হজের সফর : দোয়া কবুলের অপূর্ব সুযোগ
আয়েশা তাসনিম রোজা
প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হজের জন্য ইহরামের নিয়ত করার মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় দোয়া কবুলের এক বিশেষ সুযোগ। পবিত্র মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর রহমত এবং মাগফিরাত লাভের জন্য দোয়া করা যায় এবং এখানে বিশেষ কিছু স্থান রয়েছে, যেখানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অনেক স্থানেই নবি-রাসূলদের দোয়া কবুল হওয়ার ঐতিহাসিক প্রমাণ রয়েছে, আর সেই স্থানগুলোতে দোয়া করার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। পবিত্র স্থানগুলোয় মনোযোগসহ এবং দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করার গুরুত্ব অনেক। এখানে আমরা কিছু প্রসিদ্ধ স্থান তুলে ধরছি, যেখানে দোয়া করার জন্য অধিকতর সুযোগ রয়েছে।
বাইতুল্লাহ (কাবা)
কাবা শরিফের দিকে প্রথম নজর পড়ার পর, যে দোয়া করা হবে, তা আল্লাহতায়ালা নিশ্চয়ই কবুল করবেন। এটি একটি বিশেষ বরকতের মুহূর্ত।
হারাম শরিফের সীমানা
হারাম শরিফের সীমানা যা বাইতুল্লাহ থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তৃত, এখানে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ সীমানার মধ্যে পবিত্র জায়গায় দোয়া করা উত্তম।
মসজিদুল হারাম
কাবাঘরের চারপাশে অবস্থিত মসজিদুল হারাম, যেখানে মুসলিমরা প্রতিদিন নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করেন, এখানে দোয়া কবুল হয় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।
হাতিমে কাবা
কাবাঘরের উত্তরের দিকে অবস্থিত হাতিম, যা এক সময় কাবাঘরের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এখানে দোয়া করা অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।
মিজাবে রহমত
কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য সোনালি পরনালার মাধ্যমে বয়ে যাওয়া পানি মিজাবে রহমত নামে পরিচিত, এবং এ স্থানে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে।
কাবাঘরের রোকনগুলো
কাবাঘরের চারটি কোণ রোকনে ইরাকি, রোকনে শামি, রোকনে ইয়ামানি এবং রোকনে হাজরে আসওয়াদ এসব স্থানে দোয়া কবুল হয়, বিশেষ করে তাওয়াফের সময়।
হাজরে আসওয়াদ
কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত হাজরে আসওয়াদ, যা জান্নাতের পাথর হিসাবে পরিচিত, এখানে দোয়া কবুল হওয়ার একটি বিশেষ স্থান। এ স্থান থেকে তাওয়াফ শুরু করার পর দোয়া করা উচিত।
মুলতাজিম
হাজরে আসওয়াদ ও কাবাঘরের দরজার মাঝের স্থান মুলতাজেম, যেখানে বুক এবং শরীর লাগিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।
বাবুল কাবা
কাবাঘরের দরজা থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করা, বিশেষ করে এখানে দোয়া কবুল হয় বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।
মুজদালিফা
মুজদালিফায় অবস্থান করা এবং এখানে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল হয় বলে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে।
আরাফাত ময়দান
এটি হজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যেখানে হজরত আদম ও হাওয়া আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল হয়েছিল। এখানে অবস্থান করা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাবালে রহমত
আরাফাত ময়দান থেকে কিছু দূরে অবস্থিত এ পাহাড়, যা দয়ার পাহাড় হিসাবে পরিচিত, এখানে আল্লাহতায়ালা দোয়া কবুল করেন বলে বর্ণিত।
রিয়াজুল জান্নাত
মসজিদে নববির বিশেষ একটি অংশ, যেখানে নামাজ পড়া সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে দোয়া করা হলে তা আল্লাহ কবুল করে নেন।
সাফা ও মারওয়া পাহাড়
হজ ও ওমরাহ পালনের সময় সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে সায়ী করা হয়। এখানে দোয়া করা একান্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে এ সময় আল্লাহর কাছে একান্তভাবে দোয়া প্রার্থনা করা উচিত।
মিনার জামরাতে পাথর নিক্ষেপ
মিনা প্রান্তরে জামরাতের কাছে পাথর নিক্ষেপের সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা বিশেষ বরকতপূর্ণ। এখানে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হজ বা ওমরাহ পালনের সময় পবিত্র মক্কা ও মদিনার বিশেষ স্থানে দোয়া করা এক ধরনের দারুণ সুযোগ, যেখানে আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন। সেগুলোর মধ্যে সাফা-মারওয়া, আরাফাত, মুজদালিফা, মিনা, মসজিদে নববি এবং কাবা শরিফের বিভিন্ন অংশ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সব সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে, বিনম্রচিত্তে দোয়া করা উচিত। এমনকি, হজ বা ওমরাহ শেষ হওয়ার পরও হাজিদের দোয়া কবুল হতে থাকে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে এ পবিত্র সফর থেকে সঠিকভাবে উপকৃত হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন।
