বেহেশতি যুবকদের নেতা হোসাইন (রা.)
সুহাইল আহমদ
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রাসূলে করিম (সা.) বলেন, ‘হাসান এবং হোসাইন বেহেশতে যুবকদের নেতা। (তিরমিজি)। অন্য বর্ণনায় এসেছে এরা দুজন আমার বংশ এবং আমার কন্যার সন্তান। হে আল্লাহ্! আমি তাদের ভালোবাসি, আপনিও তাদের ভালোবাসুন, আর তাদেরও ভালোবাসুন, যারা এদের দুজনকে ভালোবাসে।’ (তিরমিজি)। হজরত হোজাইফা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘হে হোজাইফা! এইমাত্র হজরত জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে সুসংবাদ দিয়ে গেলেন, হাসান-হোসাইন হবে বেহেশতে যুবকদের নেতা (আহমদ)।’
৮ জানুয়ারি ৬২৬ ইং হজরত হোসাইন (রা.) এ ধরাপৃষ্ঠে শুভাগমন করেন। তার জন্মের শুভ সংবাদে রাসূলে করিম (সা.) খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। তিনি নিজেই কানে আজান দেন এবং নবজাতকের নাম হোসাইন রাখেন।
হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর চেহারা ছিল খুবই আকর্ষণীয় ও সুন্দর। হুজুর (সা.)-এর পবিত্র চেহারা মুবারকের সঙ্গে তার চেহারার মিল ছিল। জন্মের সাত দিনের দিন নানা মুহাম্মাদ (সা.) একটি মেষ (কোনো কোনো বর্ণনায় দুটো) জবাই করে তার আকিকা দেন।
হজরত ই’য়ালা আল-‘আমিরি (রা.) বলেন, তিনি এক দিন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দেখলেন হজরত হোসাইন (রা.) কিছু ছেলের সঙ্গে খেলছেন। তিনি তাকে সঙ্গে নিতে চাইলেন। কিন্তু শিশু হোসাইন একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে ছোটাছুটি করতে থাকলেন। আল্লাহ নবিও যে পর্যন্ত তাকে কব্জা করতে না পারলেন, সে পর্যন্ত তার সঙ্গে ছোটাছুটি করতে থাকলেন। হাসান তার ছোট্ট একহাত নবীজির ঘাড় মুবারকের নিচে রাখলেন। আর নবীজি তার মুখের ওপর মুখ রেখে চুমু খেয়ে বললেন, ‘হোসাইন আমার থেকে আর আমি হোসাইন থেকে। যে হোসাইনকে ভালোবাসে, আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন। সে আমার দৌহিত্রের মধ্যে একজন। যে আমাকে ভালোবাসে, সে যেন হোসাইনকে ভালোবাসে (তারিখ বিন আসাকির)।’
হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু। তার দানশীলতা ছিল প্রশংসাযোগ্য। তিনি কারও অনুরোধ উপেক্ষা করতেন না। দরিদ্রতার ভয়ে দান করা থেকে তিনি বিরত থাকতেন না। এতে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কারণ তার নানাজান হজরত রাসূলে করিম (সা.) দয়ালু মানুষদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তার দানশীলতা ছিল বাতাসের প্রবাহের মতো।
হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ্! জীবনের প্রতিটি দুঃখ-দুর্দশায় আমি আপনার ওপরই নির্ভর করি। প্রতিটি বিপদেই আমি আপনার ওপর ভরসা করি। আমি যে অবস্থায়ই থাকি না কেন, সর্বাবস্থায়ই আপনি হচ্ছেন নির্ভরতার স্থল, আমার অর্জিত সব নিয়ামত আপনারই দান এবং আপনিই এসব কল্যাণের উৎস।’
হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ছিলেন অত্যন্ত সাহসী। দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। অকুতোভয় সৈনিক। জিহাদের ডাকে প্রয়োজনের মুহূর্তে সাড়া দিতে কখনো পিছপা হতেন না তিনি। হজরত সাঈদ বিন উমর (রা.)-এর বরাতে বলা হয়েছে-তিনি বলেন, একদা হজরত হাসান (রা.) হজরত হোসাইন (রা.)কে বলেন, ‘আমি যদি আপনার মতো দৃঢ় মনোবলের অধিকারী হতে পারতাম।’ আর হজরত হোসাইন (রা.) হজরত হাসান (রা.)কে বলেন, ‘আমি যদি আপনার মতো চমৎকার ভাষাশৈলীর অধিকারী হতে পারতাম!’ (সিয়ার আলম আন নুবালা)।
তাকে একবার হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-এর কাছে দূত হিসাবে পাঠানো হয়েছিল। তিনি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কনস্টান্টিনোপলে (ইস্তাম্বুল অভিযানের) যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে যুদ্ধে সেনাপতি ছিলেন ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়া। এতে হজরত হোসাইন (রা.)-এর মহত্ত্বই প্রকাশ পায়। পবিত্র নগরী যাতে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়, সে জন্যই তিনি মক্কা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। হজরত ইবনে যুবায়ের (রা.) তাকে বললেন, ‘আপনি কোথায় যাচ্ছেন? এমন লোকদের কাছে কী আপনি যাচ্ছেন, যারা আপনার পিতাকে হত্যা করেছে, ভাইয়ের বিরুদ্ধে দিয়েছে অপবাদ?’ তিনি জবাবে বললেন, ‘পবিত্র মক্কা নগরীতে রক্তপাত হওয়ার চেয়ে আমার মৃত্যু অধিক শ্রেয় (আল বিদায়া আন নিহায়ায় ইবনে কাসিরের বর্ণনা)।’
হজরত ইমাম হোসাইন বিন আলী (রা.) ৬১ হিজরির ১০ মহররম পবিত্র আশুরার দিনে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন।
লেখক : আলেম
