Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান

Icon

মারিয়াম আক্তার

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান

ইসলাম মানবতার ধর্ম। নারী ও পুরুষ উভয়কে সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যায়, ইসলামপূর্ব যুগে নারীদের কোনো সম্মান, অধিকার বা সামাজিক অবস্থান ছিল না। নারী ছিল শুধু ভোগের বস্তু, উত্তরাধিকারেও ছিল তাদের অংশ, জীবন্ত কন্যাশিশুকে পুঁতে ফেলা ছিল প্রচলিত রীতি। সে অমানবিক যুগে ইসলামের আবির্ভাব নারী জাতির জন্য ছিল এক আলোকবর্তিকা। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে ইসলামের যে আলো ছড়িয়ে পড়ে, তা নারীর জীবনে নিয়ে আসে এক বিপ্লব। নারীকে দেওয়া হয় আত্মমর্যাদা, শিক্ষার অধিকার, সম্পদের অধিকার, নিরাপত্তা ও সম্মানের পূর্ণ নিশ্চয়তা। তাই বলা যায়, ইসলামই প্রথম নারী-অধিকার রক্ষাকারী ধর্ম।

কন্যাসন্তানের মর্যাদা

ইসলামপূর্ব সমাজে কন্যাশিশু জন্মকে অভিশাপ মনে করা হতো। আল্লাহতায়ালা সে বর্বরতা সম্পর্কে বলেন-

‘যখন তাদের কারও কাছে মেয়ে সন্তানের সংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায় এবং সে দুঃখে ক্লিষ্ট হয়...’ (সূরা নাহল : ৫৮)। ইসলাম এ ধারণার অবসান ঘটায়। রাসূল (সা.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি কন্যাসন্তানদের লালনপালন করে, তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে, কিয়ামতের দিন সে আমার সঙ্গে থাকবে’। (সহিহ মুসলিম)।

শিক্ষার অধিকার

নারী শিক্ষা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, ‘জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ’। (ইবনু মাজাহ)।

আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজে স্ত্রীদের শিক্ষা দিয়েছেন, সাহাবিয়াদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন, যাতে নারীরা দ্বীন শিখতে পারে। হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন ইসলামি জ্ঞানের অন্যতম প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিত্ব, যিনি শত শত হাদিস বর্ণনা করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে নারীরা শিক্ষিকা, মুফাসসিরা, মুহাদ্দিসা এবং দাঈ হিসাবে কাজ করেছেন।

অর্থনৈতিক অধিকার

ইসলাম নারীদের আর্থিক স্বাধীনতা ও সম্পদের মালিকানা স্বীকৃতি দিয়েছে। কন্যা, স্ত্রী, মা তিন অবস্থাতেই নারীরা উত্তরাধিকার পায়। ‘পুরুষের যেমন অধিকার আছে, নারীদেরও তেমনি অধিকার রয়েছে, শরয়ি অংশ অনুযায়ী’। (সূরা নিসা : ৭)। হজরত খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন সফল ব্যবসায়ী নারী, যার উপার্জনের মাধ্যমে ইসলামের শুরুতে বহু খরচ চালানো হয়।

সম্মান ও নিরাপত্তা

ইসলাম নারীর ঘরোয়া নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। স্ত্রী-পুরুষের সম্পর্ককে করেছে পারস্পরিক দয়া ও সহানুভূতির ভিত্তিতে। ‘আর তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবনযাপন কর; তোমরা যদি তাদের ঘৃণা কর, তাহলে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভুত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ। (সূরা নিসা : ১৯)।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম আচরণ করে’ (তিরমিযি)। স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার যেমন মোহর, ভরণ-পোষণ, আলাদা বাসস্থান, ভালো ব্যবহার প্রভৃতি ইসলামে সুস্পষ্টভাবে ইসলাম নির্ধারিত করে দিয়েছে।

আইনি ও সামাজিক অধিকার

ইসলাম নারীদের বিচারিক সাক্ষ্য, দাওয়াতি দায়িত্ব, সমাজ সংস্কারে অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়েছে। নারীরা সাহাবি যুগে চিকিৎসা, শিক্ষা ও যুদ্ধ ময়দানেও সক্রিয় ছিলেন। উম্মে সালামা (রা.), উম্মে আতিয়্যাহ (রা.), হাফসা বিনতে সিরীন (রহ.) প্রমুখ নারীরা বিভিন্ন সামাজিক ভূমিকা পালন করেছেন।

নারীর মর্যাদা ও মানবাধিকার

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান সে, যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে।’ (সূরা হুজরাত : ১৩)। এ আয়াতে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো জাতিগত বা লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য নয়, বরং তাকওয়া ও ন্যায়ের ভিত্তিতে মর্যাদা নির্ধারণ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআনে নারীর জন্ম, শিক্ষা, নিরাপত্তা, বিবাহ, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব, উত্তরাধিকার, সামাজিক ভূমিকা, এমনকি রাজনীতি ও ব্যবসায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিবাহ ও তালাক

ইসলামে বিবাহ একটি চুক্তি যা নারীর সম্মতি ছাড়া হয় না। জবরদস্তিমূলক বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম। ‘কোনো কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেওয়া যাবে না’। (সহিহ বুখারি)। তালাক দেওয়া যদিও পুরুষের হাতে থাকে, তবে ইসলাম নারীকেও ‘খুলা’ ও ‘তালাকের আবেদন’-এর সুযোগ দিয়েছে। নারীর সম্মান রক্ষার্থে বিবাহ-বিচ্ছেদের পরও নারীর ভরণ-পোষণের বিধান রয়েছে।

ইসলাম ও আধুনিক নারীবাদ

আধুনিক নারীবাদ যেখানে ‘পুরুষের সমান’ হতে নারীদের আহ্বান জানায়, ইসলাম সেখানে ‘নারীর মর্যাদা অনুযায়ী সম্মান ও দায়িত্ব’ নির্ধারণ করে। ইসলাম বলে, নারী পুরুষের অনুকরণ করবে না; বরং তারা একে অপরের পরিপূরক। ‘পুরুষরা নারীদের ওপর দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ তাদের এককে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’ সূরা নিসা : ৩৪)। এ ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানই নারীর প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করে।

ইসলাম নারীকে দিয়েছে পূর্ণ সম্মান ও অধিকার। নারী কেবল গৃহিণী নয়, তিনি মা, মুআল্লিমা, সমাজ সংস্কারক, অর্থনীতির অংশীদার এবং জান্নাতের পথপ্রদর্শক। আজ যখন নারীর অধিকারের নামে বিভ্রান্তি, বেপর্দা, অবাধ মেলামেশা আর চারিত্রিক অবক্ষয় চালু হয়েছে, তখন ইসলামি আদর্শই হতে পারে নারীর মুক্তির প্রকৃত পথ। ইসলামের দেওয়া নারীর সম্মান ও অধিকার সম্পর্কে জানা, মানা এবং সমাজে তা প্রতিষ্ঠা করা আমাদের সবার দয়িত্ব।

ইসলাম নারী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম