|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইসলামে হজের গুরুত্ব অপরিসীম। মহান আল্লাহপাকের পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহ এবং বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারতের সাধ প্রতিটি মুসলমানেরই হৃদয়ে জাগে, তবে আল্লাহপাক যেহেতু বান্দার অন্তর দেখেন তাই তিনি অন্তঃকরণের হজকেই গ্রহণ করেন।
যাদের অন্তর অপবিত্র তাদের সঙ্গে আল্লাহপাকের যেমন কোনো সম্পর্ক নেই তেমনি তারা কুরআনের শিক্ষার ওপর আমলের ক্ষেত্রেও থাকে উদাসীন। যেভাবে কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আসলে তাদের হৃদয় এ কুরআন থেকে উদাসীন। আর এছাড়া তাদের আরও অনেক মন্দ কর্ম রয়েছে, যা তারা করে চলেছে’ (সূরা আল মুমিনুন, আয়াত : ৬৩)।
অপরদিকে যারা মুমিন তাদের অন্তর থাকে পবিত্র আর এদের সম্পর্কেই আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন, ‘হে শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রভু প্রতিপালকের দিকে সন্তুষ্ট হয়ে এবং তার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আস। অতএব, তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্র্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর’ (সূরা আল ফজর, আয়াত : ২৭-৩০)।
মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির উচ্চতম পর্যায় হচ্ছে, সে তার প্রভুর ওপর পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট এবং তার প্রভুও তার ওপর পুরোপুরি সন্তুষ্ট। এমন অবস্থাকে বেহেশতি অবস্থা বলে, যে আত্মার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট সে আত্মাও তার রবের প্রেমে এমনভাবে বিলীন ও একীভূত হয়ে যায় যে, এমন অন্তর তখন আর আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই বোঝে না।
আসলে যারা আল্লাহপাকের মুমিন বান্দা তারা ইহকালেই তার কাছ থেকে ‘হে শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা’ এ আহ্বানের ডাক শুনতে পায়। সে এ জগতেই আল্লাহপাকের জান্নাতের প্রবেশাধিকার লাভ করে এবং তার অন্তর সবর্দা তার জিকিরে মশগুল থাকে। সে কথা বলবে ঠিকই কিন্তু তার কথার মধ্যে এমন পবিত্রকরণ শক্তি থাকে যা অন্য কারও মাঝে পাওয়া যায় না। তার কথা, কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য সবই তখন কেবল আল্লাহর জন্য হয়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাহেন তো এ বছর আমাদের দেশ থেকে প্রায় এক লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালন করবেন। আমাদের কামনা থাকবে তারা যেন হজের সঠিক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে এবং সুস্থতার সঙ্গে হজ সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসতে পারেন। হজের মাধ্যমে বিশ্ব মানবের মহামিলনের নিদর্শন প্রস্ফুটিত হয়। হজই বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম মানবতার মহামিলনের এক অনন্য ব্যবস্থা, যা আল্লাহতায়ালা প্রদত্ত একটি ব্যবস্থা আর কাবাকেন্দ্রিক এ ব্যবস্থা সর্বপ্রাচীন। মূলত আল্লাহপাকের সঙ্গে প্রেমময় এক গভীর সম্পর্ক সৃষ্টির নামই হজ।
ইতোমধ্যেই আল্লাহর ঘরের মেহমানদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। যারা হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য কয়েকজন হাজিদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে শেয়ার করছি। হজে যাওয়ার সময় অবশ্যই ভালো জামাকাপড় নেওয়ার চেষ্টা করবেন। জুতা, স্যান্ডেল, ব্রাশ, টুপি, হাতব্যাগ, বেল্ট যা না হলেই নয় তা সঙ্গে নেবেন। সুই-সুতা, সেফটি পিন, রেজার, কাঁচি, ঘড়ি, কলম, কাগজ, নোটবুক, মোবাইল, চার্জার, নেইল কাটার ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস লাগেজ এবং হ্যান্ডব্যাগে রাখবেন।
