখ দিলেও, পরক্ষণে জীবনটা করে তোলে তুষের অনলে দগ্ধ। তখন পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাও অপরাধ মনে হয়। আর এভাবেই আত্মহত্যা আত্মহননের দিকে জীবন গড়াতে থাকে। ধু-ধু মরুভূমির বিশাল বালিরাশির মধ্যে চিক চিক করা যে আলোটা পানির স্বপ্ন দেখায়, ঠিক সেই আলোটার কাছে পৌঁছালে মরীচিকা হয়ে যায়। এভাবেই একজন যুবতীর বাহ্যিক আর অভ্যন্তরীণ রূপটাও এক অভিন্ন মরীচিকা। দূর থেকে ভালোবাসার আশা দেখিয়ে, তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দিয়ে যায়। এমন উদাহরণ আর বাস্তব ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটে যায়। জীবনের সব স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে মোটেই কালবিলম্ব করে না জাস্ট ফ্রেন্ড ভাবা অবৈধ গার্ল ফ্রেন্ডটা।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহের আগে এমন প্রেম-ভালোবাসা, যুবক-যুবতীর বন্ধুত্ব সম্পর্ক সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ। জাহেলি যুগে নারী-পুরুষের এমন মেলামেশার বীভৎসতার পরিণতি কতটা ভয়াবহ আর দুশ্চিন্তার ছিল তা কুরআন, হাদিস আর ইতিহাস না পড়লে জানা অসম্ভব। রাসূল (সা.) আমাদের দুটি বিষয়ে ভয় করতে আদেশ করেছেন-তন্মধ্যে নারীর ফিতনা অন্যতম। তারপর তিনি বলেছেন, বনি ইসরাইলের প্রথম ফিতনা ছিল ‘নারীর ফিতনা’।
যুবকদের অনেকেই যদিও সালাত আদায় করে, সাওম পালন করে, দ্বীনের আরও অন্যান্য ভালো কাজগুলোও করে, পাশাপাশি এ হারাম সম্পর্কেও যুক্ত থাকে। তখন তাদের এ নামাজ, রোজা আর ইবাদতগুলো অন্তঃসারশূন্য হয়ে যায়। কেননা তাদের অন্তরে সর্বদা জল্পনা-কল্পনা ওই সুন্দরী যুবতীর দিকে। নামাজে দাঁড়ালে শয়তান তখন তার অন্তরের পর্দায় যুবতী মেয়েটার ছবি ফুটিয়ে তোলে। এতে নামাজের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। আর এভাবেই প্রতিটি ভালো কাজে এ খারাপ সম্পর্কের চিত্রটা বারবার চোখের সামনে প্রদর্শন হয়ে যায়। তখন ইবাদতে খুলুসিয়াত, নিয়তের পরিশুদ্ধতা, আল্লাহ ভীরুতা সবকিছুই চলে যায়। আর ইবাদত হয়ে যায় অ-কবুল যোগ্য বস্তু।
আল্লাহতায়ালা মানুষকে তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দুর্বল ও আকর্ষণ করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যেহেতু মানুষ সৃষ্টির কারিগর, সেহেতু তিনি ভালোভাবেই জানেন মানুষের জীবনের একটা সময় এ জৈবিক চাহিদা মেটানোর আকাঙ্ক্ষা তৈরি হবে। তাই তিনি সেই আকাঙ্ক্ষা নিবারণ করার জন্য রেখেছেন এক বৈধ পদ্ধতি। যার মাধ্যমে নারী-পুরুষ উভয়ের মেলামেশা হালাল হবে। আর তা হলো বিবাহ। কিন্তু বিপরীত দিকে শয়তান আবিষ্কার করে রেখেছে জেনার পদ্ধতি। যার দ্বারা যুবক-যুবতীর মেলামেশা হারাম হয়ে যায়। কথিত আছে, যে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে বিবাহ পদ্ধতি কঠিন। সে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে জেনা করাটা সহজতা লাভ করে। তখন যুবক-যুবতীরা বিবাহের মতো হালালকে দূরে ঠেলে দিয়ে জেনার মতো সহজ হারামকে গ্রহণ করে নিতে মোটেও কুণ্ঠাবোধ করে না। আজকের আধুনিক পৃথিবীর ভয়াল চিত্র এমনই।
তাই আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেশ করেছেন, ‘তোমরা জেনার কাছেও যেয়ো না’। নিশ্চয়ই জেনা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ’। এ আয়াতে কারিমায় জেনার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যেসব উপায় উপকরণ আছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। জেনা এমন এক নিন্দনীয় কাজ, যা করার বিষয়ে মহান আল্লাহতায়ালা নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে বরং নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তার নিকটবর্তী হওয়া থেকে। বিষয়টি কত সিরিয়াস ও যুক্তিগ্রাহ্য। আমাদের উচিত একটু উপলব্ধি করা।
এক্ষেত্রে প্রতিকার হিসাবে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্বারোপ করতে হবে। পর্দার বিধান মেনে চলা। সব ধরনের অবৈধ আলাপ-আলোচনা পরিহার করা। অনলাইন কিংবা অফলাইন সব জায়গায় আল্লাহর ভয় অন্তরে সদা জাগরুক রাখা। সামর্থ্যবান হলে দ্রুত বিবাহ করা। আর সামর্থ্যহীন হলে নবিজির নির্দেশ মতো রোজা পালন করা। এ ছাড়া অন্তরের ভেতর এ কথা বারবার স্মরণ রাখা, আমি তো একজন জান্নাতি যুবক হতে চাই। যেখানে মহান আল্লাহ আমাকে অসংখ্য অগণিত জান্নাতি রমণীর স্বামী বানাবেন। সুতরাং, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী সুখের কাছে আখেরাতের অনন্তকালের চিরস্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি যেন পরাজিত না হয়ে যায়, সে বিষয় ওয়াকিবহাল থাকা। মুত্তাকিদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানানো। অসৎ বন্ধু অসৎ কর্ম প্রত্যাখ্যান করা। সর্বশেষ মহান মালিকের কাছে নিয়ামতপূর্ণ যৌবনকালটা তার পথে কবুলের বেশি বেশি ফরিয়াদ জানানো। তাহলেই সম্ভব হবে একজন যুবকের দ্বীনের পথে ফিরে আসা।