মনে রাখবেন, বোঝা যত ছোট রাখা যায় ততই ভালো। তবে হাজিদের প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিসই মক্কা ও মদিনা শরিফে পাওয়া যাবে, তবে দাম একটু বেশি পড়বে আর এগুলো ক্রয়ের জন্য অনেক সময়ও ব্যয় হবে। যেহেতু পবিত্র স্থানে যাচ্ছেন ইবাদতের জন্য তাই যত বেশি সম্ভব ইবাদত এবং দোয়ায় রত থেকে সময় অতিবাহিত করাই উত্তম।
যাওয়ার আগে সঙ্গী নির্বাচন করাও একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা কোনো অসুবিধা হলে সাধারণত সঙ্গের লোকেরাই অধিক সহযোগিতা করেন। এমনিতেও কমপক্ষে তিনজনের একটি ঘনিষ্ঠ দল থাকলে উত্তম হয়। কেননা ভিড়ে হারিয়ে গেলে অথবা পথ হারিয়ে ফেললে বা ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লে তিনজনের পারস্পরিক সহযোগিতায় অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। দল ছোট হোক বা বড় অবশ্যই একজনকে আমিরে কাফেলা নির্বাচন করবেন। অর্থাৎ দলের একজন নেতা থাকা অত্যন্ত জরুরি।
যাকে দলের নেতা নির্বাচন করা হবে তার আদেশ-নিষেধকে মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। সবাই যদি তার দলের আমিরের আনুগত্য করেন তাহলে দেখবেন সফর কতই না বরকতময় হয়। এছাড়া বিভিন্ন তথ্যাদি সংরক্ষণ করাও প্রয়োজন। যেমন পাসপোর্ট বা হজ পাসের ফটোকপি এবং প্রয়োজনীয় দেশি-বিদেশি টেলিফোন নম্বর দুটি পৃথক স্থানে রাখা উচিত। যারা চশমা ব্যবহার করেন তারা দুজোড়া চশমা সঙ্গে রাখুন। জরুরি ওষুধ যেমন হার্টব্যাধি, ডায়াবেটিস, প্রেসার ইত্যাদির ওষুধ দুটি ভিন্ন জায়গায় রাখা দরকার আর অবশ্যই হাতের কাছে রাখবেন যাতে সহজেই পাওয়া যায়। যারা পবিত্র হজব্রত পালন করতে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই পানি বেশি পান করবেন।
তবে মনে রাখবেন খাবার বেশি খাবেন না, যতটুকু খেলে চলে ততটুকুই খাবেন। কেননা হজের দিনগুলোতে আপনি যদি অধিক আহার করেন তাহলে আপনার ইবাদতে কষ্ট হবে। রোদের জন্য ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। তাই ছোট একটি ছাতা সঙ্গে নিয়ে গেলেই ভালো হয়। যদি কোনো কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে ভয় না পেয়ে হাজিদের জন্য যে চিকিৎসা ক্যাম্প রয়েছে সেখানে যাবেন। তারা আপনাকে ভালের চিকিৎসাসেবা দেবেন।
মহিলা হাজিদেরও হজব্রত পালন করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে যেসব মহিলারা হজে যাওয়ার নিয়ত করেছেন তারা একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখবেন, তা হলো নিজের ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কোথাও একা একা যাবেন না। এতে হয়তো আপনি রাস্তা ভুলে যেতে পারেন আর নিজ ক্যাম্পে ফেরত আসাটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। তাই কোথাও যেতে হলে যার সঙ্গে হজে যাচ্ছেন তাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং আপনার ক্যাম্পকে চিনে রাখার জন্য কোনো না কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।
আরেকটি বিষয়, বিশেষ যে দোয়াগুলো রয়েছে তা এখন থেকেই আমাদের মুখস্থ করে ফেলা উচিত। বিশেষ করে হজের তালবিয়া ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা’। আল্লাহপাক সব হাজিকে হজের সব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে হজ সম্পন্ন করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট
masumon83@yahoo.com
